হেগে রোহিঙ্গা নারীর ক্ষোভ

মিয়ানমারে সেনাবাহিনী ধর্ষণ করেছে রোহিঙ্গা নারী হাসিনা বেগমকে (২২)। সেই মানসিক ক্ষত এখনও তিনি বয়ে বেড়াচ্ছেন। আশ্রয় নিয়েছেন বাংলাদেশে আশ্রয়শিবিরে। দেশ ছেড়ে আসার পর এই প্রথমবার তিনি আশ্রয়শিবিরের বাইরে গিয়েছেন। সোমবার পৌঁছেছেন নেদারল্যান্ডসের হেগে। তার সঙ্গে রয়েছেন আরো দু’জন নির্যাতিতা ও একজন দোভাষী।

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যার মামলায় শুনানিতে অংশ নিতে তারা সেখানে গিয়েছেন। হাসিনা বেগমের দৃপ্ত কন্ঠ। তাতে ক্ষোভ ঝরে পড়ছে।

সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে তিনি বলেছেন, তারা আমার সঙ্গে, আমার আত্মীয়দের সঙ্গে ও আমার বন্ধুদের সঙ্গে এসবই করেছে। আমি তাদের চোখে চোখ রেখে এ কথা বলতে পারবো। তাদের চোখের ওপর তাকিয়ে বলতে পারবো। কারণ, আমি মিথ্যা বলছি না।

হেগে হোটেলকক্ষে অবস্থানকালে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে হাসিনা বেগম আরো বলেন, আমার কাছে এখন খুব ভাল লাগছে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী আমাদের বহু নারীকে ধর্ষণ করেছে। আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাহায্য চাই, যেন আমরা ন্যায়বিচার পাই।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর দিয়ে বলছে, আজ সোমবার থেকে শুরু হতে যাচ্ছে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে মামলার শুনানি। এর প্রাক্কালে রোহিঙ্গা সম্প্রদায় ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করছেন। এ মামলায় নৃশংসতা চালানোর জন্য সেনাবাহিনীর পক্ষ অবলম্বন করতে পারেন অং সান সুচি। তার দেশের বিরুদ্ধে নভেম্বরে আইসিজেতে মামলা করে গাম্বিয়া। এতে দাবি করা হয়, ১৯৪৮ সালের জেনোসাইড কনভেনশনে যে বাধ্যবাধকতা আছে তা লঙ্ঘন করেছে মিয়ানমার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মিয়ানমার হলো তৃতীয় দেশ যাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলা হলো এই আদালতে।

রয়টার্স লিখেছে, তিন দিনের শুনানিতে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অং সান সুচি আদালতে গণহত্যার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করবেন বলেই মনে করা হচ্ছে। তিনি যুক্তি দেখাতে পারেন যে, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের হামলার জবাবে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে নেমেছিল সেনারা।

এই শুনানি হবে আইসিজের ১৭ বিচারকের প্যানেলে। তবে তারা গণহত্যার মুল অভিযোগ নিয়ে শুনানি করবেন না। গাম্বিয়ার অনুরোধ আদালত যেন এমন একটি রায় দেন যে, মাত্রা ছাড়িয়ে যায় এমন সব কর্মকান্ড বন্ধ করতে হবে মিয়ানমারকে। গাম্বিয়া আদালতে যুক্তি তুলে ধরবে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী তাদের ‘অপারেশন ক্লিয়ারেন্সে’র সময় ব্যাপক ও পর্যায়ক্রমিক নৃশংসতা চালিয়েছে ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে। এটাকে গণহত্যা হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা জাতিকে পুরোপুরি অথবা অংশবিশেষকে ধ্বংস করে দিতে গণহত্যা চালানো হয়েছে। এক্ষেত্রে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে গণহত্যা, ধর্ষণ, অন্যান্য যৌন নির্যাতন, তাদের গ্রামগুলোতে অগ্নিসংযোগ, কখনো ঘরের ভিতর আটকে রেখে তাতে আগুন দেয়া হয়েছে। এ কারণে বাধ্য হয়ে ২০১৭ সাল থেকে কমপক্ষে ৭ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে বাংলাদেশের আশ্রয়শিবিরে গাদাগাদি করে অবস্থান করছে।