তিন বছরের কমিটি দিয়ে ১৬ বছর চলছে যশোর জেলা যুবলীগ

jubo lig jessore map

তিন বছরের জন্য গঠিত যশোর জেলা যুবলীগের কমিটি ১৬ বছর পার করেছে। কমিটির অধিকাংশ সদস্যই এখন নিস্ক্রিয়। দীর্ঘদিনেও কমিটি না হওয়ায় পদপ্রত্যাশী ও সাধারণ নেতা-কর্মীদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। নেতৃত্বেও চলছে চরম সংকট। বর্তমান কমিটি অযোগ্যতার পরিচয় দেওয়ায় কোতয়ালি, বাঘারপাড়া, অভয়নগর উপজেলা ও যশোর শহর আহবায়ক কমিটি করে দেয় কেন্দ্রীয় যুবলীগ। আড়াই বর ধরে চলছে আহবায়ক কমিটি।

গত কয়েক বছর ধরে জেলা যুবলীগের সম্মেলন ও কমিটি হবে। কিন্তু তারপরও হচ্ছে না। এতে করে দিন দিন নেতাকর্মীরা হতাশ হয়ে পড়ছে। অনেকেই রাজনীতি থেকে বিমুখ হয়ে পড়েছে। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, ইতিমধ্যে জেলা ছাত্রলীগের ২ থেকে তিনটি কমিটি হয়েছে। যারা ছাত্রলীগ করেছে তারা এখন যুবলীগ করবে। ফলে নতুনদের জায়গা দিতে পুরাতনদের সরে যেতে হবে। যে কারণে আর রাজনীতি করার পরিবেশ নেই।
দীর্ঘ দিন পর খুব দ্রুতই জেলা যুবলীগের আহবায়ক কমিটি গঠিত হতে যাচ্ছে। এ খবর শোনার পর নেতাকর্মীদের মাঝে উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। কিন্তু কবে হবে সেই প্রশ্ন নেতাকর্মীদের। বলা হচ্ছে, জেলা যুবলীগের আহবায়ক কমিটি গঠন হবে। এতে আহবায়ক হিসেবে বেশ কয়েকজন নেতার নামও শোনা যাচ্ছে।

নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সর্বশেষ ২০০৩ সালের ১৯ জুলাই জেলা যুবলীগের সম্মেলন হয়। এতে মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরীকে সভাপতি ও জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টুকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা যুবলীগের নতুন কমিটি গঠন করা হয়। ৫৩ সদস্যবিশিষ্ট এই কমিটির মেয়াদ ছিল তিন বছর। সে হিসেবে ২০০৬ সালে কমিটির মেয়াদ শেষ হয়। কমিটির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু ২০১৫ সালের পৌর নির্বাচনে যশোর পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য।
ইতিমধ্যে এ কমিটির চার সদস্য মারা গেছেন। তাঁরা হলেন সহ-সভাপতি আশরাফ হোসেন, নির্বাহী সদস্য জয়ন্ত বিশ্বাস, তরুণ অধিকারী ও সোহেল রানা। অপর এক সদস্য দীর্ঘদিন নিখোঁজ রয়েছেন। কয়েকজন বিদেশে চলে গেছেন। এর বাইরে অনেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছেন।

নেতাকর্মীরা বলছেন, পদ চলে যেতে পারে, এমন শঙ্কায় এত দিন যুবলীগের সম্মেলন দেওয়া হয়নি। যে কারণে তারা দীর্ঘ ১৬ বছর পদ আঁকড়ে বসে আছেন। করতে পারেননি কোন উপজেলা কমিটি।

অভিযোগ রয়েছে, যুবলীগে যাঁরা দায়িত্বে রয়েছেন, তাঁরা আওয়ামী লীগের মূল কমিটিতে ভালো পদ পাননি বলেই সম্মেলন দিতে নয়-ছয় করছেন। ১৬ বছরেও জেলা যুবলীগের সম্মেলন কেন হলো না, এই প্রশ্নের কোনো সদুত্তর নেই যুবলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ ওই কমিটির নেতাদের কাছে।

তবে এ বক্তব্য মানতে নারাজ জেলা যুবলীগের সভাপতি মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী। তিনি বলেন, এটা পদ ধরে রাখার বিষয় নয়।
তবে তিনি একটু ব্যস্ত আছেন বলে ফোন রেখে দেন। পরে জানাবেন বলে জানান কিন্তু দুই দিন পর তাকে আবার ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।

দলের নেতাকর্মীরা জানায়, খুব শিঘ্রি যশোর জেলা যুবলীগের আহবায়ক কমিটি গঠন করা হবে। এজন্য বেশ কয়েকজন আহবায়ক হওয়ার জন্য তদ্বির চালাচ্ছেন। এরমধ্যে রয়েছেন, বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু, জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি সৈয়দ মুনির হোসেন টগর, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আরিফুল ইসলাম রিয়াদ, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম জুয়েল ও যুবলীগ নেতা মঈনুদ্দিন মিঠু।

যুবলীগের রাজনীতিতে আসতে আগ্রাহী যশোর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আরিফুল ইসলাম রিয়াদ বলেন, ছাত্র রাজনীতির বয়স শেষ হয়েছে। আমার কমিটির পর আরও একটি ছাত্রলীগের কমিটি হয়েছিল। সেটাও শেষ হয়েছে। আমার নেতৃত্বে জেলা ছাত্রলীগের গতিশীল রাজনীতি যশোরের মানুষ দেখেছে। আমাকে যুবলীগের রাজনীতিতে দায়িত্ব দেওয়া হলে আমি আমার সাধ্যমত সংগঠনকে গতিশীল করবো।

তিনি বলেন, এখন যুবলীগ করার বয়স। এখন যদি যুবলীগ না করি তাহলে ভবিষ্যতে রাজনীতি করতে মানুষ আগ্রহী হবে না।

তিনি আরও বলেন, আমার আগে যারা ছাত্রলীগ করেছে তাদের অনেকেই যুবলীগ করতে চায়। তাদেরকেউ সুযোগ দেওয়া উচিত।

কথা হয় জেলা যুবলীগের বর্তমান কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি সৈয়দ মুনির হোসেন টগর এর সাথে।
তিনি বলেন, জেলা যুবলীগের সম্মেলনের জন্য আমরা দীর্ঘদিন কেন্দ্রকে জানিয়ে আসছি। কিন্তু কোন সম্মেলন হচ্ছে না। আমি চাই, নেতৃত্বে তৈরি হোক সম্মেলনের মাধ্যমে। যার যোগ্যতা আছে তিনি নেতা হবেন। নিয়মিত সম্মেলন না হওয়ায় নেতৃত্বেও এক ধরনের সংকট দেখা দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।