রক্তাক্ত রাবি শিক্ষার্থী, প্রতিবাদে দু’ দফা সড়ক অবরোধ, গ্রেফতার ৩

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ছিনতাইয়ের সময় ব্যর্থ হয়ে এক শিক্ষার্থীর মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে বহিরাগতরা। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীর করা হত্যাচেষ্টা মামলায় তিন জনকে গ্রেফতার করেছে মতিহার থানা পুলিশ। তবে হামলার ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা।

শনিবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে আন্দোলনরত শিক্ষর্থীরা। এর আগে গত শুক্রবার রাত পৌনে ৯টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত একই দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে তারা।

হামলার শিকার ওই শিক্ষার্থীর নাম ফিরোজ আনাম। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। গত শুক্রবার রাত পৌনে আটটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হল সংলগ্ন মাঠে হামলার ঘটনা ঘটে।

এরপর রাত ১১টায় ভুক্তভোগী নিজে বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে নগরীর মতিহার থানায় হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় গ্রেফাতারকৃতরা হলেন, নগরীর তালাইমারী এলাকার জাহিদ আলীর ছেলে রুবেল হোসেন, শিরোইল এলাকার বাকির হোসেনের ছেলে রিফাত হোসেন রাকেশ এবং মির্জাপুর এলাকার খোরশেদ আলীর ছেলে পারভেজ। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান।

সড়ক অবরোধের এর আগে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে মানববন্ধন করেন তারা। সেখানে শিক্ষার্থীরা বলেন, ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে শিক্ষার্থীদের মেরে আহত করা ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। প্রায়ই ক্যাম্পাসে এ ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে। কিন্তু প্রশাসন এগুলো আটকাতে ব্যর্থ। বারবার দাবি জানানোর পরেও প্রশাসন ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের অবাধ প্রবেশ ও চলাচল বন্ধ করতে পারেনি।

তারা বলেন, বহিরাগতরা ক্যাম্পাসে ঢুকে চুরি-ছিনতাই করছে, শিক্ষার্থীদের ধরে ধরে মারছে। শিক্ষার্থীরা তাদের কাছে জিম্মি। অবিলম্বে প্রশাসনকে ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান বক্তারা।

মানববন্ধন শেষে শিক্ষার্থীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে অবস্থান নেয়। পরে বেলা দুইটার দিক প্রশাসন তাদের দাবি মেনে নেওয়া ও ভর্তি পরিক্ষার কারণের আন্দোলন ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত করে শিক্ষার্থীরা।

এদিন বেলা ১২টায় একই দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে মানববন্ধন করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এরপর বেলা সাড়ে ১২টায় শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনের সামনে মানববন্ধন করে ভুক্তভোগীর নিজ এলাকার শিক্ষার্থীদের সংগঠন বদরগঞ্জ উপজেলা ছাত্র সমিতি।

এর আগে, ঘটনায় জড়িতদের আটকের দাবিতে শুক্রবার রাত পৌনে ১০টা থেকে ভোর পৌনে চারটা পর্যন্ত মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ চালিয়ে যায়। এতে রাস্তার দু’পাশে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। দুর্ভোগে পড়েন পথচারীরা।

এর পরপরই সেখানে উপস্থিত হন বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ও অন্য সদস্যরা। শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক থেকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন তারা। এসময় শিক্ষার্থীদের সাথে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে শিক্ষার্থী ও প্রক্টরিয়াল বডির সঙ্গে টানা হেচড়ার ঘটনা ঘটে। সেখানে সহকারী প্রক্টর হুমায়ন কবীর শিক্ষর্থীদের হাতে লাঞ্ছিত হন।

এ ঘটনার জেরে ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী কিশোরকে ডিবি পুলিশের হাতে তুলে দেন ভুক্তভোগী সহকারী প্রক্টর। এরপর মহসড়কে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের আন্দোলন আরও তীব্র আকার ধারণ করে। পওে প্রক্টর ও বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকে। এবং আটকৃতকে ফেরত না দেওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে এবং সারারাত মহাসড়ক অবরোধের হুশিয়ারি দেন তারা।

এরপরে আটককৃত কিশোরকে ডিবি পুলিশ ফেরত দিতে বাধ্য হয়। পরে প্রক্টর ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের বার বার অনুরোধের পর শনিবার ভোর ৪ টার দিকে অবরোধ কর্মসূচি শেষ করেন শিক্ষার্থীরা। সেখানে প্রক্টর শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়ে দ্রুত বাস্তবায়নের আশ^াস দেন।

এসময় বিক্ষোভকারীরা চার দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাদী হয়ে মামলা করবে, ১২ ঘন্টার মধ্যে আসামি ধরতে হবে, ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং বহিরাগতদের ক্যাম্পাসে প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে হবে।

এ বিষয়ে মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান জানান, ছেলেটির মাথায় আঘাত করা হয়েছে। তবে কোনো ধারালো অস্ত্র দিয়ে নয়। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। যদি কোনো ধরনের প্রমাণ পায় তাহলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব। ঘটনার পরে ভুক্তভোগী নিজে বাদী হয়ে হত্যাচেষ্টা মামলা করেন। এরপর অভিযান চালিয়ে আমরা তিনজনকে গ্রেফতার করেছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো আমরা দেখছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রসাশনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জানা যায়, হামলার শিকার ফিরোজ তার বান্ধবিকে হলে এগিয়ে দিতে যাচ্ছিল। এমন সময় বিশ্বািবদ্যালয়ের হবিবুর রহমান হলের সামনের রাস্তায় মোটরসাইকেলে করে কয়েকজন যুবক এসে তাদের মাঠে নিয়ে যায়। তাদের কাছ থেকে মোবাইল বা টাকা পয়সা দাবি করে। ফিরোজ মোবাইল দিতে অস্বীকৃতি জানালে ছিনতাইকারীরা তাকে হাতুড়ি জাতীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। চিৎকার করলে মোবাইল ফেলে রেখে হামলাকারীরা চলে যায়। ফিরোজকে গুরুতর আহত অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা। হাসপাতালের আট নয় ওয়াডে তার চিকিৎসা চলছে। এখন তিনি আশঙ্কামুক্ত বলে জানা গেছে।