হাসপাতাল থেকে কারাগারে নেওয়া হলো সম্রাটকে

যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। শনিবার সকাল ১১টার দিকে তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়ার পর কারাগারে ফেরত নেওয়া হয়।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে (কেরানীগঞ্জ) ডেপুটি জেলার জাহেদুল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে ছয় মাসের দণ্ডপ্রাপ্ত সম্রাটকে হাসপাতাল থেকে কারাগারে আনা হয়েছে।

এর আগে গত ৮ অক্টোবর বুকে ব্যথা অনুভব করলে সম্রাটকে কারাগার থেকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে তাকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর পর আলোচনার আসে যুবলীগ নেতা সম্রাটের নাম। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ অনেকের ধারণা ঢাকায় ক্যাসিনো ব্যবসার অন্যতম নিয়ন্ত্রক সম্রাট। এছাড়াও সম্রাটের বিরুদ্ধে টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।

ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর পর কাকরাইলের ভূঁইয়া ম্যানশনে নিজের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে অবস্থান নেন সম্রাট। সেখানে অবস্থানকালে শতাধিক সমর্থক তাকে পাহারা দিয়ে রাখেন। এরপর সম্রাটের অবস্থান নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়। পরে গত ৬ অক্টোবর কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার আলকরা ইউনিয়নের কুঞ্জুশ্রীপুর গ্রামের এক জামায়াত নেতার বাড়ি থেকে সম্রাট ও তার সহযোগী এনামুল হক আরমানকে গ্রেফতার করা হয়।

ফেনী হয়ে ভারতে পালানোর পরিকল্পনা ছিল ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের। এ জন্য প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছিল। আর এক দিন মাত্র সময় পেলে তিনি ফেনীর বিলোনিয়া এলাকা দিয়ে ভারতে পাড়ি জমাতেন বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

সম্রাটের গ্রামের বাড়ি পরশুরাম থানার মীর্জানগর ইউনিয়নের সাহেবনগর গ্রামে। সূত্র জানায়, গ্রামটি ভারত সীমান্তের পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে। গ্রামে সম্রাটের বাড়িটি সারা বছর খালি পড়ে থাকে। গ্রেফতারের আগে হঠাৎ করে সম্রাটের বাড়িটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়। বাড়িতে কিছু যুবকের আনাগোনাও দেখা গেছে। এরা মূলত পাহারার কাজ করেছিল। চৌদ্দগ্রামের যে বাড়িতে সম্রাট আত্মগোপনে ছিলেন সেই গ্রামও ভারত সীমান্তের পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে। তবে ওই সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া থাকায় সীমান্ত অতিক্রম করা দুরূহ ছিল। এ অবস্থায় পরশুরামের বিলোনিয়া সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। এ জন্য সীমান্তের পাচারকারী একটি চক্রকে পারাপারের ব্যবস্থা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের মুখে তা ব্যর্থ হয়।

সরকারের দুর্নীতিবিরোধী চলমান কঠোর অভিযানে যারা গ্রেফতার হয়েছেন, তাদের মধ্যে সম্রাট সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাজনীতিক। গ্রেফতার এড়াতে তিনি গোপনে ভারতে পালাতে চেয়েছিলেন। গত ২৩ সেপ্টেম্বর তার ব্যাংক হিসাব স্থগিত ও তলব করা হয়। ২৪ সেপ্টেম্বর তার বিদেশ গমনে জারি করা হয় নিষেধাজ্ঞা।

গ্রেফতারের পর রোববার সম্রাট ও আরমানকে আনা হয় ঢাকায়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সম্রাটকে নিয়ে তার কাকরাইলের দলীয় কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়। একই সময়ে র‌্যাব সদস্যরা পৃথকভাবে মহাখালী ডিওএইচএস ও শান্তিনগরে তার বাসায় অভিযান চালান। এ ছাড়া সম্রাটের সহযোগী ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সহসভাপতি আরমানের মিরপুরের বাসায়ও অভিযান চালানো হয়। অভিযানে সম্রাটের কার্যালয় থেকে পিস্তল, ইলেকট্রিক শক দেওয়ার মেশিন, গুলি, বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ, ইয়াবা ও ক্যাঙ্গারুর চামড়াসহ বিভিন্ন জিনিস উদ্ধার করে র‌্যাব।

অভিযান শেষে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়ে সম্রাটকে কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। আরমানকেও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের মামলায় ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া রোববারই এই দু’জনকে যুবলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়।

সোমবার ঢাকা দক্ষিণ মহানগর যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ও সহসভাপতি এনামুল হক আরমানের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করে র‌্যাব। এর মধ্যে রমনা থানায় অস্ত্র ও মাদক আইনে দুটি এবং কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থানায় আরেকটি মামলা করা হয়।