৫ কারণে কপাল পুড়ল মেয়র নাছিরের

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের দলীয় টিকিট পাননি বর্তমান মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন।

তার পরিবর্তে এবার মনোনয়ন পেয়েছেন দলটির চট্টগ্রাম মহানগরের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী।

নাছিরের মনোনয়ন না পাওয়া নিয়ে নগরজুড়ে চলছে চুলচেরা বিশ্নেষণ।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগে বিভক্তি, অন্তঃকোন্দলের কারণে বিরক্ত কেন্দ্র। এর পেছনে মূলত নাছিরকেই দায়ী করা হয়। গত পাঁচ বছরে তার নানা কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ফলে সব সিটি মেয়রকে তাদের পদবি অনুযায়ী মর্যাদা দিলেও নাছিরকে সেই মর্যাদা দেয়া হয়নি।

এ ছাড়া ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও তিনবারের সাবেক মেয়র প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে বিরোধ বাড়তে থাকে নাছিরের।

ফলে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের রাজনীতি বিভক্ত হয়ে পড়ে মহিউদ্দিন ও নাছির বলয়ে। দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের রাজনীতিতেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে থাকে।

দলীয় কোন্দলের জেরে গত পাঁচ বছরে নগরে নিজেদের মধ্যে খুন হয়েছেন অন্তত পাঁচ ছাত্রলীগ নেতাকর্মী। সংগঠনে এই কোন্দল জিইয়ে রাখার জন্য নাছিরকেই দায়ী করা হয়।

নাছিরের ওপর এবার আস্থা না রাখার আরও কিছু কারণ আলোচিত হচ্ছে চট্টগ্রামে। এর মধ্যে আছে আওয়ামী লীগের বিভাগীয় প্রতিনিধিসভার মঞ্চ থেকে মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রী হাসিনা মহিউদ্দিনকে নামিয়ে দেয়ার ঘটনাও একটি।

গত বছর অক্টোবরে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত ওই প্রতিনিধিসভায় মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী মঞ্চে ডেকে নেন হাসিনা মহিউদ্দিনকে। কিন্তু মঞ্চের সিট প্ল্যানে হাসিনা মহিউদ্দিনের নাম না থাকায় আ জ ম নাছির তাকে নামিয়ে দেন।

যদিও মেয়র নাছির ঘটনাটিকে ভুল বোঝাবুঝি বলে পরে দুঃখ প্রকাশ করেন।

নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন আসনের এমপির সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হওয়াও কাল হয়েছে নাছিরের জন্য। মেয়র মহিউদ্দিনের জীবদ্দশায় নগরের এমপিদের সঙ্গে একটা সময় খুব সখ্য ছিল তার। এমপিদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রেখে মহিউদ্দিনবিরোধী বলয় শক্ত করেন নাছির।

সেই নাছিরই মেয়র হওয়ার পর দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে প্রথমে দূরত্ব তৈরি করেন। এর পর নগরের অন্য এমপিদের সঙ্গেও বিরোধে জড়ান তিনি।

এ ছাড়া বন্দরকেন্দ্রিক ব্যবসা সম্প্রসারণ ও গৃহায়ণের এক প্রকৌশলীকে চড় মারার বিষয়টিও নাছিরকে বিতর্কিত করেছে বলে ধারণা রাজনীতিবিদদের।

এসব কারণে কেন্দ্রের অসন্তোষই কাল হয়েছে মেয়র নাছিরের। কেউ কেউ বলছেন, ২০১৫ সালে মহিউদ্দিন চৌধুরীর মতো একজন পোড় খাওয়া ও পরীক্ষিত রাজনীতিবিদকে বাদ দিয়ে নাছিরকে মনোনয়ন দিয়ে আওয়ামী লীগ যে প্রত্যাশার বীজ বুনেছিল, তার কানাকড়িও পূরণ করতে পারেননি নাছির।

আবার অনেকে এও বলছেন, আওয়ামী লীগ নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি করতে চাইছে, তারই ধারাবাহিকতায় মেয়র নাছির বাদ পড়েছেন। তাদের যুক্তি হচ্ছে– নাছির উন্নয়ন কম করেননি, তার জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি। ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে জনপ্রিয় মেয়র সাঈদ খোকনকে যে যুক্তিতে বাদ দেয়া হয়েছে, নাছিরও সেই যুক্তির বলি হয়েছেন মাত্র।

এদিকে মনোনয়ন না পাওয়ার বিষয়ে আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, আমি নেত্রীর এ সিদ্ধান্ত মেনে নিলাম। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী একজন যোগ্য প্রার্থী। তার জয় সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে মহানগর আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে।

তিনি বলেন, ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে ভোটের মাঠে কাজ করতে হবে। আমাদের কাজ হচ্ছে, নেত্রীর মনোনীত নৌকার প্রার্থীকে ভোটে জিতিয়ে আনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চট্টগ্রামের মেয়র পদটি উপহার দেয়াই হবে প্রধান লক্ষ্য।

এর আগে এক বার্তায় নাছির মেয়রপ্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীকে অভিনন্দন জানান এবং তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। সূত্র: যুগান্তর