দেহব্যবসায় জড়িত তরুণী ও ভিআইপি কাস্টমারদের নাম বলেছেন পাপিয়া

রাজনীতির পাশাপাশি দেহ ব্যবসায়ী নারীদের নিয়েও কারবার করতেন যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া। রমরমা এ ব্যবসার জন্য অনলাইনে ‘এসকর্ট’ নামে প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলেন তিনি। রিমান্ডের প্রথম দিনেই দেহ ব্যবসায় জড়িত সুন্দরী তরুণী ও ভিআইপি খদ্দেরদের নাম বলেছেন পাপিয়া।

যৌনব্যবসার ওয়েবসাইট ‘এসকর্ট’ এখনও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় রয়েছে। ‘এসকর্ট’টি গড়ে তোলার কয়েক বছরের মধ্যেই এটি ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে সারাদেশের বিভাগীয় শহরে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সুন্দরী তরুণী সরবরাহ করা হতো এই ওয়েবসাইট থেকে।

পাপিয়ার ‘পাপের রাজ্যে’ বিচরণ ছিল প্রশাসন থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংস্থার অনেক শীর্ষ ব্যক্তিরই। ঘনিষ্ঠতা ছিল যুব মহিলা লীগের শীর্ষস্থানীয় তিন নেত্রীর সঙ্গেও।

ওয়েস্টিন হোটেলের কর্মকর্তারাও জানত তার অপকর্ম সম্পর্কে। ধনাঢ্য ব্যবসায়ীরাও পাপিয়ার ডাকে সাড়া দিয়ে যেতেন হোটেল ওয়েস্টিনে। রিমান্ডে প্রতিদিনই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিচ্ছেন পাপিয়া।

র‌্যাবের এক কর্মকর্তা জানান, নারী‘বাণিজ্য’ করতে পাপিয়া রাজধানীর অভিজাত হোটেলগুলোয় ‘ককটেল পার্টি’র আয়োজন করতেন। এসব পার্টিতে উপস্থিত হতেন সমাজের উচ্চস্তরের লোকজন। মদের পাশাপাশি পার্টিতে উপস্থিত থাকত এসকর্ট গ্রুপের উঠতি বয়সী সুন্দরী তরুণীরা।

মদের নেশায় টালমাটাল আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে কৌশলে ধারণ করা হতো ওই তরুণীদের অশ্লীল ভিডিও। পরে ওইসব ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে বিভিন্ন সময়ে মোটা অঙ্কের অর্থ দাবি করতেন পাপিয়া। বনিবনা না হলেই ফেসবুকে ছড়িয়েও দেয়া হতো।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে র‌্যাবের এক কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেই পাপিয়ার কাছ থেকে বেরিয়ে আসছে একের পর এক মাথা ঘুরিয়ে দেয়া খবর। পাপিয়ার অপকর্মের সঙ্গীদের ধরতে এরই মধ্যে একাধিক অভিযান চালানো হয়েছে। পাপিয়ার মূল ব্যবসা ছিল উঠতি শিল্পপতি-ব্যবসায়ীসহ সমাজের উঁচুস্তরের লোকদের ব্ল্যাকমেইল করে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায়। নরসিংদী ও ঢাকার অনেক তরুণীকে চাকরির নামে তারকা হোটেলে ডেকে পার্টি গার্ল হিসেবে ব্যবহার করা হতো। তাদের করা হতো এসকর্টের সদস্য। সুন্দরীদের প্রলোভন দেখিয়ে বিত্তবানদের শয্যাসঙ্গী করতে বাধ্য করতেন পাপিয়া।

এসব কুকর্মের বেশ কিছু ভিডিও এসেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে।

জিজ্ঞাসাবাদে পাপিয়া আওয়ামী লীগের কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার নাম বলেছেন, যাদের সঙ্গে তার ‘বিশেষ সম্পর্ক’ রয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের সাবেক এক এমপির সঙ্গে তার ব্যবসায়িক সম্পর্ক নিয়েও মুখ খুলেছেন পাপিয়া।

এদিকে দুদক বলছে, পাপিয়া থেকে সুবিধা নেয়া রাজনৈতিক দলের নেতাদের তালিকা সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। তালিকা পাওয়ার পর তাদেরও নজরদারির আওতায় আনা হবে।

সূত্র জানায়, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে পাপিয়া অনেক প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার নাম ফাঁস করে দিয়েছেন। এতে অনেক রাজনৈতিক নেতার ঘুম হারাম হয়ে গেছে। পাপিয়ার কাছ থেকে কোনো কোনো নেতা অনৈতিক সুবিধা নিয়েছেন, তাদের নিয়ে দলেও কানাঘুষা চলছে। সূত্র: মানবকন্ঠ