বেনাপোলে ভারত থেকে ফেরা ৫২ পাসপোর্টধারী যাত্রী কোয়ারেন্টাইনে

বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ভারত থেকে ফেরা ৫২ বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী যাত্রীর মধ্যে ৪৮ জন যাত্রীকে বেনাপোল বলফিল্ডে অবস্থিত পৌর বিয়ে বাড়ি কমিউনিটি সেন্টারে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।

এছাড়াও দুই যাত্রীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও দুই যাত্রীকে যশোর সদর হাসপাতালে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এদের অধিকাংশই চিকিৎসার জন্য ভারত ভ্রমণে গিয়ে লকডাউনের কবলে আটকা পড়ে দীর্ঘদিন সেখানে দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছিলেন।

এসব যাত্রী ভারত লকডাউন ঘোষণার আগেই ট্যুরিস্ট ও মেডিকেল ভিসা নিয়ে সেখানে যান। করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে ভারত বাংলাদেশি যাত্রীদের শর্তসাপেক্ষে দেশে ফেরার অনুমতি দেয়। কলকাতার বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে স্বাস্থ্য সনদ গ্রহণের পর বিশেষ অনুমতি সাপেক্ষে পশ্চিমবঙ্গ লকডাউনেরর পরও তারা দেশে প্রবেশের অনুমতি পায়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সার্বিক তত্ত্বাবাধনে ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন মানার শর্তে সোমবার (৬ এপ্রিল) বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখেন ৫২ জন নাগরিক।

দুপুর ১২টার দিকে ৪৪জন ও সন্ধ্যা ৬টায় ৮জন ভারত থেকে বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনে প্রবেশ করলে তাদের পাসপোর্টের কার্যক্রম শেষে বেনাপোল পৌর বিয়ে বাড়ি কমিউনিটি সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে দুইজনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও দুইজনকে যশোর সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এখানে যাত্রীদের সব ধরনের দেখভাল করবেন স্বাস্থ্য কর্মীরা।

যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পুলক কুমার মন্ডল, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খোরশেদ আলম চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সালাউদ্দিন, নাভারন সার্কেলের এএসপি জুয়েল ইমরান, বিজিবির বেনাপোল ক্যাম্পের হাবিলদার আকরাম হোসেন, আনসার বাহিনীর কর্মকর্তা লুৎফুর রহমান, বেনাপোল পোর্ট থানার ওসি মামুন খানসহ স্থানীয় প্রশাসনের যৌথ নিরাপত্তায় দেশে ফেরত আসাদের দুটি অ্যাম্বুলেন্স ও দুটি মাইক্রোযোগে পৌর বিয়ে বাড়ি নেয়া হয়।

এ সময় স্থানীয় বাসিন্দারা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। তাদের দাবি- এলাকায় বিদেশফেরতদের রেখে ভাইরাস ছড়িয়ে জনজীবন হুমকির মধ্যে ফেলতে চান না তারা। পরবর্তীতে পোর্ট থানা পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দিয়ে বিক্ষোভকারীদের মানবিক দিক বুঝিয়ে ঘরে ফেরান।

ভারত হতে দেশে ফেরা নাগরিকদের প্রাথমিকভাবে ইমিগ্রেশনের মধ্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। সকলের শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রয়েছে। ২/৩ জনের তাপমাত্রা একটু বেশি থাকলেও চিন্তার কোনো কারণ নেই বলে জানান চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের দায়িত্বে থাকা মেডিকেল টিমের ইনচার্জ ডা. শিমুল হাসান।

তিনি জানান, ভারত ফেরতদের মধ্যে চারজন ক্যানসার রোগী ও একজন গর্ভবতী নারী রয়েছেন। যাদেরকে হোম কোয়ারেন্টাইনে পুলিশি নিরাপত্তায় নিজ বাড়িতে রাখা হবে।

শার্শা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খোরশেদ আলম চৌধুরী জানান, ভারত থেকে যে সকল পাসপোর্টযাত্রী বাংলাদেশে প্রবেশ করবে তাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে কোয়ারেন্টাইনে রেখে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। তারপর তাদেরকে বাড়ি পাঠানো হবে। কেননা তারা ভারত থেকে ফিরে নিজ নিজ বাড়ি গিয়ে সরকার ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ কিংবা চিকিৎসকদের পরামর্শ মানছে না। ১৪ দিন বাড়িতে অবস্থানের কথা বলা হলেও তা না মেনে নিজেদের ইচ্ছে মত পাড়া-মহল্লা কিংবা হাটবাজারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সেজন্য দেশের স্বাস্থ্য বিভাগের পরামর্শ মোতাবেক এই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন বলেন, এখন থেকে যারা ভারত থেকে ফিরবেন সবাইকে ১৪ দিনের জন্য বেনাপোলের বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হবে। তাদের দেখভাল করবেন স্বাস্থ্য কর্মীরা। এখানে ভয়ের কিছু নেই। যাদেরকে রাখা হচ্ছে তারা সুস্থ। তবে কেউ আক্রান্ত হলে তার নমুনা সংগ্রহ করে বাইরে নিরাপদ স্থানে নেয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পুলক কুমার মন্ডল বলেন, সবাই সুস্থ রয়েছেন। সরকারি নির্দেশনায় ঝুঁকি এড়াতে তাদের ১৪দিন পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। তাই এলাকাবাসীর চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। সরকারিভাবেই প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা ব্যক্তিদের সার্বিক নিরাপত্তা, খাদ্য সামগ্রীর ব্যবস্থাসহ নিয়মিত স্বাস্থ্য সেবা দেয়া হবে।