করোনার আরেকটি ভয়ঙ্কর রূপ চিহ্নিত, সুস্থ হওয়ার পরও ফুসফুসে থেকে যাচ্ছে ক্ষত!

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের তাণ্ডবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে গোটা বিশ্ব। এই ভাইরাসের ছোবলে ইতোমধ্যে (বুধবার দিবাগত রাত সোয়া ২টা পর্যন্ত) বিশ্বব্যাপী আক্রান্ত হয়েছে ৪৪ লাখ ২ হাজার ৯১০ জন। এর মধ্যে প্রাণ হারিয়েছে ২ লাখ ৯৬ হাজার ৫১৪ জন।

এছাড়া, বিশ্বব্যাপী এই ভাইরাসের কবল থেকে সুস্থ হয়েছে ১৬ লাখ ৪৫ হাজার ৬৬৫ জন।

এদিকে, করোনার কবল থেকে সুস্থ হলেও অনেককেই এই ভাইরাসের কারণে দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এই ভাইরাস এতটাই ভয়ঙ্কর যে সুস্থ হয়ে উঠার পরও অনেকের ক্ষেত্রে ফুসফুসে থেকে করোনার ছাপ বা ক্ষত চিহ্ন।

শুধু তাই নয়, ইয়েল স্কুল অব মেডিসিনের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ জোসেফ ব্রেনান জানিয়েছেন, কিছু রোগী আছেন সেরে ওঠার দেড়-দু’মাস পরও যাদের শুকনো কাশি থেকে গেছে। রয়ে গেছে বুকে জ্বালাধরাভাব, গভীরভাবে শ্বাস টানা ও শ্বাস ছাড়তে না পারার সমস্যা। এর প্রধান কারণ সংক্রমণ ও প্রদাহের ফলে ফুসফুসের কিছু অংশের স্থায়ী ক্ষতি।

তার মতে, করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর যত নিউমোনিয়ার বাড়াবাড়ি হয়েছে, ক্ষতিও হয়েছে ততই বেশি। সিটি স্ক্যানে ফুসফুসে ধরা পড়েছে ধূসর প্যাচ, যাকে বলে গ্রাউন্ড গ্লাস ওপাসিটি।

চীনের এক সমীক্ষা থেকে জানা গেছে, জটিল রোগীদের মধ্যে প্রায় ৭৭ শতাংশের সিটি স্ক্যানে এই চিহ্ন রয়েছে।

রেডিওলজি জার্নালে প্রকাশিত আরেকটি সমীক্ষায় জানা যায়, চীনের হাসপাতালে ভর্তি থাকা ৭০ জন গুরুতর রোগীর মধ্যে ৬৬ জনের ফুসফুসের ক্ষতি হয়েছে এবং তাদের অর্ধেকের মধ্যে পাওয়া গেছে এই ধূসর প্যাচ। এমনকি উপসর্গহীন কোভিড রোগীদের মধ্যেও এই সমস্যা দেখা গেছে এবং তার কিছুদিন পর জাঁকিয়ে বসেছে রোগ।

এ ক্ষতি যে সহজে সারার নয়, তার প্রমাণ আছে অতীতে। নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধে বিজ্ঞানীরা জানান, ২০০৩-২০১৮ সাল পর্যন্ত ৭১ জন সার্স রোগীর উপর সমীক্ষা চালিয়ে তারা দেখেছেন, এর তিন ভাগের এক ভাগের মধ্যে ফুসফুসের ক্ষত চিহ্ন থেকে গেছে। এর ফলে তাদের পরিশ্রম করার ক্ষমতাও কমে গেছে। ৩৬ জন মার্স রোগীকে পর্যবেক্ষণ করেও এই একই তথ্য পাওয়া গেছে। তাও তো এই দুই রোগে আক্রান্ত হয়েছিল একটি ফুসফুস। কোভিডে কিন্তু সংক্রমণ হচ্ছে দু’টি ফুসফুসেই।

ক্রিটিকাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ সৌতিক পাণ্ডা জানিয়েছেন, “কোভিডে দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা আরও বেশি হবে কি না তা এখনই বলা যাচ্ছে না। এটুকু বলা যায় যে, জটিল নিউমোনিয়া বা অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিনড্রোমে ভুগে উঠলে ফুসফুসের যে ক্ষতি হয়, তা সারতে কম করে ৬-১২ মাস সময় লাগবে। তারপরও পুরোপুরি সেরে উঠবে কি না বলা যায় না। এর উপর কারও যদি হাঁপানি, সিওপিডি বা ইন্টারস্টিসিয়াল লাং ডিজিজ ইত্যাদি থাকে, কার্যকারিতা ফিরে আসবে বড়জোর ৬০-৭০ শতাংশ।” সূত্র: এফআর২৪ নিউজ