প্রতি ঘণ্টায় হাসপাতালে পাঁচ ডেঙ্গু রোগী

রাজধানীতে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ বেড়েই চলেছে। গত ১ জুলাই থেকে ৬ জুলাই পর্যন্ত মাত্র ছয় দিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল এবং ক্লিনিকে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ৭৪৬ জন অর্থাৎ বর্তমানে গড়ে প্রতি ঘণ্টায় পাঁচজনের বেশি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।

চলতি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় নিগার নাহিদ দিপু (৪২) নামে এক চিকিৎসকের মৃত্যু হয়। মাত্র দু’দিনের জ্বরে একজন চিকিৎসকের মৃত্যুর ঘটনায় ডেঙ্গু নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৬ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা সর্বমোট ২ হাজার ৬৬৪ জন। এরমধ্যে জানুয়ারিতে ৩৮ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৮, মার্চে ১৭, এপ্রিলে ৫৮, মে মাসে ১৯৩, জুন ১ হাজার ৭২১ এবং সর্বশেষ ৬ জুলাই পর্যন্ত ৭৪৬ জন আক্রান্ত হন। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে এপ্রিলে দু’জন ও জুলাই মাসে একজনসহ মোট তিনজনের মৃত্যু হয়।

গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীতে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১০৮ জন। মোট আক্রান্ত রোগীর মধ্যে বর্তমানে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা ৩৬০ জন।

তবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। চলতি বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব আরও বাড়তে পারে- এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে জ্বর আক্রান্ত রোগীদের দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

এদিকে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে ডেঙ্গু মশা নিয়ন্ত্রণে ওষুধ ছিটানোর পাশাপাশি ডেঙ্গু মশার প্রজনন স্থল বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় মাইকিং করে এবং এলাকায় মসজিদে জুমার নামাজে ইমামদের মাধ্যমে এডিস মশার কবল থেকে বাঁচতে প্রয়োজনীয় কার্যক্রমের ব্যাপারে অবহিত করার কর্মসূচি চলছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক সানিয়া তাহমিনা বলেন, ‘ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ থেকে বাঁচতে হলে ডেঙ্গু মশার প্রজনন স্থল ধ্বংস করতে হবে। এ ব্যাপারে সাধারণ মানুষকে অধিক সচেতন হতে হবে।’

তিনি জানান, স্বাস্থ্য অধিদফতর বর্ষা মৌসুমের আগে গত মার্চ মাসে রাজধানীর ১০০টি ওয়ার্ডে মশক জরিপ পরিচালনা করে। সেখানে দেখা গেছে, নির্মাণাধীন ভবনের বিভিন্ন ফ্লোরে জমে থাকা পানি, পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বালতি, অব্যবহৃত টায়ার, প্লাস্টিক ড্রাম, পানির ট্যাংক, পানির মিটারের গর্ত, চিত্রাঙ্কনের জন্য ব্যবহৃত পাত্র এডিস মশার উৎকৃষ্ট প্রজনন স্থল। বেখেয়ালে এ সব পাত্রে জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে এডিস মশা বংশ বিস্তার করে। নগরবাসীর যদি নিজ বাড়ি ও বাসার সামনে এ ধরনের পাত্রে পানি জমতে না দেয় তবে এডিস মশার বংশ বিস্তার রোধ হবে।