মিডিয়ায় খবর প্রকাশিত হয়েছে যে, কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করছে পাকিস্তান। এ খবরকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি।
তিনি বলেছেন, সোমবার কাশ্মীর ইস্যুতে আলোচনা করবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। শনিবার তিনি উমেরকোটে শিব মন্দিরে সমবেত হিন্দু সম্প্রদায়ের উদ্দেশে বক্তব্য রাখছিলেন। সেখানে তিনি বলেন, কাশ্মীরি ভাইবোনদের সঙ্গে পাকিস্তানের অমুসলিমদের এই সমাবেশ। এতে ভারতের নরেন্দ্র মোদি সরকারের যে দমিয়ে রাখার দৃষ্টিভঙ্গি তার সঙ্গে এ সম্প্রদায়ের বিরোধ ফুটে উঠেছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন ডন।
শাহ মেহমুদ কুরেশি বলেন, এই সমাবেশ কোনো রাজনৈতিক সমাবেশ নয়। এর মধ্য দিয়ে ভারতে ফ্যাসিস্ট মোদি সরকারের কাছে একটি পরিষ্কার বার্তা দেয়া হয়েছে।
তাহলো, কাশ্মীরিদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছেন পাকিস্তানের হিন্দুরা ও অন্য অমুসলিম সম্প্রদায়। তিনি আরো বলেন, ভারত দখলীকৃত কাশ্মীরে যে মাত্রায়ই দমনপীড়ন চালানো হোক না কেন, কাশ্মীরিদের কণ্ঠকে দমিয়ে রাখা যাবে না, যারা গত কয়েকটি সপ্তাহ কারফিউয়ের মধ্যে রয়েছেন। পাকিস্তানের অনুরোধে সোমবার কাশ্মীর ইস্যুতে আলোচনা হবে ইউরোপীয় ইউনিয়নে। এই আলোচনা বন্ধ করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছে ভারত।
তিনি বলেন, পরের দিনই কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতীয় হাই কমিশনার, মানবাধিকার কর্মী ও বৃটিশ পার্লামেন্টারিয়ানদের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য লন্ডনের হাইড পার্কে সমবেত হবেন বিপুল সংখ্যক মানুষ। এ ছাড়া তিনি শিগগিরই কাশ্মীর ইস্যু উত্থাপনের জন্য জেনেভা সফর করবেন। অন্যদিকে কাশ্মীর ইস্যুতে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে আগামী ২৭ শে সেপ্টেম্বর বক্তব্য রাখবেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। এ সময় পুরো বিশ্ব দেখবে পাকিস্তানের অবস্থান।
উমেরকোট হলো ভারত সীমান্ত লাগোয়া জেলা। সেখানে সমবেত জনতাকে পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তার প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী তিনি সেখানে গিয়েছেন। ইসলামাবাদে ব্যস্ততার জন্য সিন্ধুতে এই এলাকা সফর করতে পারছেন না ইমরান। উল্লেখ্য, ভারত সীমান্তবর্তী সিন্ধুর উমেরকোট ও থারপারকার জেলা হলো হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ।
সেখানে শাহ মেহমুদ কুরেশি বলেন, এই সমাবেশ থেকে মোদি ও জয় শঙ্করের কাছে একটি শক্তিশালী বার্তা চলে গেছে। তাহলো, তারা কাশ্মীরি জনগণের পক্ষে দাঁড়াতে পারেন না। কিন্তু পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিন্দুদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, ভারত সরকার কাশ্মীরি মুসলিমদেরকে নামাজ আদায় করার ক্ষেত্রেও বাধা দিয়েছে। কিন্তু পাকিস্তানে সব অমুসলিম তাদের উপাসনালয়ে অবাধে উপাসনা করতে পারছেন। তার ভাষায়, আপনারা মসজিদগুলোকে ফাঁকা করে ফেলেছেন। কিন্তু পাকিস্তানে মন্দিরগুলোর প্রতি সম্মান দেখানো হচ্ছে।
কুরেশি আরো বলেন, তিনি মানবতা, ভ্রাতৃত্ববোধ ও আন্তঃধর্মীয় বিশ্বাসের বার্তা নিয়ে ওই জেলা সফরে গিয়েছেন। ওদিকে ভারত দখলীকৃত কাশ্মীর ২৭ দিনের মতো কারফিউয়ের আওতায় রয়েছে। সেখানে ওষুধ, খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের কোনো সরবরাহ নেই। বড় ধরনের এক সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে।
শাহ মেহমুদ কুরেশি বলেন, এমনকি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাশ্মীরে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না ভারত। কারণ, কাশ্মীর উপত্যকায় যে ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘন ঘটছে তা ধামাচাপা দিতে চাইছে মোদি সরকার। তার ভাষায়, পাকিস্তানে ধর্মীয় স্বাধীনতাকে সুরক্ষিত রাখা হয়েছে সংবিধান দিয়ে। কিন্তু কাশ্মীরের মানুষকে অধিকারবঞ্চিত রাখছে ভারত সরকার।
তিনি আরো বলেন, নেহরু ও গান্ধীর দর্শনকে কবর দেয়া হয়েছে ভারতে। অন্যদিকে তাদের দর্শনের স্থানে আনা হয়েছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের দর্শন।
তিনি বলেন, কাশ্মীর উপত্যকা সফরে আন্তর্জাতিক মিডিয়া ও মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থাগুলোকে নিষিদ্ধ করেছে ভারত সরকার। অন্যদিকে আজাদ জম্মু-কাশ্মীর সফরে আমন্ত্রণ জানিয়েছে পাকিস্তান। তার অভিযোগ, পাকিস্তান হিন্দু ও অমুসলিম সম্প্রদায়ের অধিকার সুরক্ষিত করছে। ওদিকে বিবিসির একটি রিপোর্টের ভিত্তিতে ভারতীয় মিডিয়ায় প্রচারণা হচ্ছে যে, ভারতের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করছে পাকিস্তান। এমন রিপোর্টের কড়া নিন্দা জানিয়েছেন কুরেশি। তিনি বলেছেন, এমন সমঝোতার ঘটনা মোটেও ঘটে নি। প্রতিটি আঘাতের জবাব দেয়া হবে।