ই-পাসপোর্ট চালু হচ্ছে বুধবার

e passport

আগামী ২২ জানুয়ারি বুধবার উদ্বোধন করা হচ্ছে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ই-পাসপোর্টের উদ্বোধন করবেন। ওইদিন প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর হাতে ই-পাসপোর্ট তুলে দেয়ার কথা রয়েছে।

রোববার দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এ সব তথ্য জানান। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর প্রাথমিকভাবে রাজধানীর আগারগাঁও, উত্তরা ও যাত্রাবাড়ী থেকে ই-পাসপোর্ট সরবরাহ করা হবে। এছাড়াও বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ৭২টি আঞ্চলিক ও বিভাগীয় অফিসে এবং বাংলাদেশস্থ ৮০টি বৈদেশিক মিশনে পর্যায়ক্রমে এই কার্যক্রম চালু করা হবে। ই-পাসপোর্টে ও স্বয়ংক্রিয় বর্ডার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনায় বর্তমানে প্রচলিত এমআরপিসমূহকে সম্পূণরুপে প্রতিস্থাপিত না করা পর্যন্ত ই-পাসপোর্টের পাশাপাশি এমআরপির ব্যবহার চলমান থাকবে।

সারাদেশে কবে থেকে চালু হবে- জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা পর্যায়ক্রমে ২০২০ সালের মধ্যে সব জায়গায় করতে পারবো। ই-পাসপোর্ট বহিঃবিশ্বে বাংলাদেশি পাসপোর্টের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করবে এবং পাসপোর্টের নিরাপত্তা অধিকতর নিশ্চিতকরণসহ ই-পাসপোর্টের মাধ্যমে বিদেশ ভ্রমণ ও ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া সহজ হবে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ই-পাসপোর্টের চিপে পাসপোর্টধারীর বায়োগ্রাফিক ও বায়োমেট্রিক তথ্যাদি সিল্ড অবস্থায় সুরক্ষিত থাকবে। ডিজিটাল সিগনেচার প্রযুক্তির সাহায্যে ই-গেটের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৩০ সেকেন্ডে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে পাসপোর্টধারীর প্রকৃত তথ্য ও ফেসিয়াল রিকগনিশন যাচাই করা যাবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ই-পাসপোর্ট প্রবর্তনে বাংলাদেশ পাসপোর্টের নিরাপত্তা আরও বৃদ্ধি পাবে এবং ই-গেট ব্যবহার করে যাত্রীগণ সহজ ও স্বাচ্ছন্দে দেশে-বিদেশে ভ্রমণ করতে পারবে। এ ব্যবস্থা বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ পাসপোর্টের মান আরও উন্নত হবে এবং গ্লোবাল পাসপোর্ট পাওয়ার র‌্যাংকিংয়ে পাসপোর্টের মান বাড়বে। ফলে বাংলাদেশি নাগরিকের জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ভিসা পাওয়া সহজতর হবে, যা আমাদের জাতীয় মর্যাদা বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে প্রথম ই-পাসপোর্ট চালু করা হচ্ছে এবং ই-পাসপোর্ট চালুর ক্ষেত্রে ১১৯তম বলে জানান তিনি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের আওতাধীন ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর সেনাবাহিনীর সহযোগীতায় জার্মান কোম্পানী ভেরিডোস জিএমবিএইচ এই ই-পাসপোর্ট ও স্বয়ংক্রিয় বর্ডার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

২০০৮ সালে নির্বাচনী এজেন্ডায় প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের ঘোষণার পর ২০১০ সালে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) ও মেশিন রিডেবল ভিসা (এমআরভি) চালু হয়। আন্তর্জাতিক চলাচলের ক্ষেত্রে অধিকতর নিরাপত্তা সংরক্ষণ এবং আন্তঃসীমান্ত চলাচলকে আরও সহজ, ঝামেলাহীন ও সময়-সাশ্রয়ী করতে যুগের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এবং উন্নত দেশের কাতারে জাতীয় অবস্থান ও মর্যাদা সুসংহত করার লক্ষ্যে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট প্রবর্তন ও ই-গেট চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করে সরকার।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা (আইকাও) এর ঘোষণা অনুযায়ী ২০২৫ সালের ২৪ নভেম্বরের পর হাতে লেখা পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশ ভ্রমণ করা যাবে না। এ ঘোষণাটি আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ ছিল। প্রধানমন্ত্রীর সময়োপযোগী সঠিক দিক নির্দেশনায় আমরা নির্ধারিত সময়ের আগেই প্রায় ৮০ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশিসহ এক কোটি ২৪ লাখ ৪৮ হাজার ৮৯৭টি এমআরপি প্রদান করতে সক্ষম হয়েছি। সঠিক সময়ে এমআরপি প্রদানের ফলে একজন বাংলাদেশীকে দেশে ফেরত আসতে হয়নি এবং কারো বিদেশ যাওয়া বন্ধ হয়নি।

কীভাবে পাওয়া যাবে ই-পাসপোর্ট
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ই-পাসপোর্টের আবেদনপত্র অনলাইনে অথবা পিডিএফ ফরমেট ডাউনলোড করে পূরণ করা যাবে। এতে কোনো ছবি এবং কোনো ধরনের কাগজপত্র সত্যায়নের প্রয়োজন নেই। প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) এবং অপ্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন সনদপত্রসহ বাবা-মায়ের এনআইডির কপি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আবেদনপত্র গ্রহণের সময় হাতের ১০ আঙ্গুলের ছাপ, ছবি ও চোখের আইরিশ ফিচার নেয়া হবে। আবেদন করার বিস্তারিত নিয়মাবলী অধিদপ্তরের ওয়েব সাইটে দেওয়া হয়েছে। ই-পাসপোর্টের ক্ষেত্রেও পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রয়োজন হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমরা অনলাইনে ভেরিফিকেশন করার প্রচেষ্টা নিয়েছি। সেটা অবশ্যই সফল করবো।

সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. শহিদুজ্জামান জানান, অতি জরুরি ক্ষেত্রে ই-পাসপোর্ট করার জন্য প্রি-পুলিশ ভেরিফিকেশন নিজ উদ্যোগে করে নিয়ে যেতে হবে।

ই-পাসপোর্টের মেয়াদ, বিতরণের সময় ও ফি
সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. শহিদুজ্জামান জানান, ৪৮ পৃষ্ঠা ৫ বছরের জন্য সাধারণ ফি (১৫ দিন) সাড়ে তিন হাজার টাকা, জরুরি (৭ দিন) সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা এবং অতি জরুরি (২ দিন) সাড়ে সাত হাজার টাকা। আর ১০ বছরের জন্য সাধারণ (১৫ দিন) ফি পাঁচ হাজার টাকা, জরুরি (৭ দিন) সাত হাজার টাকা এবং অতি জরুরি (২ দিন) নয় হাজার টাকা। ৬৪ পৃষ্ঠার পাঁচ বছরের সাধারণ (১৫ দিন) ফি সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা, জরুরি (৭ দিন) সাড়ে সাত হাজার টাকা এবং অতি জরুরি (২ দিন) সাড়ে ১০ হাজার টাকা। আর ১০ বছরের জন্য সাধারণ (১৫ দিন) সাত হাজার টাকা, জরুরি (৭ দিন) নয় হাজার টাকা এবং অতি জরুরি (২দিন) ১২ হাজার টাকা। সব ফি’র সঙ্গে ১৫ শতাংশ ভ্যাট যোগ হবে বলে জানান কর্মকর্তারা।

আধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ ই-পাসপোর্ট বাংলাদেশের নাগরিকদের বিদেশ গমনকে আরও সহজ ও সাবলিল করবে এবং দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে গতিশীল করবে। ই-পাসপোর্টের মাধ্যমে বহিঃবিশ্বে বাংলাদেশ পাবে এক অনন্য উচ্চতা এবং ই-পাসপোর্টের গ্রাহক হিসেবে বাংলাদেশের নাগরিকরাও বিশেষ মর্যাদা লাভ করবে বলে মনে করে সরকার।

যা লাগবে ই-পাসপোর্ট করতে
ই-পাসপোর্টের আবেদনপত্র জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বা জন্মনিবন্ধন সনদ (বিআরসি) অনুযায়ী পূরণ করতে হবে। অপ্রাপ্ত বয়স্ক (১৮ বছরের কম) আবেদনকারী, যার জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নেই, তার পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নম্বর অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে।

ওয়ারেন্ট ছাড়া কাউকেই ধরছে না পুলিশ
ওয়ারেন্ট ছাড়া কাউকে ধরা করা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, যারা ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি, যাদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট আছে, তাদের ছাড়া পুলিশ কাউকেই ধরছে না। গতকাল রোববার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে আইন-শৃংখলা সংক্রান্ত সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, নির্বাচন কমিশনের অধীনে নিরাপত্তা বাহিনী ন্যাস্ত হয়েছে। অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নিরাপত্তা বাহিনী তৈরি আছে। আমাদের পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থাসহ সবাই প্রস্তুত। সবকিছু নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে, তাদের নির্দেশনায় অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন আমরা আশা করি।

তিনি বলেন, আশা করছি নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে সুষ্ঠু একটি নির্বাচন হবে। নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আইন-শৃংখলা বাহিনী প্রস্তুত আছে। গোয়েন্দা সংস্থা, নিরাপত্তা বাহিনী যেখানে যা প্রয়োজন, আমাদের নির্বাচন কমিশন যেভাবে যা দেবে আমরা তৈরি আছি। আমাদের সুপারিশগুলো নির্বাচন কমিশনকে দিচ্ছি। সে অনুযায়ী বাকি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিভিন্ন স্থানে কাউন্সিলর প্রার্থীসহ হয়রানিমূলক গ্রেফতারের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তালিকাভুক্ত আসামি যাদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট হয়ে গেছে তাদের ছাড়া পুলিশ কাউকে ধরছে না। ওয়ারেন্ট ছাড়া কাউকেই ধরা হচ্ছে না।

ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র সম্পর্কে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র এখনও কোনোটাই মনে হচ্ছে না। যদি থাকে নির্বাচন কমিশন থেকে লিস্ট আসবে, সে অনুযায়ী নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে।

বইমেলার নিরাপত্তা নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। যেখানে যা কিছু প্রয়োজন সবকিছু ব্যবস্থা রয়েছে। আনসার, পুলিশ, র‌্যাব যা প্রয়োজন হয় প্রস্তুত আছে। যদি প্রয়োজন হয় বিজিবিও প্রস্তুত থাকবে।