মণিরামপুরে আমন চাষির মাথায় হাত

যশোরের মণিরামপুর উপজেলার মাহমুদকাটি গ্রামের বর্গা চাষি ইব্রাহিম। একবিঘা জমি লীজ নিয়ে আমন চাষ (গুটি স্বর্ণা) করেছেন। ধানের চারা রোপন থেকে শুরু করে ধান বিক্রির জন্য প্রস্তুত করতে তার খরচ হয়েছে ১২ হাজার টাকা। এক বিঘায় তিনি ধান পেয়েছেন ১৬ মণ। প্রতিমণ ধান উৎপন্ন করতে তার খরচ পড়েছে ৭৫০ টাকা। বিক্রি করতে গিয়ে তিনি জানতে পারেন ধানের বাজার দর মণপ্রতি ৫৮০ টাকা। মণপ্রতি তার লোকসান ১৭০ টাকা।

ইব্রাহিম বলেন, জমির মালিককে ছয় মণ শোধ করে থাকছে ১০ মণ। যা বিক্রি করলে আমি পাঁচ হাজার ৮০০ টাকা পাচ্ছি। সাথে দুই হাজার টাকার বিচালি বিক্রি করে মোট সাত হাজার ৮০০ টাকা হচ্ছে। আমন চাষ করে মোট লস চার হাজার ২০০ টাকা। ফলে মণ প্রতি লস ৪২০ টাকা।

উপজেলার স্বরণপুর গ্রামের বর্গা চাষি ফুরকান। তিনি ১১হাজার টাকা খরচ করে একবিঘা জমিতে ১৫ মণ ধান পেয়েছেন। জমির মালিককে ছয় মণ দিলে তার থাকছে নয় মণ। ৫৮০টাকা মণপ্রতি ধান ও দুই হাজার টাকার বিচালি বিক্রি করে পাচ্ছেন ৭ হাজার ২২০ টাকা। এই কৃষকের মণপ্রতি লোকসান ৪২০ টাকা।

রঘুনাথপুর গ্রামের নূরআলম মিন্টু ২৫ কাঠা জমি বর্গা নিয়ে গুটি স্বর্ণা ধান করেছেন। ১৫ হাজার টাকা খরচ করে ২২ মন ধান পেয়েছেন। জমির মালিককে সাত মণ শোধ করে তার থাকছে ১৫ মণ। সেই হিসেবে প্রতিমণ ধাণ উৎপন্ন করতে তার খরচ পড়েছে এক হাজার টাকা। ৫৮০ টাকায় বিক্রি করলে মণপ্রতি তিনিও ৪২০ টাকা ক্ষতির শিকার হচ্ছেন।

শুধু ইব্রাহিম,মিন্টু বা ফুরকান নন চলতি মৌসুমে আমন চাষ করে ক্ষতির শিকার হয়েছেন পট্টি গ্রামের শফিকুল, মাহমুদকাটি গ্রামের ইউসুফ, নুর আলক ও নাজিমসহ অনেকেই।

নাজিম জানান, তিনি লীজ নিয়ে সাত বিঘা জমিতে আমণ চাষ করেছেন। বিঘাপ্রতি তিন হাজার টাকা করে লোকসান গুনতে হচ্ছে তাকে।

কৃষকরা বলছেন, এই বছরই বোরো ও আমন ধান চাষ করে আমরা লস খাচ্ছি। এভাবে চললে আগামীতে ধান চাষ করা সম্ভব হবে না।

চলতি মৌসুমে উপজেলার ২২হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছে। ভরা মৌসুমে কাঙ্খিত বৃষ্টি না হওয়ায় কৃষকে সেচ বাবদ বিঘাপ্রতি দুই হাজার টাকা বেশি গুনতে হয়েছে। তারসাথে ঘুর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে ধানের ফলন কম হয়েছে বলে দাবি কৃষকদের।

উপজেলার টেংরামারী বাজারের ধান ব্যবসায়ী ফয়েজ উদ্দিন বলেন, আমন ধান ওঠার শুরুতে গুটিস্বর্ণা (মোটা) ধান আমরা সাড়ে ৬০০ টাকা করে কিনেছি। আজ রোববার (১ ডিসেম্বর) তা ৫৭০-৫৮০ টাকায় মণ কিনছি। আর ব্রি-৪৯ (চিকন) কিনছি ৬০০ টাকা করে। দিন গেলেই ধানের দাম কম হচ্ছে। ফলে ধান কিনে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। ধানের বাজার স্থিতিশীল চান এই ব্যবসায়ী।

এদিকে ধানের দাম ক্রমশ কমলেও চালের বাজার উর্ধ্বগামী হচ্ছে। বাজারে প্রতিকেজি মোটা চাল ৩৪ টাকা ও চেকনচাল ৩৮ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। চালের দামের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ধানের দাম বাড়ানোর দাবি কৃষকদের। সেই ক্ষেত্রে খোলা বাজারে মোটা ধানের মণ ৮০০ টাকা নির্ধারণের দাবি তাদের।

মণিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হিরক কুমার সরকার বলেন, দেশী জাতের ব্রি-৪৯, ব্রি-৭৫ ও ব্রি ৮৭ ধানের এবার আমনে বাম্পার ফলন হয়েছে। বিঘাপ্রতি কৃষক ২০-২২ মণ ধান পেয়েছেন। বাজারে এই ধানের মণ ৬৫০ টাকা করে। খোলা বাজারে ধানের দাম হাজার টাকার উপরে হলে কৃষক লাভবান হবেন বলে জানান এই কর্মকর্তা।