কি ঘটেছিলো সেদিন

হলি আর্টিজানের ভয়াবহ জঙ্গি হামলার সেই বিভীষিকার কথা মনে হলে আজও আঁতকে ওঠেন সেদিনে আহত এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা। তাদের মধ্যে একজন আয়ান মো. বিজয়। তিনি হলি আর্টিজানে অবস্থিত লেকভিউ ক্লিনিকের ফ্রন্ট ডেস্ক এক্সিকিউটিভ।

হামলার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, সেদিন সন্ধ্যার পর হঠাৎ গোলাগুলির শব্দে আমরা হতচকিত হয়ে যাই। আমাদের ক্লিনিকে সেদিন সাত-আটজন রোগী ছিলো। তারা সবাই কেবিনে ছিলো। প্রচ- গোলাগুলি শুরু হওয়ার পর রোগীদের সবাইকে মেঝেতে শুইয়ে দেয়া হয়, যদি গুলি এসে জানালার কাচে লাগে.. সেই ভয়ে। সারা রাত কেমন করে কেটেছে, আমরাই জানি।
পরদিন কমান্ডো অভিযানেও সময় ক্লিনিক থেকে সবাইকে বের করে নেয়া হয়েছিলো বলে জানান তিনি।

নতুন চালু করা হলি আর্টিজান বেকারিতে কাজ করেন জঙ্গি হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া ছয়জন। তাদের একজন মো. সাঈদ। তিনি বলেন, আসলে আমি সেদিনের কথা আর মনে করতে চাই না। ভুলে থাকতে চাই। মনে করলে হয়তো অনেক কিছু বলা যেতো। এখন যেহেতু কাজ করে দিন কাটে সেটাই ভালো থাকার একটা ব্যবস্থা। এছাড়া গণমাধ্যমের সাথে সেদিনের ঘটনার নিয়ে কথা বলতে তার মালিকের নিষেধ আছে বলেও জানান তিনি।

হামলার শিকার হলি আর্টিজানের লাগোয়া পশ্চিম পাশের ২১ নম্বর ভবনটির নাম ‘সুবাস্তু সিতারা’, এতে ১৯টি ‘ফুল ফার্নিশড’ অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। বাড়িটির ব্যবস্থাপক আনিসুর রহমানের কাছে জানতে চাওয়া হয়, সাড়ে তিন বছর আগের হামলার প্রভাব এখনও রয়েছে কিনা?

তিনি বলেন, সেদিনের ঘটনার পর নিরাপত্তা জোরদার করা হলেও মানুষের মনের আতঙ্ক কিন্তু কাটেনি। ওই ঘটনার পর পুরনো ভাড়াটেদের অনেকে এই এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন। তবে সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল, অ্যাপার্টমেন্টের ভাড়া একেবারে কমে গেছে। আমরা যেখানে সর্বোচ্চ আড়াই লাখ টাকায় অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া দিতাম, সেখানে এখন এক লাখ টাকাতেও ভাড়া নিতে চান না অনেকে। এর কমেও ভাড়া দিয়ে দিতে হচ্ছে। তবে জঙ্গি হামলার পর গুলশান এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা আরও বেড়েছে, বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা দিন-রাত টহল দেয় বলে জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ১লা জুলাই রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে নৃশংস হামলা চালায় জঙ্গিরা। ওই দিন রাত পৌনে ৯টার দিকে সশস্ত্র পাঁচ জঙ্গি বেকারিতে ঢুকে নির্বিচারে গুলি করে ২২ জন দেশি-বিদেশি নাগরিককে হত্যা করে যার মধ্যে ৯ জন ইতালিয়ান, সাত জন জাপানি, এক জন ভারতীয় নাগরিক। জঙ্গিদের দমনে অভিযান চালাতে গিয়ে নিহত হন পুলিশের দুই কর্মকর্তা। জঙ্গিরা বেকারিতে যাওয়া অতিথিদের রাতভর জিম্মি করে রাখে। পরদিন সকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় সেনাবাহিনী কমান্ডো অভিযান- অপারেশন থান্ডারবোল্ট পরিচালনা করে তাদের জিম্মিদশা থেকে মুক্তি করে। অভিযানে পাঁচ জঙ্গি ও একজন বেকারির শেফ নিহত হন। এছাড়া চিকিৎসাধীন অবস্থায় নিহত হন আরও একজন বেকারিকর্মী।