এমএসটিপি স্কুল এন্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে লাখ লাখ টাকা আত্বস্বাতের অভিযোগ

যশোর তারাপ্রসন্ন মধুসূদন (এমএসটিপি) স্কুল এন্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তিনি প্রতিষ্ঠানে গেট ও মোটরসাইকেল গ্যারেজের জন্য ১২ লাখ টাকা বরাদ্দের পুরোটাই হজম করে ফেলেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া খন্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগে বাণিজ্য, নোট-গাইড কোম্পানির কাছ থেকে মোটা অংকের উৎকোচ গ্রহণ, ভূয়া বিল ভাউচার তৈরী করে প্রতিষ্ঠানের ফান্ডের টাকা আত্মসাতসহ একক অধিপত্য বিস্তার করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। স্থানীয় এমপি’র আস্থাভাজান ও প্রতিষ্ঠানে অবৈধ ছাত্রী প্রতিনিধি মিজানুর রহমান অধ্যক্ষের সব অনৈতিক কর্মকান্ড ধামাচাপা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে তার কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে প্রতষ্ঠানের অন্যান্য শিক্ষক- শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

একাধিক নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা গেছে, যশোর তারাপ্রসন্ন মধুসূদন (এমএসটিপি) স্কুল এন্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ খায়রুল আনামের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠানে সামনে ভিআইপি গেট নির্মাণ ও মোটরসাইকেল গ্যারেজ করার জন্য মোট ১২ লাখ টাকা বরাদ্দ পান। কিন্তু আজ তা নির্মাণ করা হয়নি। বরাদ্দকৃত ১২ লাখ টাকার কোন হদিস নেই। বর্তমানে শিক্ষক নিয়োগ সম্পূর্ণ এনটিআরসিএ’এর হাতে। কিন্তু অধ্যক্ষ অবৈধভাবে খন্ডকালীন ২৫ জন শিক্ষক নিযোগ দিয়েছেন। খন্ডকালীন শিক্ষকদের মধ্যে বর্তমানে কর্মরত আছেন নুরুন নাহার, সুমী খাতুন, ফারজানা, সাদিয়া, আসমানী, বীথি, গৌতম কুমার রায়, নাজমুন, শিমুল মন্ডল, গৌতম কুমার, জিল্লুর রহমান, আকলিমা আখি, নিলীমা প্রমুখ।

খন্ডকালীন এসব শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে প্রধান শিক্ষক প্রায় ৫০ লাখ টাকা বাণিজ্য করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানে অহেতুক শাখা খুলে এ নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন। যোগ্য শিক্ষক থাকার সত্বেও খন্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে প্রতিষ্ঠানে পাঠ্যদান করানো হচ্ছে। এতে শিক্ষার মান চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

সুত্র বলছে, অধ্যক্ষের সকল অনিয়মে সহযোগিতা করছেন সহকারী প্রধান শিক্ষক মাহমুদা খাতুন ও অবৈধ ছাত্রী অভিভাবক প্রতিনিধি মিজানুর রহমান। স্থানীয় এমপি’র অত্যান্ত আস্থাভাজন হিসাবে পরিচিত মিজানুর রহমান। পদাধিকার বলে এমপি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি। তিনি প্রতিষ্ঠানের দেখভাল করার সময় পান না। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে মিজানুর রহমান অধ্যক্ষের সাথে যোগসাজস করে নানা অপকর্মের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানে অর্থ লুটপাট করে চলেছেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে মিজানুর রহমান প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীর অভিভাবক সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু তার কোন মেয়ে প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করে না। বিষয়টি জানতে পেরে প্রতিষ্ঠানের সাবেক অভিভাবক সদস্য মোল্লা জাহিদ হোসেন মামলা করেন। পরে শিক্ষাবোর্ড থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করে বিয়ষটির সত্যতা পায়। একইভাবে তার অপর সহযোগি সহকারী প্রধান শিক্ষক চায়না বেগমকেও আহবায়ক কমিটির শিক্ষক প্রতিনিধি বানিয়েছেন অধ্যক্ষ। অথচ নিয়ম অনুযায়ী প্রশাসনের দুজন ব্যক্তি কমিটিতে থাকতে পারে না। সকল অপকর্ম ঢাকতে এভাবেই ইচ্ছামত ম্যানেজিং কমিটি গঠন করেন অধ্যক্ষ খায়রুল আনাম।

সুত্র বলছে, অধ্যক্ষ প্রতিষ্ঠানের ডোনেশনের কথা বলে বিগত কয়েক বছর হাসানবুক ডিপো ও জুপিটার এবং এ্যাডভান্স বই কোম্পানির কাছ মোট ২৫ লাখ টাকা নিয়েছেন। এ বছরও তিনি হাসানবুক ডিপোর কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা নিয়েছেন। যার কোন টাকাই তিনি প্রতিষ্ঠানে দেননি। অধ্যক্ষ এসব নিম্নমানের নোট-গাইড কিনতে শিক্ষক ও ছাত্রীদের বাধ্য করাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

সুত্র বলছে, প্রতিষ্ঠান ফান্ডের টাকা অধ্যক্ষ ও মিজানুর রহমান আলাদা ব্যাংকে নিজেদের নামে টাকা জমা রেখেছেন। আর এ টাকার মধ্যমে লোন নিয়ে ব্যবসা করছেন। এভাবেই প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি কাজেই তিনি অনিময় করেন। তার কাজের কোন স্বচ্ছতা নেই। প্রতিষ্ঠানে স্কুল, কলেজ, উন্মুক্ত ও ক্লাব হাউস পরিচালনা করার জন্য কোন কমিটি নেই। সবকিছু অধ্যক্ষ নিজে পরিচালনা করেন। অধ্যক্ষ বছর শেষে জেএসসি ও এসএসসি’র অনেক ছাত্রীকে শিক্ষককে না জানিয়ে টিসি প্রদান করেন। তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হয়। সিনিয়র শিক্ষকরা অধক্ষের এসব অন্যায় ও অবৈধ কাজের প্রতিবাদ করলে তিনি ইনক্রিমেন্ট বন্ধ ও সাসপেন্ড করার হুমকি দেন। অধ্যক্ষ তার এসব অবৈধ কাজের সহযোগি হিসেবে রাখতে প্রতিবারই মিজানুর রহমানকে ম্যানেজিং কমিটিতে দাতা সদস্য হিসেবে রাখেন বলে অভিযোগ করেছে একাধিক শিক্ষক।

এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানের সাবেক অভিভাবক সদস্য মোল্যা জাহিদ হোসেন বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ খায়রুল আনামের একক অধিপত্য বিস্তারের জন্য ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। অবৈধভাবে মিজানুর রহমানকে প্রতিষ্ঠানের অভিভাবক সদস্য নির্বাচিত করেছেন অধ্যক্ষ। আর এই মিজানুর রহমান এমপি’ মহোদয়ের নাম ভাঙ্গিয়ে খবরদারি করেন। ফলে অধ্যক্ষের অপকর্মের কোন শাস্তি হচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে অল্প সময়ের মধ্যে তার দীর্ঘদিনের ভাবমূর্তি ও সুনাম হারিয়ে যাবে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিষ্ঠানের এক জন শিক্ষক বলেন, ‘ক্ষমতার অপব্যবহার করে অধ্যক্ষ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষকদের এক প্রকার জিম্মি করে ফেলেছেন। ইচ্ছেমত যাবতীয় কাজ সম্পাদন করেন। কোন শিক্ষক প্রতিবাদ করলে তার উপর বিভিন্নভাবে নির্যাতন করেন।’

অভিযোগের ব্যাপারে যশোর তারাপ্রসন্ন মধুসূদন (এমএসটিপি) স্কুল এন্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ খায়রুল আনামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এসব অভিযোগের কোন সত্যতা নেই।’