আইসিজের আদেশ প্রত্যাখ্যান করেছে মিয়ানমার

নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) বৃহস্পতিবারের দেওয়া আদেশ প্রত্যাখ্যান করেছে মিয়ানমার।

বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় আইসিজে বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের প্রতি চার দফা অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন, যেগুলো মিয়ানমারকে বাধ্যতামূলকভাবে মেনে চলতে হবে। তারা এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবে না।

তবে আইসিজের আদেশে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, এই আদেশে পরিস্থিতির বিকৃত চিত্র উপস্থাপন করা হয়েছে।

দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, তাদের গঠিত ইনডিপেনডেন্ট কমিশন অব ইনকোয়ারি (আইসিওই) রাখাইনে কোনো ধরনের গণহত্যার আলামত খুঁজে পায়নি। তবে রাখাইনে যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হয়েছে বলে স্বীকার করেছে দেশটির ‘স্বাধীন কমিশন’।

মিয়ানমারের বর্তমান সরকারে গঠন করা আইসিওই কমিশনের বিরুদ্ধে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত ও সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ আছে। মানবাধিকার সংগঠনেরও সমালোচনা করেছে মিয়ানমার। দেশটি বলছে, মানবাধিকার সংগঠনের নিন্দার কারণে কিছু দেশের সঙ্গে মিয়ানমারের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত ও রাখাইনের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যায় চালানোর অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলায় বৃহস্পতিবার ঘোষণা করা অন্তর্বর্তীকালীন রায়ে দেশটির প্রতি যে চার দফা আদেশ দেওয়া হয় সেগুলো হলো- ১. রাখাইনে বসবাসরত যে সাড়ে ছয় লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম ঝুঁকিতে রয়েছে তাদের সুরক্ষা দেবার জন্য মিয়ানমার সরকারকে কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে হবে। ২. মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর লাগাম টেনে ধরতে হবে। সেনাবাহিনী কিংবা অন্য যে কোনো ধরণের নিরাপত্তা বাহিনী যাতে গণহত্যা না চালায় কিংবা উস্কানি না দেয় সেজন্য সব ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ৩.রোহিঙ্গা গণহত্যা সংক্রান্ত যেসব অভিযোগ এসেছে, সে সংক্রান্ত তথ্য-প্রমাণ সংরক্ষণ করতে হবে। ৪. রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য মিয়ানমার কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে- এ বিষয়ে আগামী চার মাসের মধ্যে একটি রিপোর্ট উপস্থাপন করতে হবে এবং এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার পর প্রতি ছয় মাসে একটি করে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। এসব প্রতিবেদন গাম্বিয়ার কাছে তুলে ধরা হবে।

২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সহিংস অভিযানে রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো হত্যা, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের মুখে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিকভাবে চেষ্টা চালিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত মিয়ানমার কাউকে ফেরত নেয়নি।

এরপর রোহিঙ্গাদের ওপরে মিয়ানমারের চালানো নৃশংসতাকে গণহত্যা আখ্যা দিয়ে গত বছরের ১১ নভেম্বর আইসিজেতে মামলা দায়ের করে গাম্বিয়া। আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে মামলা করার প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল রোহিঙ্গাদের ওপর যে নির্যাতন হচ্ছে, সে ব্যাপারে কিছু করার জন্য বিশ্ববাসীকে তাগিদ দেওয়া।

নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগের পিস প্যালেসে গত বছরের ১০ থেকে ১২ ডিসেম্বর মামলার শুনানি চলে। ১০ ডিসেম্বর গাম্বিয়ার প্রতিনিধি দল আদালতে গণহত্যার বিষয়ে তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করে। শুনানিতে গাম্বিয়ার পক্ষে মামলার প্রতিনিধিত্ব করেন দেশটির বিচারমন্ত্রী আবুবাকার তাম্বাদু।

পরদিন ১১ ডিসেম্বর মিয়ানমারের নেতৃত্ব দেন মিয়ানমারের সরকার প্রধান অং সান সু চি। সেখানে তিনি তার দেশের বিরুদ্ধে আনা গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেন। ১২ ডিসেম্বর মামলার শুনানি শেষ হয়।