মণিরামপুরে পাট জাগ দিতে পুকুর ভাড়া!

যশোরের মণিরামপুর উপজেলার জলকর রোহিতা গ্রামের চাষি জয়নাল আবেদিন। পাট চাষ করেন অনেক আগে থেকে। এবারও দুই বিঘা জমিতে পাট লাগিয়েছেন তিনি। পাট চাষ করাই যেন বিপত্তি হল তার। ফলন মোটামুটি হলেও পাট কেটে পঁচানো নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তিনি। ভরা মৌসুমে বর্ষা না থাকায় পুকুর-নালা পানি শূণ্য। বাড়ির পাশের একটি মাছ চাষের পুকুরে বিঘা প্রতি ৬০০ টাকা করে ১২০০ টাকা ভাড়ায় তিনি পাট জাগ দিয়েছেন।

জয়নাল আবেদিনের পাশের বাড়ির প্রান্তিক চাষি আব্দুল লতিফ। তিনিও পাট চাষ করেছেন ১০ কাটা জমিতে। অন্যবার বাড়ির পাশের ডোবায় পাট জাগ দিলেও এবার পারেননি। বাধ্য হয়েছেন ৩০০ টাকা ভাড়া দিয়ে মাছের ঘেরে পাট জাগ দিতে। ওই গ্রামের হরিপদ মনু তিনিও বিঘা প্রতি ৭০০ টাকা চুক্তিতে অপর একটি পুকুরে পাট জাগ দিয়েছেন।

শুধু জয়নাল, লতিফ বা মনু নয় ওই গ্রামের পরিতোষ, দিলীপ, কৃষ্ণসহ অনেকেই এবার পুকুর ভাড়া নিয়ে পাট জাগ দিতে বাধ্য হয়েছেন। যা ইতিপূর্বে কোন বছর করেননি তারা।
মণিরামপুর উপজেলায় এবার পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে সাড়ে পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে। আর চাষ হয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার ৩০০ হেক্টরে। যে কৃষকই এবার পাট চাষ করেছেন বৃষ্টির পানির অভাবে তাদের অধিকাংশ পুকুর ভাড়া করে পাট জাগ দিতে বাধ্য হয়েছেন। সাধারণত আষাঢ়-শ্রাবন এই দুই মাসকে বর্ষার মাস ধরা হলেও এবার মণিরামপুরের কোথাও উল্লেখযোগ্য বৃষ্টি হয়নি। ফলে শুকিয়ে আছে মাঠ-ঘাট, নদী, ডোবা-পুকুর। পাট ভিজানো নিয়ে কৃষকদের যেমন ভোগান্তি, বৃষ্টির অভাবে আবার তাদেরকে পাট চাষ করতে নির্ভর করতে হয়েছে সেচের ওপর। এদিকে, অনেক কৃষক ভিজানোর জায়গার অভাবে এখনও ক্ষেতের পাট কাটেননি,আশায় আছেন বৃষ্টির।

জলকর রোহিতা গ্রামের আশুতোষ দাস বলেন, ১৫ কাঠা এরিয়ার একটা পুকুর আছে। মাছ ফেলানোর মত পানি হইনি। ৬০০ টাকা বিঘা প্রতি গ্রামের ৫-৬ জন পুকুরে পাট জাগ দিয়েছে।
এদিকে পাট চাষের পর পঁচানো নিয়ে কৃষক যেমন বিপাকে তেমনি দাম নিয়েও অসন্তোষ রয়েছে তাদের। যেখানে মণ প্রতি পাটের উৎপাদন খরচ প্রায় ১৫০০ টাকা সেখানে একমণ পাট বিক্রি হচ্ছে ১২০০-১৩৮০ টাকায়। ফলে মণ প্রতি ২০০-৩০০ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে কৃষকদের।
মাহমুদকাটি গ্রামের চাষি আব্দুল কুদ্দুস বলেন, পচনের ওপর পাটের মান নির্ভর করে। ভালভাবে পাট ভিজাতে না পারলে আঁশের রং কালচে হয়ে যায়। আর তখনই মণ প্রতি দাম কমে আসে ২০০-৩০০ টাকা।

মণিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হিরক কুমার সরকার বলেন, বৃষ্টির অভাবে এবার মণিরামপুরে পাটের ফলন একটু কম হয়েছে। পাট জাগ দেওয়া নিয়েও কৃষকদের সমস্যা হচ্ছে। পানির অভাবে কাঁচা পাট ছাড়িয়ে নিয়ে আটি বেধে পানিতে ভিজানোর ‘রিবন রেটিং’ নামে যে পদ্ধতি আছে সেটা এই অঞ্চলে পরিচিত না হওয়ায় এই সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এমন অবস্থায় ডোবায় সেচের পানি ঢুকিয়ে পাট জাগ দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে কৃষকদের।
দামের ব্যাপারে এই কর্মকর্তা বলেন, ১৩০০ টাকায় পাট বিক্রি হলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। তবে দাম ১৫০০-১৬০০ টাকা নির্ধারণ হলে লাভবান হবেন কৃষক।