ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর বিচার শুরু : এক দশকেরও বেশি জেল হতে পারে নেতানিয়াহুর

ইসরাইলের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আদালতের কাঠগড়ায়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে এক দশকেরও বেশি জেল হতে পারে।

অভিযোগ আছে তিনি গোলাপী শ্যাম্পেন আর কিউবান সিগারেটের মতো বিলাসি পণ্য উপহার নিয়েছেন। তার সম্পর্কে সব ইতিবাচক খবর প্রকাশের জন্য ইসরাইলের একজন মিডিয়া মুঘলের সঙ্গে আঁতাত করেছেন। তার বিরোধীপক্ষের সুনাম ধ্বংস করতে আরেকজন মিডিয়ামুঘলকে ঘুষ দিয়েছেন। আপাতত নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে এসবই অভিযোগ। এ অভিযোগে রোববার প্রথম তার বিরুদ্ধে উচ্চ পর্যায়ের মামলার শুনানি শুরু হওয়ার কথা। জেরুজালেম থেকে এ খবর দিয়েছেন লন্ডনের অনলাইন দ্য গার্ডিয়ানের সাংবাদিক অলিভার হোমস।

টানা চতুর্থ দফায় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এক সপ্তাহ আগে শপথ নিয়েছেন নেতানিয়াহু। এর মধ্য দিয়ে তিনি ইসরাইলের সবচেয়ে বেশি সময় ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রীর রেকর্ড গড়েছেন। সঙ্গে নতুন কালেকশন জমা হয়েছে তার রেকর্ডে। তা হলো, প্রথম কোনো ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগে আদালতে তার বিচার হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে রোববারের মামলার কার্যক্রম সংক্ষিপ্ত ও টেকনিক্যাল হওয়ার কথা। স্থানীয় সময় আজ বিকেল ৩টায় সেখানে তার বিরুদ্ধে ঘুষ দেয়ার অভিযোগ, প্রতারণা ও বিশ্বাস ভঙ্গের অভিযোগ পড়ে শোনানোর কথা। কয়েক বছর ধরে পুলিশ এ মামলার তদন্ত করেছে। তা নিয়ে আদালত বসার কথা। কিন্তু ৭০ বছর বয়সী নেতানিয়াহু জোর দিয়ে আগে থেকেই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছেন। তিনি বলেছেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে এসব অভিযোগ আনা হয়েছে। জেরুজালেমের আদালতে তাকে উপস্থিত হওয়ায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এ জন্য তার আইনজীবী তার উপস্থিতি এড়ানোর চেষ্টা করেন। তিনি তারা ব্যর্থ হন। স্থানীয় কমিউনিস্ট বেন কাসপিট বলেছেন, আদালতের কাঠগড়ায় প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু দাঁড়ানো এমন ছবি প্রকাশ হলেই তার শক্তিশালী নেতৃত্বের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন হবে। নেতানিয়াহুও এ কথা জানেন যে, ইতিহাসে এটাই হতে পারে সবচেয়ে বেশি দৃষ্টিকাড়া ছবি। এসব কথা কাসপিট গত সপ্তাহে লিখেছেন মারিভ পত্রিকায়। তিনি আরো লিখেছেন, নেতানিয়াহু এটাও জানেন যে, ইউকিপিডিয়ায় যেসব ছবি প্রকাশিত হবে তার মধ্যে এ ছবিগুলোও অন্তর্ভুক্ত হবে। লাখ লাখ মানুষের বিবেককে তাড়া করবে সেই ছবি।

গত বছর তিনটি আলাদা মামলায় তিনি অভিযুক্ত হন। যদি সেসব অভিযোগ প্রমাণিত হয় তাহলে ডানপন্থি এই রাজনীতিকের এক দশকেরও বেশি জেল হতে পারে। মামলার শুনানি শুরু হওয়ার কথা ছিল মার্চে। কিন্তু করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে আরোপিত বিধিনিষেধের জন্য আদালত বিলম্বিত হয়।

প্রথম অভিযোগের মামলাটি কেস ১০০০ নামে পরিচিত। এতে হলিউডের ব্যবসায়ী আরনন মিলচান ও অস্ট্রেলিয়ার ক্যাসিনো অপারেটর জেমস প্যাকারের মতো বিলিয়নিয়ারদের কাছ থেকে দামি সিগারেট, শ্যাম্পেন ও স্বর্ণালংকার উৎকোচ নেয়ার অভিযোগ আছে। মিলচান ইসরাইলি বংশোদ্ভূত হলিউডের প্রযোজক। তিনি প্রযোজনা করেছেন ‘প্রিটি ওম্যান’ ছবি। তার উৎকোচের বিনিময়ে তিনি তাদেরকে সুবিধা দিতে চেয়েছেন। বলা হয়েছে এসব উপহার সামগ্রির দাম প্রায় এক লাখ ৫০ হাজার পাউন্ড। এর বিনিময়ে মিলচানকে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাইয়ে দেয়ায় সহায়তা করেন নেতানিয়াহু। তবে প্যাকার কি সুবিধা পেয়েছিলেন তা পরিষ্কার বোঝা যায় নি। তবে মিলচান ও প্যাকার তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনা হয় নি।

কেস ২০০০ নামে পরিচিত যে মামলাটি তাতে বলা হয়েছে, দেশের শীর্ষ বিক্রিত পত্রিকা ইয়েডিওথ আহরোনোথ পত্রিকার সঙ্গে যোগসাজস করেছিলেন নেতানিয়াহু। এতে নেতানিয়াহু ও তার পরিবারের পক্ষে খবর প্রকাশ করতে বলা হয়েছিল। তৃতীয় সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ মামলাটি কেস ৪০০০ নামে পরিচিত। এতে নিজের সরকারি ভাবমূিির্ত বাড়ানোর চেষ্টা করেন তিনি। এতে বলা হয়েছে ইসরাইলে টেলিযোগাযোগ সুবিধা দানকারী প্রতিষ্ঠান বেজেক-কে তিনি ২০ কোটি পাউন্ডের কাছাকাছি প্রণোদনা দিয়েছিলেন। বিনিময়ে বেজেক মালিকানাধীন সুপঠিত খবরের ওয়েবসাইট ওয়ালা’র সম্পদকীয় কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল।neta