শিক্ষক ও ব্যবসায়ীকে মারপিটের অভিযোগ ত্রিমোহিনী ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে

যশোরের কেশবপুর উপজেলার ত্রিমোহিনী ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা এস এম আনিসুর রহমান আনিসের বিরুদ্ধে এক শিক্ষক ও এক ব্যবসায়ীকে তার বাহিনী দিয়ে তুলে নিয়ে মারপিট করে আহত করার অভিযোগ উঠেছে।

চেয়ারম্যানের বাড়ির এলাকার এক স্কুল ছাত্রকে মাদক সেবন করতে বাধা দেয়ায় ওই ছাত্রের পক্ষ হয়ে চেয়ারম্যান তাদেরকে মারপিট করেন বলে আহতরা জানান।

এবিষয়ে রাতেই উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে মৌখিকভাবে জানানো এবং পরদিন শুক্রবার লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। শিক্ষককে মারপিটের ঘটনায় ক্ষোভে ফুসে উঠেছে কেশবপুরের শিক্ষক সমাজ।

শিক্ষক নেতারা জানান, ওই চেয়ারম্যানের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া না হলে তারা মানববন্ধনসহ কঠোর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবেন। ইতিপূর্বে, ওই চেয়ারম্যানের হাতে সাতবাড়িয়া ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাকে মারপিট করে আহত করার অভিযোগ রয়েছে। একপর্যায়ে তিনি ইয়াবাসহ পুলিশের হাতে আটক হয়ে জেল খেটেছেন। তারপরো তার অত্যাচার নির্যাতনের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। তার মতের বিরুদ্ধে গেলেই সরকারী কর্মকর্তা, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক সহকর্মী ও সাধারণ মানুষকের তিনি নির্দিধায় মারপিট করে চলেছেন।

জানা গেছে, উপজেলা রঘুরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বুড়িহাটি গ্রামের আব্দুল লতিফ ও তার শ্যালক ত্রিমোহিনী ইউনিয়নের গোপালপুর বাজারের কপোতাক্ষ ফার্মেসীর প্রোপাইটর নজরুল ইসলামকে ত্রিমোহিনী ইউপি চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান আনিস বৃহস্পতিবার রাতে মারপিট করে আহত করেছেন।

মারপিটের শিকার নজরুল ইসলাম জানান, বরনডালি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শেণির ছাত্র চাঁদড়া গ্রামের আশিকুজ্জামান, রফিকুল ইসলাম ও সোহাগ দুটি মেয়ে নিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে গোপালপুর গ্রামের স্লুইস গেটের পাশে রাস্তার উপর বই হাতে নিয়ে বসে নেশা করছিলো। তাদের বাধা দিলে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ভাবে হুমকি দিয়ে চলে যায়। পরবর্তীতে চেয়ারম্যানের পক্ষে মহিবুল্লাহ নামে এক ছেলের নেতৃত্বে একদল যুবক আমার বাড়িতে এসে আমাকে ও আমার ভগ্নিপতি আব্দুল লতিফকে জোর করে চেয়ারম্যানের কাছে ধরে নিয়ে যায়। ত্রিমোহিনী বাজারে যাবার সাথে সাথেই চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান আনিস আমাদেরকে কোন কথা না শুনেই মারপিট শুরু করে। এসময় তার সাথে থাকা একদল সন্ত্রাসীরা আমাদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে ব্যাপক মারপিট করে। চেয়ারম্যান বলেন, ‘চাঁদড়া গ্রামের ছেলেরা যা খুশি করবে তুই বাধা দিলি কেন’ একথা বলেই সে মারপিট শুরু করে। মূলত নেশা করতে বাধা দেয়ার চেয়ারম্যান ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদের মারপিট করেছেন।

মারপিটে গুরুতর আহত রঘুরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুল লতিফ জানান, আমার শ্যালককে চেয়ারম্যান ডেকে পাঠিয়েছে শুনে আমি সাথে গেছিলাম। স্থানীয় ইউপি সদস্যর মোটরসাইকেলে করে সেখানে গেছি। ত্রিমোহিনী বাজারে পৌছিয়ে আমি চেয়ারম্যানকে সালাম দি, সাথে সাথে চেয়ারম্যান কোন কথা না বলেই আমাকে কিল ঘুষি মেরে রক্তাক্ত জখম করে। এসময় পাশে থাকা আমার শ্যালক নজরুল ইসলাম কেও চেয়ারম্যানসহ তার সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা মারপিট করে আহত করেছে। এঘটনায় উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দদের নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে লিখিত অভিযোগর করা হয়েছে।

এবিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হুদা বাবু বলেন, ত্রিমোহিনী ইউপি চেয়ারম্যান আমাদের এক শিক্ষককে মারপিট করেছেন। খবর পেয়ে আমরা আহত ওই শিক্ষককে নিয়ে রাতেই উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে দেখা করে মৌখিক অভিযোগ দিয়েছি। এবিষয়ে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। ওই চেয়ারম্যানের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহন করা না হলে শিক্ষক সমাজ মানববন্ধন সহ কঠোর আন্দোলন করতে বাধ্য হবে।

সরেজমিনে ও এলাকাবাসীরা জানান, উপজেলার ত্রিমোহিনী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান যুগ্ম আহবায়ক আনিছুর রহমান গত ২০১৬ সালে ২৮ মে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে ত্রিমোহিনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০১৭ সালের ৬ মার্চ চেয়ারম্যানের বাড়ি এলাকায় সরকারি খাস জমিতে প্রাচীর তৈরিতে বাঁধা দেয়ার ঘটনায় চেয়ারম্যান আনিস ভূমি অফিসে ঢুকে সাতবাড়িয়া ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা বিষ্ণুপদ মল্লিকের মুখ চেপে ধরে বাম কানের ভেতর মোটরসাইকেলের চাবি ঢুকিয়ে র্নিযাতন চালায় ও বেদম মারপিট করে। তিনি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়। আহত ওই কর্মকর্তার বাড়ি মনিরামপুর উপজেলার পদ্মনাথপুর গ্রামে। ওই দিন রাতে উপজেলার ত্রিমোহিনী বাজারে অভিযান চালিয়ে আনিসুর রহমানকে আটক করে ডিবি পুলিশ। এ সময় তার প্যান্টের পকেট থেকে ১২০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয় বলে পুলিশ জানায়। এ ঘটনায় ডিবি পুলিশের পিএসআই এজাজুর রহমান বাদি হয়ে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে কেশবপুর থানায় একটি মামলা করেন। যার নং-০৮।

অপরদিকে, সরকারি কাজ বাঁধা দানের অভিযোগে তহশীলদার বিষ্ণু পদ মল্লিক বাদি হয়ে চেয়ারম্যানসহ তার সহযোগী ৩ জনকে আসামী করে থানায় আরও একটি মামলা করেন। যার নং-০৭। এঘটনায় চেয়ারম্যানকে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়।

এছাড়া, ২০১৬ সালের ৭ অক্টোবর জমিজমা সংক্রান্ত সালিসের নামে চেয়ারম্যান আনিস শাহাপুর গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুস সোবহান গাজীকে ত্রিমোহিনী বাজারে প্রকাশ্যে কাঠের চলা দিয়ে পিটিয়ে পঙ্গু করে দেয়। ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে ৩ মাস চিকিৎসার পর সোবহান গাজী বাড়ি ফিরে বর্তমানে মানবেতর জীবনযাপন করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এবিষয়ে ত্রিমোহিনী ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আনিসুর রহমান আনিস জানান, একটি ঘটনা ঘটেছিল। সে ঘটনায় একজনকে মারতে গিয়ে ভুলবসত ওই শিক্ষককে মারপিট করা হয়েছে। তারপরেও ওই শিক্ষকের কাছে ভুল শিকার করেছি। কিন্তু তিনি একটি পক্ষের ইন্ধনে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন।

তিনি আরো বলেন, আমার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ করা হচ্ছে তা সত্য নয়। চেয়ারম্যান হবার পর এলাকার শান্তি শৃংখলা বজার রাখতে গিয়ে দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটতে পারে। সেটাকে আমার প্রতিপক্ষরা পুজি করে আমার বিরুদ্ধে নানাবিধ কৃৎসা রটাচ্ছে।

এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুসরাত জাহান জানান, বিষয়টি মৌখিকভাবে শুনেছি। অফিসিয়ালি অভিযোগ পায়নি। আগামী রোববার অভিযোগ জমা হবার সম্ভাবনা রয়েছে।