ভারতের দিল্লিতে জওয়াহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ে রাতের অন্ধকারে মুখোশধারী বহিরাগতদের হামলাকে ‘ফ্যাসিস্ট সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ বলে চিহ্নিত করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তার বিপক্ষের দল কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপির পশ্চিমবঙ্গের সভাপতি দিলীপ ঘোষ ওই হামলা ‘যৌক্তিক’ ছিল বলে পাল্টা মন্তব্য করেছেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, রবিবার সন্ধ্যায় একদল বহিরাগত মুখোশ পরে রড, লাঠি নিয়ে জেএনইউ ছাত্র সংসদের সভানেত্রী ঐশী ঘোষসহ আর অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থীর ওপর হামলা চালায়। হামলায় অন্তত ৩০ জন মারাত্মক আহত হয়। এছাড়া কয়েকজন শিক্ষকও হামলার শিকার হন।
অভিযোগ রয়েছে, বিজেপি সমর্থিত ছাত্র সংগঠনের সদস্যরাই হামলার ঘটনায় জড়িত। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় পুলিশ ও প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করেছিল। অন্যদিকে বিজেপির পাল্টা অভিযোগ, প্রথমে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে।
হামলার এই ঘটনার ভারতের সর্বত্র প্রতিবাদের ঝড় ওঠেছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দোষীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন করছেন। জেএনইউর সাবেক শিক্ষার্থী অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ী অভিজিত হামলার ঘটনায় সমালোচনা করে বলেছেন, ‘আমার মনে হয় বিশ্বের দরবারে দেশের ভাবমূর্তি নিয়ে যে ভারতীয়রা সহানুভূতিসম্পন্ন, তাদের চিন্তিত হওয়া উচিত। জার্মানি যখন নাৎসি জমানায় রুপান্তরিত হচ্ছিল, সেই সব বছরগুলির ছায়াই যেন দেখা যাচ্ছে।’
১৯৮৩ সালে নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধ করার কারণে অভিজিতকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। ওই ঘটনায় দশ দিন কারাগারেও ছিলেন তিনি। ফলে জেএনইউর রাজনীতির সঙ্গে তিনি পরিচিত।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেন, ‘আমি আমার রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছি ছাত্র রাজনীতি দিয়েই। আমি ছাত্র রাজনীতিটা খুব ভাল ভাবে জানি। গণতন্ত্রের ওপরে যে রকম ভয়ঙ্কর আঘাত হানছে, কেউ মুখ খুললেই যেভাবে পাকিস্তানি বলে দাগিয়ে দিচ্ছে, সে রকম ভারতে কখনও হয়নি।’
ভারতের অনেক রাজনীতিকই জেএনইউতে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল এক টুইট বার্তায় লিখেছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভারতের ভবিষ্যৎ। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরেই যদি তারা অনিরাপদ থাকে, তাহলে তারা কোথায় নিরাপদ থাকবে?’
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা নিকট জেএনইউর এক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই জেএনইউতে বুদ্ধিবৃত্তিক সংকট তৈরির চেষ্টা চলছে। কারণ ভারতে বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চায় পথিকৃৎ জেএনইউ। সম্প্রতি অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ী অভিজিৎ, অর্থমন্ত্রী, পররাষ্ট্র মন্ত্রীসহ দেশের অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। বর্তমানে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন থেকে বিরত রাখার উদ্দেশ্যেই রাতের অন্ধকারে আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে।’
তবে যাদের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ উঠেছে সেই বিজেপিও এক টুইট বার্তায় ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর প্রত্যেকেই হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত পুলিশ কাউকে আটক করতে পারেনি।
অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে হামলার ঘটনাকে ‘যৌক্তিক’ বলে দাবি করেছেন বিজেপির পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, ‘এ দেশে কনিউনিস্টদের মারা শুরু হয়েছে। মনে হয় এটা ওদের পাওনা আছে। কারণ ওরা যা আচরণ করেছে, তাতে এটা ওদের পাওনা। হিসাব বরাবর হচ্ছে। জেএনইউ কাদের আখড়া? ওখানে মারপিট হওয়া অস্বাভাবিক নয়। শিক্ষাঙ্গন মারামারির জায়গা নয়। কিন্তু কে আমদানি করেছে? কমিউনিস্টরা আমদানি করেছে। এসএফআই-কংগ্রেস আমদানি করেছে।’