থার্মাল ক্যামেরায় তাপমাত্রা মেপে কি করোনা শনাক্ত করা সম্ভব?

লকডাউন শিথিল করার সাথে সাথে পৃথিবীর নানা প্রান্তে জনস্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বিভিন্ন জায়গায় থার্মাল ইমেজিং ক্যামেরার ব্যবহার বাড়তে দেখা যাচ্ছে। তবে থার্মাল ইমেজিং ক্যামেরায় তাপমাত্রা মেপে কি করোনা শনাক্ত করা সম্ভব? এটা কেন ব্যবহার করা হচ্ছে? থার্মাল ইমেজিং ক্যামেরা কাজ করে ইনফ্রারেড প্রযুক্তি ব্যবহার করে। এই ক্যামেরা শরীরের তাপ ধরতে পারে। সাধারণত কপালের তাপমাত্রা এই ক্যামেরা নেয় এবং তার থেকে শরীরের সার্বিক তাপমাত্রা সম্পর্কে একটা ধারণা দেয়।

থার্মাল ইমেজিং ক্যামেরার কাজ কী?

এই তাপমাত্রা নির্ণায়ক ক্যামেরা খুবই শক্তিশালী। দমকল বাহিনীতে প্রায়ই এই ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়, কোথায় আগুন আছে তাপমাত্রা মেপে তা বোঝার জন্য। পুলিশও অনেকসময় কোন সন্দেহভাজন অপরাধীকে ধরতে এই ক্যামেরা ব্যবহার করে থাকে। যখন কোন মানুষকে দেখা যাচ্ছে না, কিন্তু মানুষের তাপমাত্রা দিয়ে চোখের আড়ালে মানুষ আছে কী না তা তারা বোঝার চেষ্টা করে।

কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানে কাজে লাগানোর জন্য এই ক্যামেরা তৈরি করা হয়নি। কাজেই বর্তমান করোনাভাইরাস মহামারিতে তা কতটা কার্যকর হতে পারে সেটা নিয়ে প্রশ্ন আছে।

এই ক্যামেরা শরীরের তাপমাত্রার একটা মোটামুটি নির্ভরযোগ্য রিডিং দিতে পারে যা প্রকৃত তাপমাত্রার আধা ডিগ্রি এদিক-সেদিক হতে পারে। কিন্তু তারপরেও এই ক্যামেরা শরীরের যে তাপমাত্রা রেকর্ড করে তা ডাক্তাররা যেটাকে শরীরের তাপমাত্রা হিসাবে দেখেন সেটা নয়।

লন্ডন ইউনিভার্সিটি কলেজের অধ্যাপক ডেরেক হিল বলেন, ‘চিকিৎসার জন্য সাধারণত যে থার্মোমিটার ব্যবহার করে শরীরের তাপমাত্রা মাপা হয়, এটা একই সেভাবে শরীরের সঠিক তাপমাত্রা নেয় না।’

শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা কত?

মানুষের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা প্রায় ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৯৮.৬ ফারেনহাইট)। শরীরের তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি হলে সেটা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি এবং তখন জ্বর হয়েছে বলে ধরা হয়। তবে মানুষের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা একেক জনের ক্ষেত্রে একেক রকম হতে পারে এবং দিনের বিভিন্ন সময়ে তা বদলাতে পারে। ঋতুমতী মেয়েদের ক্ষেত্রে মাসিকের সময় এই তাপমাত্রা ওঠানামা করতে পারে।

শরীরের সঠিক তাপমাত্রা নির্ধারণ করা খুব সহজ নয়। কপাল থেকে, মুখ বা কানের ভেতর অথবা বগলের নিচে তাপমাত্রা নেয়া হয়। তবে ডাক্তারদের মতে সবচেয়ে সঠিক রিডিং পাওয়া যায় পায়ু পথ থেকে তাপমাত্রা মাপলে।

থার্মাল ক্যামেরা কি করোনাভাইরাস ধরতে পারে?

না। থার্মাল ক্যামেরার কাজ হচ্ছে শুধু শরীরের তাপমাত্রা মাপা। আমরা জানি, করোনাভাইরাস সংক্রমণ হলে জ্বর বেশি হয়। অন্য উপসর্গগুলোর মধ্যে আছে বমিভাব, মাথাব্যথা, অবসাদ বা ক্লান্তি এবং স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতি চলে যাওয়া। কিন্তু সকলের যে আবার জ্বরের উপসর্গ দেখা যায়, তাও নয়। আবার বেশি জ্বর হয়েছে এমন ব্যক্তির করোনা সংক্রমণ নাও হতে পারে।

ফলে শুধু থার্মাল ক্যামেরা ব্যবহার করলেই যে সংক্রমিত ব্যক্তিদের ধরা যাবে তা নয়। কারণ জ্বর না থাকলেও কারো অন্য উপসর্গ থাকতে পারে অথবা এমন হতে পারে কারো কোনই উপসর্গ নেই, কিন্তু তিনি ভাইরাস বহন করছেন। অথবা এই ক্যামেরা এমন কারো শরীরে বেশি তাপমাত্রা পেতে পারে, যার তাপমাত্রা বাড়ার অন্য কারণ থাকতে পারে- অর্থাৎ এটা পজিটিভ বলে তাকে শনাক্ত করলে তা বিভ্রান্তিমূলক হবে।

তাহলে থার্মাল ক্যামেরার উপযোগিতা কী?

শুধু তাপমাত্রা মাপলে সেটা করোনা শনাক্তের একটা কার্যকর পদ্ধতি নাও হতে পারে, বলছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এখানে ক্যামেরা সঠিকভাবে সেট করতে হবে এবং যে ব্যক্তির তাপমাত্রা নেয়া হচ্ছে, মনে রাখতে হবে তার আশপাশের পরিবেশের তাপমাত্রাও সেখানে রেকর্ড হচ্ছে।

ইংল্যান্ডের রেডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেমস ফেরিম্যান বলছেন, ‘করোনা পরীক্ষার অনেক সরঞ্জাম আছে, এটা তার মধ্যে একটি।’

আমি যদি ফেস মাস্ক বা মুখ ঢাকা কিছু পরে থাকি?

অধ্যাপক ফেরিম্যান বলছেন, ‘ত্বকের মাধ্যমে যে তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে ফেস মাস্ক বা অন্য মুখ ঢাকা কিছু পরলে তা কিছুটা বাড়তে পারে। সে কারণে কপালের তাপমাত্রা দেখা হয় কারণ কপাল সাধারাণত ঢাকা থাকে না।’

ব্যায়াম করলে কি শরীরের তাপমাত্রা বাড়বে?

সাধারণত না। ব্যায়াম করার সময় যেহেতু ত্বকের ওপর ঘাম হয়, তাই চামড়ার তাপমাত্রা এ সময় নেমে যায়। ব্যায়ামের পর শরীর দক্ষতার সাথেই তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তাই শরীরের তাপমাত্রা খুবই অস্বাভাবিক দেখালে ব্যায়ামের সাথে তার কোন সম্পর্ক আছে কি-না তা ভাবা যেতে পারে।

সূত্র- বিবিসি বাংলা।