তীব্র তাপদাহ পানির স্তর নেমেছে ৩৪ ফুট সুপেয় পানির হাহাকার যশোরে

যশোরে তীব্র তাপদাহে গরমের ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে গেছে ৩৪ ফুট নিচে। যশোর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদ পারভেজ এই তথ্য জানিয়ে বলেছেন, বেশিরভাগ এলাকায় পানির স্তর নেমেছে ২৬-৩০ ফুটে। কঠিন হয়ে পড়ে নলকূপের পানি উঠানো। বৃষ্টি না হওয়ায় খাল, বিল, পুকুর শুকিয়ে কাঠ ও চৌচির হয়ে গেছে। ভূগর্ভস্থ পানিও নেমে গেছে অনেক নিচে। ফলে অগভীর-গভীর অনেক নলকূপ অকেজো হয়ে পড়েছে। খাওয়ার পানির সংকট দেখা দিয়েছে তীব্রতর। সেচের জন্যও বেকায়দায় পড়েছেন কৃষক।

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) সূত্রে জানা যায়, জেলায় গভীর নলকূপ, সাবমার্সিবল ও তারা টিউবওয়েলের সংখ্যা প্রায় ৬ হাজার। এসব নলকূপ দিয়ে প্রায় ৩০ হাজার হেক্টর আবাদি জমিতে পানি দেওয়া হয়। এ ছাড়া, ৬৩ হাজার ৭৯৩টি শ্যালো ও টিউবওয়েল দিয়ে ১ লাখ ২৩ হাজার ৪৮২ হেক্টর জমিতে সেচ দেন কৃষক। এর বাইরে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, এলজিইডি, পৌরসভার আওতায় আরও কয়েক হাজার গভীর-অগভীর নলকূপ রয়েছে। এসব নলকূপ দিয়ে জমিতে সেচের পাশাপাশি লাখ লাখ মানুষের দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার হচ্ছে পানি।

বিএডিসি যশোরের যুগ্ম পরিচালক (সার) বলেন, পর্যাপ্ত পানির অভাবে ফসলের কাঙ্খিত ফলন বিঘ্নিত হয়। পর্যাপ্ত সার বা কীটনাশক দিয়ে কাঙ্খিত ফলন আশা করা যায় না।

যশোরের জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহিদ পারভেজ আরো বলেন, গত বছর যশোরে পানির স্তর নেমেছে ৩৭ ফুট। এ বছর যশোর সদর উপজেলায় ৩৪ ফুট পানির স্তর নেমেছে। যেখানে পানির স্তর ২৬ ফুটের নিচে নামলে নলকূপে পানি পাওয়া কঠিন হয়ে যায়। তারপরও সদর উপজেলায় ৩৭ ফুট নিচে নেমে গেছে পানির স্তর। বাঘারপাড়া, ঝিকরগাছা ও শার্শা এলাকায় একই অবস্থা দেখা দিয়েছে। অভয়নগর ও মণিরামপুরে পানির স্তর স্বাভাবিক পর্যায়ে আছে।

তিনি বলেন, শুধুমাত্র যশোর সদর উপজেলায় প্রায় ৬ হাজার নলকূপ, সাব মার্সিবল ও তারা টিউবয়েল রয়েছে। এ উপজেলার কয়েক এলাকায় ৩০ থেকে ৩২ ফুটের নিচে পানির উপস্থিতি দেখা গেছে। সামনে পানির স্তর আরও নামতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করেন।

যশোর পৌরসভার কর্মকর্তারা বলেছেন, যশোর শহরে বর্তমানে ১২ হাজারেরও বেশি পানির গ্রাহক রয়েছেন। এসব গ্রাহকের প্রতিদিন পানির চাহিদা ২৬ লাখ গ্যালন। এ অবস্থা চলতে থাকলে সামনে পৌর কর্তৃপক্ষ নাগরিকদের কতটুকু পানির চাহিদা পূরণ করতে পারবে তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছে।

পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী বিএম কামাল আহম্মেদ বলেন, সাধারণত ফাল্গুন মাসের শেষের দিকে এ অঞ্চলে পানির স্তর নিচে নেমে গেলেও এবার একটু আগেই পানির স্তর অস্বাভাবিকভাবে নেমে গেছে। এটি সামনে ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।

যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জি বলেন,‘নদী, খাল, পুকুর ও জলাশয় ভরাট করার কারণে পানির লেয়ার যে রিচার্জ হতো, সেটা হয় না।’

এ অবস্থা থেকে উত্তরণে উপরিভাগের জলাধার সংরক্ষণ জরুরি। সে জন্য ভরাট করা দিঘি গুলো পুনঃখনন করার উদ্যোগ নিতে হবে বলে তিনি জানান।