যশোর শহরের শংকরপুর কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনাল এলাকায় সানি হত্যাকান্ডের পর টার্মিনাল ও পার্শবর্তী এলাকায় আতংক বিরাজ করছে। সানি হত্যাকান্ড ও নয়নকে হত্যার উদ্দেশ্যে বোমা হামলার ঘটনায় কোতয়ালি থানায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দেয়া হয়েছে। তবে অভিযোগ দুটি এখনো পর্যন্ত মামলা হিসেবে রেকর্ড হয়নি। হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত অভিযোগে পুলিশ এখনো পর্যন্ত কাউকে আটক করতে পারেনি।
এলাকাবাসি সূত্রে জানা যায়, এলাকায় চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শংকরপুর এলাকার ফারুক মিয়ার ছেলে নয়ন হোসেন ও একই এলাকার মশিউর রহমানের ছেলে সানি হোসেনের সাথে দীর্ঘ দিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। দ’গ্রুপ প্রায় এলাকায় অস্ত্রে মহড়া দিয়ে শক্তি প্রদর্শন করতো। এদের কারণে এলাকাবাসী সব সময় ভীত সন্ত্রস্ত্র হয়ে থাকতো। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের ছত্রছায়ায় থাকার কারণে পুলিশও এদেরকে কিছু বলতো না। যশোর পৌরসভার নির্বাচনের পর থেকে সাত নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর গোলাম মোস্তফার ভাই গোলাম রসুল ডাবলু ওই এলাকার অবৈধ আয়ের উৎস গুলোর নিয়ন্ত্রন নেয়। মাদক ও অস্ত্র ব্যবসা করে একচেটিয়া। বাসটার্মিনাল থেকে প্রত্যেক দিন বিভিন্ন প্রকার চাঁদাবাজির টাকার দখল নিয়ে নেয়। বাবলাতলায় রেনু পোনা বিক্রির একটি মোটাঅংকের চাঁদা আসে তার পকেটে। এছাড়া সরকারি মুরগির খামার, সার গোডাউনেও একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ করতো। ভাই কাউন্সিলর হওয়ার সুবাদে ডাবলু ধরা কে সরা জ্ঞান মনে করতো। যাকে তাকে মারপিট, চাঁদাদাবিসহ নানা অপরাধ মূলক কর্মকান্ডের সাথে তিনি ও তার পোষ্য বাহিনী জড়িত থাকে। একই সাথে কাউন্সিল গোলাম মোস্তফার ছেলেও অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠে।
মাস ছয়েক আগে বিএনপি কর্মী মশিয়ারকে প্রকাশ্য তার স্ত্রীর সামনে কুপিয়ে হত্যা করে ডাবলুসহ তার বাহিনীর সদস্যরা। এই হত্যা মামলায় দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর আদালতে আত্ম সমাপর্ন করেন ডাবলু তার ভাইপো মিশ্র। এই সময়ে ওই অবৈধ আয়ের উৎস গুলোতে নজরদারি কম ছিল ডাবলু বাহিনীর। হিটার নয়নও নানা মামলায় জর্জরিত হয়ে দীঘদিন জেলে ছিলেন। সে কারণে তিনিও ওই অবৈধ আয়ের উৎসে ভাগ বসাতে পারেনি। সম্প্রতি নয়ন ওই উৎস গুলোতে ভাগ বসাতে তৎপর হয়। সে কারণে তাকে মেরে দেয়ার পরিকল্পনা করে তার প্রতিপক্ষ গ্রুপ। মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে নয়নের অবস্থান জেনে তাকে মারতে পাঠানো হয় সানি ও আনন্দকে। বোমা ছুড়ে মারার পর টার্মিনাল এলাকায় নয়নের লোকজনের হাতে আটক হয় সানি। সে সময় তাকে গণপিটুনি দিলে সানি মারা যায়। আহত হয় আনন্দ।
পুলিশ দুজনকে উদ্ধার করে ২৫০ শয্যার যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ৯ টার দিকে সানি মারা যায়। এঘটনায় বুধবার বার (১৯ জুন) নিহত সানির বোন সম্পা ৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত নামা ৪/৫ জনের নামে থানায় অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযুক্ত হচ্ছে শংকরপুর এলাকার ফারুক মিয়ার ছেলে নয়ন হোসেন, দুলালের ছেলে শোভন, তকব্বারের ছেলে মতিন ওরফে সিআইডি মতিন, ওয়াজেদ আলীর ছেলে হাফিজ, শাজাহান মিস্ত্রির ছেলে শান্ত, আলমগীর শেখের ছেলে ভুট্টো, মিন্টুর ছেলে টুটুল, ও বেজপাড়া কবরস্থান রোডের জামাল হোসেনের সুমন ওরফে ভুষি সুমন।
বোমায় আহত নয়নের স্ত্রী মিতুও ৭ জনের নামে একই দিন থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। তবে দুটি অভিযোগের কোনটিই মামলা হিসেবে কোতয়ালি থানায় এরিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রেকর্ড হয়নি।
কোতয়ালি থানার ওসি অপূর্ব হাসান জানান, কোতয়ালি থানায় পাল্টাপাল্টি দুটি অভিযোগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু দুটি অভিযোগের কোনটিই এখনো পর্যন্ত মামলা হিসেবে রেকর্ড হয়নি।