ভারতে নতুন নাগরিকত্ব আইনের খারাপ বার্তা

৬ ডিসেম্বর ছিল ভারতে বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলার ২৭তম বার্ষিকী। এর ঠিক দুই দিন পরই দেশটির কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা দেশটির ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু সংশোধনী অনুমোদন করে। যে সংশোধনীর মাধ্যমে মুসলমানদের বাদ দিয়ে অন্য প্রধান ধর্মাবলম্বী বেনাগরিকদের ভারতে নাগরিকত্ব পাওয়া সহজ করা হচ্ছে।

নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে তুমুল বিতর্কের মধ্যেই সোমবার ভারতের লোকসভায় পাস হয়েছে বিলটি। এ দিন মোদি সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বিলটি পেশের সাথে সাথেই উত্তাল হয়ে ওঠে লোকসভা। শীতকালীন অধিবেশনের এই পর্বে তীব্র বিতর্কে সরগরম হয়ে ওঠে ভারতীয় পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ।

ভারতীয় সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভা ৫৪৩ আসনবিশিষ্ট। সোমবার বিলটি নিয়ে ভোটাভুটির সময় লোকসভায় উপস্থিত ছিলেন ৩৭৫ জন আইনপ্রণেতা। এর মধ্যে ২৯৬ জন বিলটির পক্ষে ভোট দেন। বিপক্ষে ভোট পড়ে মাত্র ৮২টি। বিলটি কার্যকর হলে মুসলিম ছাড়া অন্য শরণার্থীরা ভারতের নাগরিকত্ব পাবে।

এ দিন বিল পেশের সাথে সাথেই তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়ে যায়। বিলের একাধিক অংশ নিয়ে আপত্তি তোলেন লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরী। বিলটি সংখ্যালঘুদের স্বার্থ বিরোধী বলে আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের সংখ্যালঘু মানুষদের নিশানা করেই এই বিলটি বানানো হয়েছে।’

বিলটি ‘অসাংবিধানিক’ ও ‘বিভেদ সৃষ্টিকারী’ বলেও ব্যাখ্যা করেন তৃণমূল কংগ্রেস এমপি সৌগত রায়।

বিলটি নিয়ে লোকসভায় বিতর্ক এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে বার বার হস্তক্ষেপ করতে হয় স্পিকার ওম বিড়লাকে।

বিতর্কিত এই বিলটি নিয়ে ভারতীয় পার্লামেন্টের ভিতরে যেমন হইচই তহয়েছে, তেমনই বিলের প্রতিবাদে বিক্ষোভ চলছে বাইরেও। এ দিন বিল পেশের আগে দিল্লিতে বিক্ষোভ করেছে অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট (এআইইউডিএফ)-এর এমপি বদরুদ্দিন আজমল। সিএবি নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন উত্তর-পূর্ব ভারতের একটি অংশের মানুষ। দিন বিলের প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখানো হয় ত্রিপুরাতেও।

গত সোমবার বিলটিতে সম্মতি দেয় নরেন্দ্র মোদি সরকারের মন্ত্রিসভা। এতে বলা হয়েছে, আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দু, শিখ, জৈন, পার্সি, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী মানুষ, যাঁরা এ দেশে শরণার্থী হিসেবে রয়েছেন, তাদের নাগরিকত্ব দেয়া হবে।