করোনাভাইরাস: সনদ নিতে বিপাকে কুয়েতের যাত্রীরা

কুয়েতে যাওয়ার আগে নভেল করোনাভাইরাসের পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করায় বিপাকে পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

অনেকের ভিসা-টিকেট সব ঠিক থাকলেও কুয়েত দূতাবাস এবং আইইডিসিআরের আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে তাদের যাত্রা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে।

কুয়েত সরকার বলেছে, ঢাকায় তাদের দূতাবাস থেকে একটি সনদ নিয়ে তারপর সে দেশে যেতে হবে, যেখানে লেখা থাকবে ওই যাত্রী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নন।

৮ মার্চের পর ওই সনদ ছাড়া কোনো বাংলাদেশিকে সে দেশে ঢুকতে দেওয়া হবে না। আরও নয় দেশের ক্ষেত্রে এ নিয়ম প্রযোজ্য হবে।

কেউ নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কি না তা বোঝার একমাত্র উপায় রক্ত বা লালার পিসিআর (পলিমেরেজ চেইন রিঅ্যাকশন) পরীক্ষা। আর বাংলাদেশে ওই পরীক্ষার সুযোগ আছে কেবল রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট-আইইডিসিআরে।

ফলে বুধবার যারাই কুয়েত দূতাবাসে সনদের জন্য গেছেন, তাদের সেখান থেকে একটি ফরম দিয়ে পিসিআর পরীক্ষার জন্য আইইডিসিআরে পাঠানো হয়।
কিন্তু আইইডিসির থেকে তাদের জানানো হয়েছে, এ বিষয়ে তাদের কাছে কোনো নির্দেশনা আসেনি। কুয়েত দূতাবাসও তাদের কিছু জানায়নি।

এই ঠেলাঠেলির মধ্যে বিপাকে পড়েছেন বহু প্রবাসী বাংলাদেশি, যারা ছুটিতে বাড়ি এসেছিলেন। এরকম কয়েকশ মানুষকে দুপুরে মহাখালীতে আইইডিসিআরের ফটকে জড়ো হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়।

মোজাম্মেল হক নামে একজন জানান, কুয়েত সরকারের ওই নতুন নির্দেশনার কথা তিনি জানতে পেরেছেন গণমাধ্যমের খবরে।

“আমি গতকালও দূতাবাসে গিয়েছিলাম খোঁজ নিতে। তারা তখন কিছু জানাতে পারেনি। আজ সকালে আবার গিয়ে দেখি আমার মত হাজারখানেক মানুষ। আমাদের একটা ফরম দিয়ে বললো আইইডিসিআরে পরীক্ষা করাতে হবে। কিন্তু এখানে বলছে এটা নাকি তাদের দায়িত্ব না।”

জাহাঙ্গীর হোসেন নামে আরেকজন বলেন, “যাদের ৮ তারিখের পর ফ্লাইট, তারা সার্টিফিকেট কবে পাচ্ছি তা তো শিওর না। সার্টিফিকেট না পেলে কুয়েতে গিয়ে ঝামেলায় পড়ে যাব। টিকেটের সময় শেষ হলে তা ক্যান্সেল হয়ে যাবে। নতুন করে সিঙ্গেল টিকেট কাটতে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা লাগবে।”
আইইডিসিআরে আসা প্রবাসীরা জানান, প্রতিদিন কুয়েত ও ঢাকার মধ্যে সরাসরি দুটি ফ্লাইট চলে। এছাড়া ঢাকা থেকে দুবাই বা অন্য দেশ হয়েও কুয়েতে যাওয়া যায়। সব মিলিয়ে দৈনিক কমপক্ষে এক হাজার যাত্রী কুয়েতে যান।

সরকারি হিসাবে মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশ কুয়েতে প্রায় দুই লাখের মত বাংলাদেশি রয়েছেন, যারা সেখানে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত।

তাদের এ সমস্যার বিষয়ে জানতে চাইলে আইইডিসিআরের পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, তাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ না করেই কুয়েত দূতাবাস থেকে লোকজনকে পাঠানো হচ্ছে।

“আমাদের এখানে লোকজন আসছে, অনেকে ফোন করেও জানতে চাইছে। কিন্তু দুঃখজনক হল, দূতাবাস এ বিষয়ে আমাদের কিছু জানায়নি। আমাদের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগও করেনি।”

অধ্যাপক ফ্লোরা বলেন, কুয়েতের যাত্রীদের সনদ দেওয়ার বিষয়টি প্রশাসনিক প্রক্রিয়া, রোগতাত্ত্বিক নয়।
“আামাদের দায়িত্ব হচ্ছে সার্ভিলেন্স করা এবং করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত করা। যার মধ্যে কোনো লক্ষণই নেই তার জন্য এই পরীক্ষা করার কোনো প্রয়োজনই নেই। ওটা শুধু দাপ্তরিক বিষয়।”

আইইডিসিআরের পরিচালক বলেন, বিষয়টি তারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছেন। কুয়েত দূতাবাসের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হচ্ছে।

“আমাদের মন্ত্রণালয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। আমরা কুয়েত দূতাবাসের সঙ্গেও কথা বলছি। তারা আমাদের জানিয়েছে তারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে এ বিষয়ে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়ত আমাদের মন্ত্রণালয়কে বলবে। আমাদের মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।”