হাসপাতালে আরও ৪৮ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে সম্রাট

ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে বহুল আলোচিত সদ্য বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট আগের চেয়ে সুস্থ বোধ করছেন। তাকে আরও ৪৮ ঘণ্টার পর‌্যবেক্ষণে রেখেছেন চিকিৎসকরা। ফলে তাকে কারাগারে পাঠানোর বিষয়ে শনিবার চিকিৎসকদের সিদ্ধান্ত জানা যাবে।

গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যাওয়ার এক রাত পরেই ‘অসুস্থ বোধ’ করায় সম্রাটকে মঙ্গলবার কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে সেখান থেকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে আনা হয়।

সেখানে ড. মহসিনের তত্ত্বাবধানেই সম্রাটের চিকিৎসা চলছে। বুধবার তাকে আরও ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখার কথা জানান চিকিৎসকরা। ২৪ ঘণ্টা শেষে আজ সেই মেয়াদ আরও ৪৮ ঘণ্টা বাড়লো।

এ হাসপাতালের একজন চিকিৎসক জানান, সম্রাটকে কারাগারে নেয়ার মত শারীরিক অবস্থা নিশ্চিত করেই তাকে পাঠানো হবে। এজন্য আরো একদিন সময় লাগবে।

এদিকে সম্রাটের সবশেষ শারীরিক অবস্থা জানাতে আজ দুপুরে ব্রিফিংয়ের কথা থাকলেও তা হয়নি। সকাল থেকে গণমাধ্যমকর্মীরা হাসপাতালে ভিড় করলেও জানানো হয় ‘ওপরের নির্দেশ’ আছে মিডিয়ায় কথা বলা যাবে না।

পরে ব্রিফিং না করলেও গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাদা কথা বলেছেন চিকিৎসকরা।

তিনি বলেন, ‘সম্রাটের শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে ভালো। কারাগারে নেয়ার মত শারীরিক অবস্থা নিশ্চিত হতে আর একদিন সময় লাগবে। এখনো অনেকগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।’

‘সেসব শেষে নিশ্চিত হওয়া যাবে তাকে কারাগারে পাঠানো যাবে কি-না। এজন্য শুক্রবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কারণ এখনও বলা যাচ্ছে না, তার শারীরিক অবস্থা কতটুকু ফিট কারাগারে নেওয়ার জন্য।’

সম্রাট বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে নিষেধ প্রসঙ্গে এই চিকিৎসক বলেন, ‘তার শারীরিক অবস্থা ভালো হওয়ায় আমরা আনুষ্ঠানিক কোনো ব্রিফিং করিনি। ওপরের নির্দেশের যে কথা বলা হচ্ছে সেটা ঠিক না।’

১৮ তারিখ থেকে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হলে টেন্ডার, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ ওঠে যুবলীগ নেতা সম্রাটের বিরুদ্ধে। অভিযানে সরকারী দলের অনেক নেতা গ্রেপ্তার হলেও সম্রাট ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন। পরে ৬ অক্টোবর ভোরে তিনি কুমিল্লা থেকে গ্রেপ্তার হন।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার মতিঝিলের ক্লাবপাড়ায় র‌্যাবের অভিযানে অবৈধ ক্যাসিনো চলার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর আত্মগোপনে ছিলেন সম্রাট। গত শনিবার গভীর রাতে সম্রাট ও তার সহযোগী এনামুল হক আরমানকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের সীমান্তবর্তী একটি গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

পরের দিন রবিবার সম্রাটকে সঙ্গে নিয়ে কাকরাইলের ভূইয়া ট্রেড সেন্টারে তার কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা অভিযান শেষে গুলিসহ একটি বিদেশি পিস্তল, ১১৬০টি ইয়াবা, ১৯ বোতল বিদেশি মদ, দুটি ক্যাঙ্গারুর চামড়া এবং ‘নির্যাতন করার’ বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম পাওয়ার কথা জানায় র‌্যাব।

ক্যাঙ্গারুর চামড়া পাওয়ার কারণে সম্রাটকে তাৎক্ষণিকভাবে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ) আইনে তাৎক্ষণিকভাবে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। সেদিনই তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় কেরানীগঞ্জের কারাগারে।

এছাড়া তার বিরুদ্ধে রমনায় দায়ের করা মাদক নিয়ন্ত্রণ ও অস্ত্র আইনে দুটি মামলা করা হয়েছে। দুই মামলায় তাকে ২০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন শুনানির অপেক্ষায় আছে। হাসপাতালে থাকায় তাকে আদালতে হাজির করা যায়নি।