সিলেটে শঙ্কা বেশি যে কারণে

সিলেটের বিদেশ ফেরত প্রবাসীদের অনেকেই বাসায় থাকছেন না। কেউ অংশ নিচ্ছেন সামাজিক অনুষ্ঠানে। আবার কেউবা স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছেন। এমন দৃশ্যই ধরা পড়লো সিলেটের প্রশাসনের তদারকিতে। অথচ নিয়ম অনুযায়ী তাদের কোয়ারেন্টিনে থাকার কথা। এমনকি পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার কথাও। কিন্তু তারা মিশে যাচ্ছেন সবার সঙ্গে। আর এ ঘটনাটিকে ভয়ঙ্কর বলেছেন সংশ্লিষ্টরা তাদের কারণেই সিলেটে ছড়িয়ে পড়তে পারে ভয়ঙ্কর করোনা ভাইরাস।

১৫ই মার্চ স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে নিজ বাড়ি সিলেটে এসেছেন নগরের মজুমদারী এলাকার লন্ডন প্রবাসী মোবারক খান। বাড়িতে এসে তার কোয়ারেন্টিনে থাকার কথা। অথচ তিনি বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে গোলাপগঞ্জে চলে গেছেন। এর আগে নগরীর আমান উল্লাহ কমিউনিটি সেন্টারে আরো একটি বিয়েতে অংশ নেন।

তেমনি করে মোস্তাফিজুর রহমান নামের আরো এক প্রবাসীর বাড়ি নগরীর জালালাবাদ এলাকায়। সেখানে গিয়ে দেখা যায় তালাবদ্ধ বাড়ি। প্রবাসী ঘুরতে গেছেন বিয়ানীবাজারে। এভাবে আরো কয়েকজন প্রবাসীর খোঁজ নিলে প্রায় একই চিত্র পাওয়া যায়। এই অবস্থায় প্রতিদিনই সিলেটে আসছে প্রবাসীর বহর। বৃটেনের সঙ্গে বিমান যোগাযোগ স্বাভাবিক রয়েছে। গতকাল শনিবার দুপুরে বৃটেনের মানচেষ্টার থেকে সিলেট এসেছে বিমানের একটি ফ্লাইট।

এতে ৫৩ জন প্রবাসী সিলেটে এসেছেন। সিলেট অতিরিক্ত বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আনিসুর রহমান জানিয়েছেন, প্রবাসীদের হেলথ কার্ডে তাদের ঠিকানা সংগ্রহ করা হচ্ছে। সেই ঠিকানা পৌঁছে দেয়া হচ্ছে প্রশাসনের কাছে। প্রশাসন এখন তাদের তদারকি করছেন। পাশাপাশি স্বাস্থ্য বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারাও তদারকি করছেন।
তিনি বলেন, প্রবাসীরা করোনা আক্রান্ত হয়ে সিলেটে আসতে পারেন। এতে করে করোনা ছড়িয়ে পড়তে পারে। এজন্য প্রতিরোধ হিসেবে সমাজের সবার সচেতন হওয়া উচিত। প্রবাসীরা যাতে নিজ বাড়িতেই কোয়ারেন্টিনে থাকেন সে ব্যাপারে গ্রাম কিংবা এলাকার মানুষ, জনপ্রতিনিধিসহ সবাইকে সতর্ক হতে হবে। সিলেটে বেড়েই চলেছে কোয়ারেন্টিনে থাকা প্রবাসীদের সংখ্যা। গতকাল সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২১৫ জনে। এর মধ্যে সিলেটে ৬৮২, সুনামগঞ্জে ৯, হবিগঞ্জে ১২৫ ও মৌলভীবাজারে ৩১৭ জন প্রবাসী হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সিলেটে এখন পর্যন্ত সরকারি ভাবে যাদের কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে তারা বিদেশ ফেরত কিংবা প্রবাসীদের সংস্পর্শে এসেছেন। স্থানীয়ভাবে কাউকেই কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়নি। সুতরাং বিদেশ ফেরত প্রবাসীদের নিয়ে সব শঙ্কা সিলেটে। এদিকে করোনা ভাইরাসের সতর্কতা হিসেবে সিলেটের হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজার এলাকায় লোক সমাগম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও সিলেট কোতোয়ালি থানার ওসি সেলিম মিয়া মাজার কমিটির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করে সরকারি নির্দেশনা মেনে জনসমাগম সরানোর কথা জানান। মাজার কমিটির সঙ্গে বৈঠক করে এ নির্দেশনার কথা জানানো হয়। শুক্রবার সকালে মাজার এলাকা থেকে লোক সমাগম সরিয়ে দিচ্ছে পুলিশ। মাজারে আগত ভক্তদের সঙ্গে আলোচনা করে সরকারী নির্দেশনার কথা জানিয়ে জনস্বার্থে মাজার এলাকা ত্যাগ করার অনুরোধ করছে পুলিশ ও মাজার কমিটির নেতৃবৃন্দ।

সিলেটের কোতোয়ালি থানার ওসি মো. সেলিম মিয়া জানিয়েছেন, দেশে করোনা ভাইরাসজনিত কারণে গণসচেতনতা প্রয়োজন। আমরা বিভিন্ন জায়গায় গণসমাগম করতে নিষেধ করেছি। হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজারসহ কোনো জায়গায় লোক সমাগম হতে দেয়া যাবে না। করোনা ভাইরাস সতর্কতার অংশ হিসেবে শাহজালাল (রহ.) দরগাহ মসজিদে নামাজে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছে মসজিদ কর্তৃপক্ষ।

বৃহস্পতিবার রাতে এশার নামাজের পর দরগাহ হযরত শাহজালাল (রহ.) মসজিদের প্রধান পরিচালক (হিসাব শাখা) মুফতি মোহাম্মদ কায়েস স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এমন বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, হযরত শাহজালাল (রহ.) মসজিদে আগত মুসল্লি বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে মসজিদে প্রতি ওয়াক্তের জামাতের নির্ধারিত সময়ের ১৫ মিনিট পূর্বে আজান হবে এবং মসজিদ খুলে দেয়া হবে। জামাত শেষে মসজিদ বন্ধ করে দেয়া হবে। মুসল্লিরা সকল সুন্নত নামাজ নিজ নিজ বাসায় পড়বেন। শুধু ফজর এবং জুমার আজান জামাতের ২০ মিনিট পূর্বে হবে। সিলেটে বিয়ের অনুষ্ঠানও এড়িয়ে চলার নির্দেশনা দিচ্ছে পুলিশ।

সিলেটের বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টারগুলোতে আগামী ৩১শে মার্চ পর্যন্ত বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজন না করতে নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ ও প্রশাসন। শুক্রবার যেসব সেন্টারে বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য বুকিং ছিলো সেগুলো স্থগিত করার জন্য বলা হয়। এমন নির্দেশনার প্রেক্ষিতে অনেকেই বিয়ের অনুষ্ঠান স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছেন।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার জেদান আল মুসা জানিয়েছেন, করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে কেন্দ্রীয় নির্দেশনার আলোকে অধিক জনসমাগম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এরই আলোকে থানাগুলোতে জানিয়ে দেয়া হয়েছে সেন্টারগুলোতে বিয়ের অনুষ্ঠানসহ যেখানে অধিক জনসমাগম হতে পারে সেগুলো স্থগিত করার জন্য। সূত্র: মানবজমিন