নারীদের খৎনা হয় যেখানে

নারীদেরও খৎনা হয়! এ বিষয়ে অনেকেই অবগত নন! সত্যিই এমন প্রথা রয়েছে বিশ্বের কয়েকটি দেশে। আফ্রিকা মহাদেশের ২৭টি দেশসহ ইন্দোনেশিয়া, ইরাকের কুর্দিস্তান, ইয়েমেন-এ দেশগুলোতে নারীদের মুসলমানি একটি ধর্মীয় রীতি হিসেবেই প্রচলিত। আজ থেকে নয়, আধুনিক বিশ্ব সৃষ্টি হওয়ার প্রায় শতবর্ষ আগে থেকেই এ রীতি মেনে আসছেন বহু মানুষ। আর সংখ্যাটাও একেবারেই নগণ্য নয়! তেমনই এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন বিশারা নামের এক নারী।

তিনি বলেন, ‘আমার চোখ বেঁধে দুই হাত পেছনে শক্ত করে বাঁধা হয়। দুই পা দু’দিকে মেলে ধরে যৌনাঙ্গের বাইরের চামড়া দু’টি শক্ত করে পিন কিছু দিয়ে আটকে দেয়া হয়। আমি তীক্ষ্ণ একটি ব্যথা অনুভব করে চিৎকার করতে থাকি। আমার আর্তনাদে কেউ সাড়া দেয়নি। আমি লাথি মেরে নিজেকে মুক্ত করার চেষ্টা করলাম। দানবের মতো কেউ একজন আমার পা চেপে ধরেছিল।’

বিশারা বলেন, এটি ছিল অত্যন্ত কষ্টকর। অন্য সব মেয়েদেরও একই অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যেতে হয়। ব্যথা নিরাময়ের জন্য ছিল শুধু স্থানীয়ভাবে তৈরি ভেষজ ওষুধ। একটি ছাগলের মতো করে তারা আমার দুই পা টেনে ধরে ক্ষত স্থানে সেই ভেজষ ওষুধ মাখিয়ে দেয়। এভাবেই প্রত্যেক নারীকে খৎনা দেয়া হয়।

বিশ্বের প্রতিটি ২০ মেয়ে শিশু বা নারীর মধ্যে একজনের খৎনা করা হয়ে থাকে, যাকে ইংরেজিতে বলা হয় এফিএম বা ফিমেল জেনিটাল মিউটিলেশন। বর্তমান বিশ্বে এ রকম বিশ কোটি নারী রয়েছেন, যাদের আংশিক অথবা পুরো খৎনা অর্থাৎ যৌনাঙ্গ কেটে ফেলা হয়েছে। অনেক নারী ও মেয়ের শিশু অবস্থাতেই এ রকম খৎনা করা হয়, এমনকি শিশুদেরও।

অনেক সময় বয়ঃসন্ধির সময় এটি করা হয়। ফলে নারীদের শারীরিক এবং মানসিক সমস্যার তৈরি হয়, যা পরবর্তীতে তাদের সারাজীবন ধরে বয়ে বেড়াতে হয়। ইউনিসেফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের ২৯টি দেশে ব্যাপকভাবে এ রীতি চালু রয়েছে, যদিও এদের মধ্যে ২৪টি দেশেই এটি নিষিদ্ধ। এমনকি নারীদের এরকম যৌনাঙ্গ কর্তন বন্ধের আহবান জানিয়ে প্রতিবছরের ৬ ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ে ‘জিরো টলারেন্স’ দিবস হিসেবে পালন করে জাতিসংঘ।

নারীদের খৎনা আসলে কী?
নারীদের খৎনার মানে হলো ইচ্ছাকৃতভাবে যৌনাঙ্গের বাইরের অংশটি কেটে ফেলা। অনেক সময় ভগাঙ্কুরের পাশের চামড়া কেটে ফেলা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেছে, চিকিৎসার প্রয়োজন ব্যতীত এমন যেকোনো প্রক্রিয়া, যা নারীদের যৌনাঙ্গের ক্ষতি করে থাকে। এ ধরনের কাজে নারীদের শারীরিক এবং মানসিকভাবে ক্ষতি করে থাকে, যার স্বাস্থ্যগত কোনো উপকারিতা নেই।

কোথায় এ রীতি চালু আছে?
বর্তমানে আফ্রিকার অনেক এলাকায়, মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার কিছু অংশে এ রীতি চালু আছে। তবে অভিবাসনের মাধ্যমে এর চর্চা ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া এবং আমেরিকাতেও ছড়িয়ে পড়েছে। কিছু ঐতিহ্যমনা পরিবারে মেয়েদের খৎনার ভেতর দিয়ে যেতে হয় যখন তারা তাদের মাতৃভূমিতে ছুটিতে যায়। যেহেতু পশ্চিমা সরকার নারী খৎনার ব্যাপারে খুব সচেতন, তাই তাদের আইনগুলো বহুদেশে নারী খৎনাকে আইনের লঙঘন হিসেবে সাব্যস্ত করতে সাহায্য করেছে।

ইউনিসেফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের ২৯টি দেশে ব্যাপকভাবে এ রীতি চালু রয়েছে, যদিও এদের মধ্যে ২৪টি দেশেই এ নিষিদ্ধ। খালিদ আদেম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম ব্যক্তি যাকে ২০০৬ সালে তার কন্যাকে খৎনা করানোর জন্য শাস্তি দেয়া হয়। অনেকে দেশে বেআইনি হওয়া সত্ত্বেও পরিবারের ঘনিষ্ঠজনদের সাজা হতে পারে, এ রকম আশঙ্কা থেকে ভুক্তভোগীরা আর অভিযোগ সামনে আনেন না। তবে মেয়ে শিশুদের ওপর এ রকম খৎনা করার প্রবণতা বাড়ছে।

এ শিশুরা স্কুলে না পড়ায় বা যথেষ্ট বড় না হওয়ায় কর্তৃপক্ষ সহজে শনাক্ত করতে পারেন না।

সম্প্রতি রাশিয়ায় একটি বিল আনা হয়েছে, যেখানে নারীদের মুসলমানিকে (FGM- Female Genital Mutilation) একটি আইনি অপরাধ হিসেবেই দেখা হবে। অপরাধী যেই হোক না কেন, শাস্তি হতে পারে ১০ বছরের কারাবাস। রাশিয়ার পার্লামেন্টে এ বিলের সপেক্ষে বলা হয়, সভ্য সমাজে নারী যৌনাঙ্গের অঙ্গহানি বা নারীদের মুসলমানির মতো বর্বর প্রথার কোনো স্থান নেই।