করোনা সন্দেহে বৃদ্ধা মাকে বাড়ি থেকে বের করে দিল ছেলেরা

সুনামগঞ্জে অন্য জেলা থেকে আসা গামের্ন্টসকর্মীর বাড়িতে যাওয়ায় করোনা সন্দেহে বৃদ্ধা মাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন ছেলেরা। ফলে গত দুইদিন ধরে বাড়ির বাইরে ঘুরে ঘুরে খাবার সংগ্রহ করে জীবন পার করছেন অমত্য বালা দাস (৯০) নামের ওই বৃদ্ধা।

মঙ্গলবার সকালে সুনামগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চল শাল্লা উপজেলার এক সাংবাদিক ফেসবুকে একটি ভিডিও প্রচার করলে বিষয়টি ভাইরাল হয়ে যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শাল্লা উপজেলার হাবিবপুর ইউনিয়নের নিয়ামতপুর গ্রামের বাসিন্দা বৃদ্ধা অমত্য বালা দাস। দুই ছেলের জন্মের পর স্বামীকে হারান তিনি। দুই ছেলে জুগেশ দাশ ও রণধীর দাশকে কষ্ট করে মানুষ করেন। দুই ছেলে কৃষি কাজ করলেও তাদের পারিবারিক অবস্থা ভালো। দেশের অন্য জেলা থেকে শাল্লায় আসা গামেন্টর্সকর্মীর বাড়িতে যাওয়ায় প্রতিবেশীদের কথায় মাকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছেন দুই ছেলে।
ছেলেদের দাবি, করোনার মহামারির মধ্যে অন্য জেলা থেকে আসা মানুষের বাড়িতে যাওয়ার শাস্তি স্বরুপ তাকে বাড়ি বের করে দেয়া হয়েছে।

বৃদ্ধা অমত্য বাল দাশ বলেন, ‘আমার কোনো করোনা নাই বাবা। আমি কারও বাড়িতেও যাই নাই। আমি বুড়া মানুষ হাঁটতে বের হইছিলাম। পরে ঘরে গেলে ছেলেরা আমারে মিথ্যা অপবাদ দিয়া ঘর থাকি বাহির করিয়া দিসে। গাঁওয়ের কেউ আমারে জায়গা দেয় না, খাওন দেয় না। তারা সবাই কয় আমি নাকি করোনা রোগী। এখন আমার ছেলেরা জায়গা দেয় না, বউরা খাওন দেয় না। গেলেই বলে তুমি দোষী ঘরে আইও না। এখন এক সবজি ব্যবসায়ী আমাকে একটা বেগুন দিলেও চাল কেউ দেয় নাই।’

এ ব্যাপারে স্থানীয় এক সাংবাদিক গণমাধ্যমকে বলেন, ওই নারীকে আমি রাস্তায় বসে থাকতে দেখে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি করোনা সন্দেহে ছেলেরা তাকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছেন। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি উনার ছেলেদের কোনো অভাব-অনটন নেই। তার ছেলেরা ও কিছু প্রতিবেশী মিলে এমন কুসংস্কারকে বিশ্বাস করে পুরো উপজেলায় বিষয়টি ছড়িয়ে দিয়েছে। যার কারণে ওই নারী এখন কোথাও খাবার পান না, আমি এখন উনাকে আমার ঘরে নিয়ে এসে চারটা ডাল-ভাত খাইয়েছি।

এ ব্যাপারে শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আল-মুক্তাদির হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, বিষয়টি জানার পর আমি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে অবগত করেছি। তিনি এখন ওই নারীর কাছে গিয়ে বিষয়টি দেখবেন। যদি বিষয়টি সত্যি হয় তাহলে আমরা ছেলেদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন