‘আয়াতুল কুরসি’ পড়ে মাঠে নামেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত ফুটবলার হামজা

হামজা দেওয়ান চৌধুরী, বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত ইংলিশ ফুটবলার। বাংলাদেশের হবিগঞ্জের বাহুবল থানার স্নানঘাট এলাকার সম্ভ্রান্ত দেওয়ান পরিবারের ছেলে হামজা। মা বাংলাদেশি হলেও বাবা জ্যামাইকান। জন্ম ইংল্যান্ডে।

তিনি খেলেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব লেস্টার সিটির হয়ে। এগুলো পুরনো কথা। কেননা, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত হওয়ায় সম্প্রতি বাংলাদেশে তিনি খুবই আলোচিত। এরই মধ্যে তার বিষয়ে বিস্তারিত জেনে গেছেন এদেশের মানুষ।

তবে এবার মাঠের পারফম্যান্স দিয়ে আলোচনায় এসেছেন হামজা। নতুন বছরের শুরুতে প্রিমিয়ার লিগে গোল পেলেন তিনি। লেস্টারের হয়ে তিন বছরের ক্যারিয়ারে এটি তার প্রথম গোল।
লেস্টার সিটির সিনিয়র দলে ২০১৭-১৮ মৌসুমে প্রথম সুযোগ পান হামজা। দলে খেলেন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে। এই পজিশন থেকে গোল করাটা কষ্টসাধ্য। তবে বৃহস্পতিবার নিউক্যাসল ইউনাইটেডের বিপক্ষে গোলের দেখা পান হামজা। ম্যাচে ৩-০ গোলের জয় পায় লেস্টার। আগের দুই মৌসুমে দলে অনিয়মিত ছিলেন হামজা। তবে এই মৌসুমে কোচ ব্রেন্ডন রজার্স নিয়মিত মাঠে নামাচ্ছেন তাকে।

নিউক্যাসলের বিপক্ষে ৭৭তম মিনিটে জেমস ম্যাডিনসনের বদলি হিসেবে মাঠে নামেন হামজা। মাঠে নামার দশম মিনিটে নিউক্যাসলের জালে শেষ গোলটি করেন হামজা। প্রায় ২০ গজ দূর থেকে শট করেন তিনি। ডি-বক্সের বাইরে থেকে নেয়া অসাধারণ শটটি ক্রসবারের নিচের অংশে লেগে জালে জড়ায়। লেস্টারের জার্সিতে ৩৭তম ম্যাচে এসে গোলের সূচনা করলেন হামজা চৌধুরী।

হামজার প্রথম গোলের পর লেস্টারের কোচ ব্রেন্ডন রজার্স বলেন, ‘হামজা চৌধুরী প্রথম গোল করায় আমরা সবাই খুশি। ও এখানকার ‘লোকাল বয়’। যে লেস্টারকে ভালোবাসে।’ লেস্টারের এক সমর্থক সিমন ইটন বলেন, ‘হামজার জন্য আমরা খুবই আনন্দিত। কি অসাধারণ এক গোল! কুর্ণিশ গ্রহণ করবেন হামজা।’ আর নিজের গোল নিয়ে হামজা বলেন, ‘স্বপ্ন সত্যি হলো আমার। সাত বছর ধরে এই ক্লাবের সঙ্গে আছি। প্রতিপক্ষের দর্শকের সামনে গোল করাটা বিশেষ কিছু।’

এর আগে লেস্টারের দ্বিতীয় বিভাগের দলের হয়ে একটি গোল করেছিলেন হামজা। ২০১৫-১৬ মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগের চ্যাম্পিয়ন হয় লেস্টার সিটি। সে বছর ক্লাবটির দ্বিতীয় বিভাগের দলে প্রথমবার সুযোগ পান এই সিলেটি ফুটবলার। দ্বিতীয় বিভাগে ৪৮ ম্যাচ খেলেছেন হামজা। এর মধ্যে ২০১৭ সালের ২৪শে এপ্রিল রিডিংয়ের বিপক্ষে গোল পান হামজা চৌধুরী। গায়ে এখনো ইংল্যান্ডের জাতীয় দলের জার্সি চাপাননি। তবে তিনি ইতোমধ্যে ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব-২১ দলের হয়ে ৭টি ম্যাচ খেলেছেন। ইংল্যান্ডের রাডারেও রয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত এই ফুটবলার।

বর্তমানে মায়ের সঙ্গে মিড ইস্টল্যান্ডে থাকেন হামজা। হামজা ব্রিটিশ হলেও বাংলাদেশিদের মতো অনর্গল বাংলায় কথা বলতে পারেন। তার মা তাকে বাংলাদেশের পরিবেশে বড় করেছেন।

হামজার ভাষ্যমতে ২০ বারের অধিক বাংলাদেশে আসা হয়েছে তার। সর্বশেষ এসেছেন চার বছর আগে। পেশাদার ফুটবলে যুক্ত হওয়ার পূর্বে।

হামজা মুসলিম ধর্ম অনুসারী। নিয়মিত পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কুরআন শরিফ পাঠ করেন। একবার বিবিসিকে এক সাক্ষাৎকারে হামজা জানিয়েছিলেন, প্রতিটি ম্যাচে মাঠে নামার আগে তিনি ‘আয়াতুল কুরসি’ পাঠ করে নামেন।