ভোটকেন্দ্র দখল নিয়ে এমপি নদভীর বক্তব্যে তোলপাড়

ভোটকেন্দ্র দখল নিয়ে চট্টগ্রাম-১৫ আসনের সংসদ সদস্য নেজামুদ্দিন নদভীর দেয়া একটি বক্তব্যে তোলপাড় তৈরি হয়েছে।

এমপি নদভীর এমন বক্তব্যে আসন্ন চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বিএনপি প্রার্থীসহ আরও অনেকেই।

তারা বলছেন, একজন এমপি হয়ে প্রকাশ্য সভায় তিনি এসব বলতে পারেন না। এটি নির্বাচন আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মোছলেম উদ্দিনের বাসায় গত বুধবার রাতে এক সভায় এমপি নদভী বক্তব্য রাখেন।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের গত নির্বাচনে নদভী কীভাবে কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণে নেন তার বিবরণ দেন। এ বক্তব্যের ভিডিও এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।

ভিডিওতে নদভীকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি এমনভাবে কেন্দ্রগুলো দখলে নিয়েছিলাম যে লোকজন বলাবলি করছিল, নদভী সাহেব মাওলানা হয়েও গুণ্ডা-সন্ত্রাসীর মতো করে (কেন্দ্র দখল) নিয়ে নিলেন। তারা বলেছে, ওনাকে আলেম মনে করতাম কিন্তু কাজ করেছেন একেবারে সন্ত্রাসীর মতো।’

গত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগের প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দীনের পক্ষে নগরীর বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র দখলের অভিযোগে উঠেছিল। ৮০ শতাংশ কেন্দ্র দখল করে ক্ষমতাসীনদের ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ এনে ওই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিলেন বিএনপিসমর্থিত মেয়র প্রার্থী মনজুর আলম।

তবে এ ধরনের বক্তব্য দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নেজামুদ্দিন নদভী।

তিনি বলেন, ‌‌‌ ‘এসব ভুয়া কথা। এরকম কোনো বক্তব্যই আমি দিইনি। আমি মামলা করব।’

‌ ‘৬০টি (বক্তব্যে সাতটি বলেছেন) কেন্দ্র কী আমি একা দখল করতে পারব? করলে প্রার্থী আর অন্যরা কী করবে? সিটি নির্বাচনে আমাকে ছয়টি কেন্দ্রের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। আমি দায়িত্ব পালন করেছি মাত্র। দখল বা নিয়ন্ত্রণের কোনো প্রশ্নই আসে না।’

এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোছলেম উদ্দিন আহমেদ বলেন, এমপি নদভী সাহেব বক্তব্য দিয়েছেন। সেটি ওনার নিজস্ব বক্তব্য। নির্বাচনী সভায় উদ্দীপনা বাড়াতে এ রকম বক্তব্য হয়েই থাকে। তবে সেটি দল বা প্রার্থীর পক্ষের কোনো বক্তব্য নয়। আমি মনে করি আগামী ১৩ জানুয়ারি চট্টগ্রাম-৮ আসনে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ হবে। সবাই ভোট দেবে। কোনোরকম বিশৃঙ্খলা হবে না।

এদিকে চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে কেন্দ্র দখল করে নৌকার পক্ষে ভোট গ্রহণের নির্দেশনা দেয়ার একটি সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর নির্বাচন কমিশনে (ইসি) এর ভিত্তিতে অভিযোগ দায়ের করেছেন ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী আবু সুফিয়ান।

বিএনপির মনোনীত প্রার্থী আবু সুফিয়ান বলেন, গত সংসদ নির্বাচন ও সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন নিয়ে বরাবরই আপত্তি ছিল বিএনপির। তাদের দাবি ছিল সরকারদলীয় প্রার্থী জোর করে কেন্দ্র দখল করে ভোট ডাকাতি করে নির্বাচিত হয়েছে। যদিও বা সরকার পক্ষ থেকে তা বারবার অস্বীকার করা হয়েছিল।

এবার চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনেও ভোট চুরির পরিকল্পনা করছেন তারা। একজন এমপি হয়ে প্রকাশ্য সভায় তিনি এসব বলতে পারেন না। এটি নির্বাচন আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

এছাড়া এমপি নদভীর এমন বক্তব্যে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) প্রার্থী এসএম আবুল কালাম আজাদ, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের প্রার্থী সৈয়দ মোহাম্মদ ফরিদ আহমদ, স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ এমদাদুল হক আপেল ও ন্যাপের বাপন দাশগুপ্ত।

প্রসঙ্গত সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী একসময় জামায়াতে ইসলামী পরিচালিত আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের (আইআইইউসি) অধ্যাপক ছিলেন।

পরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা বাড়ে এবং জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয়। তিনি ২০১৪ ও ২০১৮ সালে সাতকানিয়া-লোহাগাড়া থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।