নাসিমকে নিয়ে ‘আপত্তিকর’ মন্তব্য, আইসিটি আইনে রাবি শিক্ষক গ্রেফতার

রাবি প্রতিনিধি: প্রয়াত সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ‘আপত্তিকর মন্তব্য’ করার অভিযোগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) একজন শিক্ষককে ডিজিটাল নিরাপত্তা (আইসিটি) আইনে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বুধবার রাত ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কোয়ার্টারের বাসা থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃত ওই শিক্ষকের নাম, কাজী জাহিদুর রহমান। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের সহকারী অধ্যাপক।

জাহিদুর রহমানকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদ পারভেজ।

ওসি জানান, বুধবার (১৭ জুন) রাত সাড়ে ৯টার দিকে অ্যাডভোকেট তাপস কুমার শাহ বাদী হয়ে কাজী জাহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা দায়ের করেন। মামলার অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় তাকে রাতেই গ্রেফতার করা হয়।

মামলার এজহারে উল্লেখ করা হয়, কাজী জাহিদুর রহমান গত ১, ২ ও ৫ জুন নিজের ফেসবুক ওয়ালে আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমকে নিয়ে কল্পনাপ্রসূত, মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ করেন। বাজে ভাষায় কটুক্তি করেন তিনি। সেখানে একটি পোস্টে মোহাম্মদ নাসিমের ছবি ও নাম উল্লেখ করা হয়। বাকি পোস্টগুলোতে মোহাম্মদ নাসিমকে ইঙ্গিত করা হয়।

এজহারে বলা হয়, মোহাম্মদ নাসিম একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি বাংলাদেশ সরকারের সাবেক মন্ত্রী। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তিনি জাতীয় চার নেতার অন্যতম ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর পুত্র। তার বিরুদ্ধে তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক এমন মিথ্যা তথ্য ফেসবুকে শেয়ার করায় বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষও সংক্ষুব্ধ।

ওসি বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫, ২৯ ও ৩১ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে নয়টায় দায়েরকৃত মামলায় জাহিদুর রহমানকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

জাহিদুর রাবির শিক্ষক হলেও নড়াইল জেলা আওয়ামীলীগের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদকের পদে ছিলেন। তবে নাসিমকে নিয়ে মন্তব্যের পর গত মঙ্গলবার (১৬ জুন) জাহিদুর রহমানকে নড়াইল জেলা আওয়ামীলীগের প্রাথমিক সদস্যপদও বাতিল করা হয়।

এর আগে ১৫ জুন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ উপাচার্য বরাবর প্রেরিত এক স্মারকলিপিতে জাহিদুর রহমানের মন্তব্যকে ‘দুঃখজনক’ আখ্যা দিয়ে যথাযথ ব্যবস্হা গ্রহণের দাবি জানায়।
পরে ওইদিন বিকেলে রাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম আব্দুস সোবহানের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে শিক্ষক কাজী জাহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ও সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু।

প্রসঙ্গত, গত ১ জুন রাতে মোহাম্মদ নাসিম অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে ‘তাঁর অসুস্থতা নিয়ে’ নিজের ফেসবুকে স্টাটাস দেন শিক্ষক কাজী জাহিদুর রহমান। সেই স্টাটাসে সরাসরি মোহাম্মদ নাসিমের নাম উল্লেখ না থাকলেও তাঁকে ইঙ্গিত করে ‘বিষোদাগার’ করার অভিযোগ ওঠে কাজী জাহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে। সেখানে বিক্ষিপ্তভাবে ‘আপত্তিকর’ ভাষা ব্যবহার করে জাতীয় চার নেতার অন্যতম ক্যাপ্টেন এম. মনসুর আলীর সন্তান মোহাম্মদ নাসিমকে তিনি পরামর্শ দেন- ‘করোনাকে ঘুষ দিয়ে মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে আসার’!

পরদিন ২ জুন বিকেলে ফের স্টাটাস দেন কাজী জাহিদুর। সেখানেও নাম উল্লেখ না করে চিকিৎসা খাত নিয়ে সমালোচনা করেন। ‘তাঁর আমলে’ শব্দের ব্যবহারে কৌশলে মোহাম্মদ নাসিমকে ইঙ্গিত করেন। সেখানে ‘অসুস্থ নাসিমকে’ ইঙ্গিত করে অক্সিজেনের পরিবর্তে তাঁকে কার্বনডাইঅক্সাইড দেওয়ার দাবি তোলেন তিনি। আর ৫ জুন ‘কাজ করে না এমন ভেন্টিলেটর দিয়ে শ্বাস দেয়ার ব্যবস্থা করা হোক’ এমন বাক্যও লেখেন কাজী জাহিদুর। ওই স্টাটাসে সবশেষে নাসিমকে ইঙ্গিত করে ‘এসব চোর’ বলে সম্বোধন করা হয়।

ওই পোস্টগুলো প্রথমে সেভাবে সামনে না আসলেও মোহাম্মদ নাসিম মারা যাওয়ার পর এবং বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক একই ধরনের অভিযোগে গ্রেফতারের পর এটা নিয়েও সমালোচনায় মুখর হয়েছেন ছাত্রলীগ ও আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা। সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে শিক্ষক কাজী জাহিদুরের শাস্তির দাবিও তুলেছেন তারা।