বাঘারপাড়ার খাজুরা টিপিএম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দুর্নীতির আখড়া

jessore map

যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার খাজুরা টিপিএম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি অনিয়ম দুর্নীতির আখড়া। সরকারি নিয়মনীতি উপেক্ষা করে ভর্তি ও কোচিং বাণিজ্যসহ নানা অনিয়ম দুর্নীতি চলছে এ প্রতিষ্ঠানে। ফলে অভিভাবক মহল উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।

সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হতে কোনো টাকা পয়সা লাগেনা। অথচ এ প্রতিষ্ঠানটিতে ভর্তি হতে ফরম বাবদ ১০/২০ টাকা এবং ভর্তি ফি বাবদ ১০০/২০০ টাকা নেওয়া হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ছাত্র/ছাত্রীর অভিভাবক এঅভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেছেন। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হতে টাকা লেগেছে এমন তিনজন ছাত্র/ছাত্রী হচ্ছে, খাজুরা বাজার এলাকার প্রদীপ রায়ের মেয়ে ঐশিকা রায় পৃথা (প্রথম শ্রেণী), একই এলাকার লিন্টু রায়ের মেয়ে তনা রায় (দ্বিতীয় শ্রেণী) ও একই এলাকার রাসেলের ছেলে চাঁদ (দ্বিতীয় শ্রেণী)। এছাড়া এ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোচিং ও গাইড বাণিজ্য এখন ওপেন সিক্রেট। সরকারি স্কুলগুলোতে সম্পূর্ণরুপে কোচিং করানো এবং গাইড বই ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকলেও এপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক সংসদ, গ্লোবাল ও দিগন্ত নামে তিনটি বই কোম্পানীর কাছ থেকে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে প্রত্যেক ছাত্র/ছাত্রীকে এসব কোম্পানীর গাইড বই কিনতে বাধ্য করেন। ঐ স্কুলের ছাত্র/ছাত্রী ও অভিভাবকদের সাথে আলাপকালে এসব অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, স্কুলের মধ্যেই ৩০০/৪০০ টাকা হারে মাসিক বেতন নিয়ে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র/ছাত্রীদের কোচিং করানো হয়। বিনামূল্যে ডায়েরি বই দেয়ার নিয়ম থাকলেও প্রতি ছাত্র/ছাত্রীর কাছ থেকে বাধ্যতামূলক ৩০/৫০ টাকা নিয়ে ডায়েরি বিতরণ করা হয়।

স্থানীয় ফ্লাওয়ার গার্ডেনে লেখাপড়া করে এমন ছাত্র/ছাত্রীদেরকেও টিপিএম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বেআইনীভাবে উপবৃত্তির টাকা দেয়া হয়েছে। এরা হচ্ছে, ফ্লাওয়ার গার্ডেনের প্রথম শ্রেণীর ছাত্রী মেহেজাবিন ও কাজী সানজিদা রেজা ইলমা। এছাড়া চারু-কারু পরীক্ষার ফি বাবদ ও রুটিনের ফটোকপি নিতেও সরকারি এপ্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র/ছাত্রীদের টাকা দিতে হয়। অর্থাৎ টাকা ছাড়া এপ্রতিষ্ঠানে কোনো কাজ হয় না। ক্লাস ফাঁকিতেও প্রধান শিক্ষক দশরথ কুমার বিশ্বাস ও সহকারী শিক্ষক আজিজুর রহমানের কোনো জুড়ি নেই। বিদ্যালয় চলাকালিন এ দুই শিক্ষক রুটিন ক্লাস বাদ দিয়ে প্রায় সময় তাঁরা ব্যক্তিগত কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। কোনো কোনো সময় তাঁরা ক্লাস ফাঁকি দিয়ে বাজারের চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দেন। সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক দশরথ কুমার বিশ্বাস, সহকারি শিক্ষক আজিজুর রহমান ও সহকারি শিক্ষক বিনোদ কুমার মৃধা দীর্ঘদিন ধরে এসব দুর্নীতি ও অনিয়মের সাথে জড়িত থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখনও পর্যন্ত তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় অভিভাবক মহল উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। তদন্ত হলে এসব অভিযোগের সত্যতা মেলবে।

এব্যাপারে খাজুরা টিপিএম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দশরথ কুমার বিশ্বাসের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ছাত্র/ছাত্রী ভর্তি হতে ১০/২০ টাকা এবং গত বছর কোচিং করাতে ছাত্র/ছাত্রী প্রতি ৩০০/৪০০ টাকা নেয়া হয়। এবছর কোচিং বাবদ কোনো টাকা পয়সা নেয়া হচ্ছে না। এছাড়া ব্যস্ততার কারণ দেখিয়ে তিনি কৌশলে অন্যান্য প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যান।