মণিরামপুরে ব্যাংকের অবহেলায় ভাতা বঞ্চিত হতদরিদ্ররা

যশোরের মণিরামপুর উপজেলার পশ্চিমাঞ্চলের ছয় ইউনিয়নের প্রায় আট হাজার বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী মানুষ গত ৯-১০ মাস ধরে ভাতা উত্তোলন করতে পারছেন না। উপজেলার রাজগঞ্জ সোনালী ব্যাংক ও খেদাপাড়া কৃষি ব্যাংক শাখার সংশ্লিষ্টদের অবহেলায় তারা ভাতা তুলতে পারছেন না বলে অভিযোগ।

উপজেলা সমাজসেবা অফিস ৩ মাস আগে ভাতার অর্থ ছাড় করলেও নানা অজুহাতে এই দুই ব্যাংকের কর্মকর্তারা ভাতা প্রদানে গড়িমসি করছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করেও সুবিধা করতে পারছেন না। ফলে করোনার-পরিস্থিতিতে গৃহবন্দি হতদরিদ্র পরিবারগুলো কষ্টে দিন পার করছে।

মণিরামপুর উপজেলা সমাজসেবা অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় ১৩ হাজার ৮৬৪ জন বয়স্ক ভাতা, ছয় হাজার ৩৫ জন বিধবা ভাতা ও তিন হাজার ৭৮ জন প্রতিবন্ধী ভাতাভোগী রয়েছেন। বয়স্ক ও বিধবা ভাতা মাসিক ৫০০ টাকা এবং প্রতিবন্ধী ভাতা ৭৫০ টাকা। প্রতি তিনমাস অন্তর এই ভাতা প্রদানের নিয়ম। জটিলতার কারণে ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর এই ছয় মাসের ভাতার টাকা চলতি বছরের জানুয়ারির মাঝামাঝি ছাড় করে উপজেলা সমাজসেবা অফিস। ভাতার টাকা দ্রুত প্রদানের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিমধ্যে ব্যাংকগুলোকে চিঠি দিয়েছে। এমনকি ভাতা প্রদানের জন্য প্রধানমন্ত্রীরও নির্দেশনা রয়েছে। তারপরও উপজেলার রাজগঞ্জ সোনালী ব্যাংক ও খোদাপাড়ার কৃষি ব্যাংক এই নির্দেশনা মানছে না। নানা অজুহাত দেখিয়ে ভাতা প্রদানে দেরি করা হচ্ছে।

এই দুই ব্যাংকের আওতায় রোহিতা, খেদাপাড়া, হরিহরনগর, ঝাঁপা, মশ্মিমনগর ও চালুয়াহাটি- এই ছয় ইউনিয়নের তিন স্তরের প্রায় ৮-৯ হাজার ভাতাভোগী রয়েছেন।

কোদলাপাড়া গ্রামের জামাল উদ্দিন বলেন, আমি বয়স্ক ভাতা পাই। আমার পরিবারের সদস্য সাত। গত ৯-১০ মাস ধরে ভাতার টাকা তুলতে পারছিনে। খুব অভাবেব সংসার। করোনার জন্যি ঘর থেকে বেরুতে পারছিনে। এই পর্যন্ত কেউ আমাদের খোঁজ নিইনি। এই কষ্টের মধ্যি টাকাগুলো পালি খুব উপকার হতো। মেম্বরের কাছে বারবার যাচ্ছি, কোনো লাভ হচ্ছে না।

কোদলাপাড়া ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মনিরুল ইসলাম বলেন, লোকজন খুব জ্বালাতন করছে। আমরা বারবার ব্যাংকে যেয়ে বিল ছাড়ার জন্য ম্যানেজারকে অনুরোধ করছি। তারা নানা ব্যস্ততা দেখাচ্ছে। বিষয়টি ইউএনও স্যারকেও বলেছি।

বিভিন্ন ভাতা নিয়ে কাজ করেন রাজগঞ্জ সোনালী ব্যাংকের এমন এক কর্মকর্তা উজ্জ্বলকুমার। তিনি বলেন, আমরা ইতিমধ্যে তালিকা তৈরি করেছি। রোববার (১২ এপ্রিল) থেকে ভাতা প্রদানের কাজ শুরু হবে।

খেদাপাড়া কৃষি ব্যাংকের ম্যানেজার দীপন সাহা বলেন, অফিসে লোকবল কম। অবস্থা স্বাভাবিক না হলে ভাতা দেওয়া সম্ভব হবে না। তারপরও দেখছি, আগামী সপ্তাহ থেকে বিল দেওয়া যায় কি-না।

মণিরামপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. রোকনুজ্জামান বলেন, ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর- এই ছয় মাসের বিল জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে আমি ছাড় করে দিয়েছি। ইতিমধ্যে পৌরসভাসহ ১১টি ইউনিয়নের ভাতাভোগীরা টাকা পেয়েছেন। রাজগঞ্জ অঞ্চলের ছয়টি ইউনিয়নের টাকা এখনো দেয়নি ব্যাংক। বিষয়টি নিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছি। তারা দ্রুতই ভাতা দেওয়ার কাজ শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন।