হত্যার পর ধর্ষণ!

নরসিংদীর শিবপুরে নিখোঁজের দুই দিন পর গত ৮ জুন সাবিনা আক্তার (২১) নামে এক তরুণীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সেই হত্যাকাণ্ডের রহস্যও উদঘাটন করেছে র‌্যাব। ধর্ষণে বাধা দেওয়ায় সাবিনাকে শ্বাসরোধে হত্যার পর তাকে ধর্ষণ করে কথিত প্রেমিক সাইফুল। মঙ্গলবার (১১ জুন) রাতে র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সাইফুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছে।

সাইফুল শিবপুর উপজেলার দুলালপুর খালপাড় গ্রামের মৃত হানিফ ফকিরের ছেলে। বুধবার দুপুরে নরসিংদী প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১১ অধিনায়ক লে. কর্নেল কাজী শামসের উদ্দিন জানান, নিখোঁজের দুই দিন পর গত ৮ জুন শিবপুর উপজেলার কাজীরচর গ্রামের একটি কলাক্ষেত থেকে একই উপজেলার মাছিমপুর মধ্যপাড়া গ্রামের মিলন মিয়ার মেয়ে সাবিনার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় মঙ্গলবার রাতে শিবপুরের কলেজ গেট এলাকা থেকে সাবিনার কথিত প্রেমিক দুই সন্তানের জনক সাইফুল ইসলামকে (২৮) গ্রেফতার করে র‌্যাব-১১ এর একটি বিশেষ গোয়েন্দা দল।

তিনি আরও জানান, র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে সাইফুল জানায়, প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্স হওয়ার পর দ্বিতীয় স্ত্রীর সংসারে পাঁচ বছর ও ১০ মাস বয়সী দুই সন্তান রয়েছে তার। প্রায় তিন মাস আগে শিবপুর উপজেলার ধানুয়ায় একটি মাজারে তার সঙ্গে পরিচয় হয় একই উপজেলার সাবিনা আক্তারের। এ সময় সাইফুল তার দ্বিতীয় স্ত্রী ও সন্তানের তথ্য গোপন করে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সাবিনার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। এই সূত্র ধরে সাবিনাকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যেতো সাইফুল। সে একাধিকবার সাবিনার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এরই মধ্যে তাদের প্রেমের সম্পর্ক জানতে পারে সাবিনার চাচাতো বোন। পরে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সাবিনাকে ধর্ষণের ফন্দি আঁটে সাইফুল।

পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ৬ জুন বিয়ের কথা বলে শিবপুরে সাবিনার সঙ্গে দেখা করে সাইফুল। এরপর একটি সিএনজি অটোরিকশায় পলাশ উপজেলার টানচলনা গ্রামে চাচাতো বোনের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয় তারা। পথে রাত ৯টার দিকে সিএনজি থেকে নামিয়ে কৌশলে সাবিনাকে একটি কলাক্ষেতে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে সাইফুল। এ সময় সাবিনা চিৎকার শুরু করলে সাইফুল তার শার্ট দিয়ে মুখ চেপে ধরে শ্বাসরোধে হত্যা করে। হত্যার পর সাবিনার মৃতদেহ ধর্ষণ করে বিবস্ত্র অবস্থায় ফেলে রেখে তার ফোন ও ভ্যানিটি ব্যাগ নিয়ে সাইফুল নিজ বাড়িতে চলে যায়। পরে মোবাইল ফোনটি বন্ধ করে বাড়ির টয়লেটে ও ভ্যানিটি ব্যাগটি বাড়ির পাশে একটি নর্দমায় ফেলে দিয়ে আত্মগোপনে চলে যায় সে।

১১ জুন রাত ১১টার দিকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিনের নেতৃত্বে র‌্যাব ১১-এর একটি বিশেষ গোয়েন্দা দল তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় সাইফুলকে আটক করলে সে হত্যা ও ধর্ষণের বিস্তারিত বিবরণ দেয়। আসামি সাইফুলের দেয়া তথ্যমতে তার বাড়ি থেকে সাবিনার ভ্যানিটি ব্যাগ, মোবাইল ফোন ও শ্বাসরোধে ব্যবহৃত শার্ট উদ্ধার করেছে র‌্যাব।