রাবি উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে এবার আন্দোলনে শিক্ষকরা

নিয়োগ বাণিজ্য ও দুর্নীতিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়াসহ প্রশাসনকে অপসারণের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ভিন্ন ভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন তারা।

গত বুধবার থেকে উপ-উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে আসছেন। তবে উপাচার্য এবং উপ-উপাচার্যসহ প্রশাসনের অপসারণের দাবিতে শিক্ষকরা আন্দোলনে নামলেন বৃহস্পতিবার। পূজার ছুটি শেষে শিক্ষকরা লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ারও ঘোষণা দেন।

সকাল ১১টায় ‘স্বাধীনতাবিরোধী ও দুর্নীতিবাজ’ আখ্যা দিয়ে প্রশাসনের অপসারণ দাবিতে মানববন্ধন করে দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষক সমাজ ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

ru newsঘণ্টাব্যাপী এ মানববন্ধনে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক দুলাল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, উপাচার্য তার বক্তব্যে ‘জয় হিন্দ’ বলেছেন। তিনি স্বাধীন দেশের রাষ্ট্রীয় সত্তার সাথে এক ধরনের সাংঘর্ষিক বক্তব্য দিয়েছেন। কিন্তু উপাচার্য হিসেবে এ রকম বক্তব্য প্রত্যাশা করা যায় না। এর প্রতিবাদ হওয়া উচিত।

অধ্যাপক বিশ্বাস আরো বলেন, আমরা মনে করি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যে নিয়োগ বাণিজ্য হচ্ছে তারই অংশ হিসেবে সম্প্রতি চাকরির নিয়োগ নিয়ে একটি অডিও ক্লিপ ফাঁস হয়েছে। এই প্রশাসন এ রকম দুর্নীতিতে একেবারেই নিমজ্জিত। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এখন সারাদেশে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান চলছে। আমরা শিক্ষকরা মনে করি, এই আন্দোলনে আমাদেরও অংশগ্রহণ করা উচিত। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শীর্ষ পদে বসে যারা এ রকম দুর্নীতি করছে আমরা তাদের সরিয়ে দেয়ার কথা বলছি। তারা সরে যাক এবং স্বচ্ছ প্রশাসন তৈরি হোক।

বাংলা বিভাগের শিক্ষক সফিকুন্নবী সামাদী বলেন, ‘উপাচার্য তার জামাতাকে কীভাবে নিয়োগ দিয়েছেন সেটা সবার জানা। এরপর সম্প্রতি উপ-উপাচার্য ও এক চাকরিপ্রত্যাশীর স্ত্রীর কথোপকথন ফাঁস হয়েছে। তাতে তার কাছে টাকা দাবি করা হয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক পাওয়া ঐ চাকরিপ্রত্যাশীকে বাদ দিয়ে নেয়া হয়েছে চৌধুরী মো. জাকারিয়ার জামাতাকে, প্রাইভেট বিশ্বদ্যিালয়ের শিক্ষার্থীকে। আমরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান অক্ষুন্ন রাখতে চাই। আমরা চাই না আত্মীয় প্রতিপালনের একটি খামারে পরিণত হোক এই বিশ্ববিদ্যালয়। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয়ে সঠিক জ্ঞান চর্চা হোক। যার অন্তরায় এই দুর্নীতবাজ প্রশাসন। এই প্রশাসনের শীর্ষ পর্যন্ত দুর্নীতিগ্রস্ত। আমরা এই প্রশাসনের অপসারণ চাই।’

এদিকে সকাল ১০টায় দুর্নীতিমুক্ত শিক্ষাঙ্গনের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা চত্বরে খালি পায়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. ফরিদ খান।

এদিন বেলা ১১টায় উপ-উপাচার্যের পদত্যাগ চেয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও পরে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে মানববন্ধন করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এসময় উপ-উপাচার্যের পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। পরে বেলা সাড়ে ১১টায় তারা শিক্ষকদের মানববন্ধনে অংশ নিয়ে সংহতি প্রকাশ করে।

একইদিনে ‘অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়’ এর ব্যানারে সমন্বিতভাবে মানববন্ধন করে রাকসু আন্দোলন মঞ্চ, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ রাবি শাখা ও ছাত্র ফেডারেশন।
এদিকে বিকেলে শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সিনেট ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া এ ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তার ফোনালাপ একটি স্বার্থন্বেষী মহল কতৃক আংশিক, খন্ডিত ও অসংভাবে প্রকাশ করে বলে দাবি করা হয়।

লিখিত বক্তব্যে অধ্যাপক জাকারিয়া বলেন, ‘যে ঘটনার সূত্র ধরে এই ইস্যু তৈরি হয়েছে তাহলো আইন বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের বোর্ড ছিল ১৩ নভেম্বর ২০১৮। এর মাত্র ৯ দিন আগে ৪ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে আইন বিভাগের নিয়োগ সংক্রান্ত একটি দুর্নীতির নথি আমার নজরে আসে। যা ইসলামী ব্যাংকে ২ লক্ষ টাকার একটি লেনদেনের রিসিপ্ট। সেই বিষয়টি তদন্ত করতে গিয়ে আমি অনেকটা সাবলীল ভঙ্গিতে আমার নাম ও পরিচয় দিয়ে হুদার স্ত্রীর নিকট হতে টাকার উৎসটি জানার চেষ্টা করি।’

‘আরেকটি বিষয় নির্লজ্জভাবে অনেকেই রটানোর চেষ্টা করছে- এই ভেবে যে, আমার জামাতার নিয়োগের জন্য হুদার চাকরি হয়নি; যা সম্পূর্ণভাবে মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আইন বিভাগের নিয়োগ বোর্ড ছিল ১৩ নভেম্বর ২০১৮, সিন্ডিকেট হয়েছে ১৭ নভেম্বর ২০১৮, যোগদান হয়েছে ১৮ নভেম্বর ২০১৮। আর তাদের বিয়ে হয়েছে ২৪ এপ্রিল ২০১৯। তাহলে কিভাবে এই আমার জামাতাকে সংশ্লিষ্ট করে মিথ্যা অপপ্রচার চালায়?’ এসব তিনি সামগ্রিক নিয়োগ-বাণিজ্যসহ আইন বিভাগের নিয়োগ বিষয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেন।