লাদাখে ভারতের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি চীনকে চিন্তায় ফেলেছে

ladak

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ৩ জুলাই লাদাখ সফর ও সেখানে তার আক্রমণাত্মক বক্তব্য চীনকে চিন্তায় ফেলেছে।

লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় গত ১৫ জুন ২০ জন ভারতীয় সেনার মৃত্যুর পর লাদাখে মোদির এই সফর ভারতীয় সেনাবাহিনীকেও অত্যন্ত উদ্বুদ্ধ করেছে। একইসঙ্গে লাদাখে ভারতের সামরিক শক্তি বৃদ্ধিও চীনকে চিন্তায় ফেলেছে।

করোনাভাইরাস পরবর্তী বিশ্ব রাজনীতিকে নিজের দিকে আনতে চেষ্টা করছেন নরেন্দ্র মোদি। নাম না নিয়ে তিনি চীনের আগ্রাসী নীতির কথা তুলে ধরেন এবং বলেন, এটি এখন উন্নয়নের যুগ এবং আগ্রাসী শক্তি হয় হেরে গেছে, নয়তো পিছিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।

মোদির একটি বাক্য- দুর্বল কখনও শান্তি আনতে পারে না, সবলরাই পারে, যা কৌশলী আঘাত করেছে ২১টি দেশের সঙ্গে সীমানা সংঘাতে লিপ্ত চীনকে।

এই কৌশলী আঘাতের পরও চীন এবং তার অনুগত সোশাল মিডিয়া বা সামাজিক মাধ্যমগুলো নীরব।

শুধু ৩ জুলাই বিকালে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েল মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান বলেছেন, দুই দেশের মধ্যে সামরিক ও কূটনৈতিক স্তরে কথাবার্তা চলছে এবং কোনো পক্ষেরই উচিত নয় সমস্যাকে জটিল করা বা বাড়িয়ে দেয়া।

অথচ ২০ জন ভারতীয় সেনার মৃত্যুর পরদিন পিএলএ’র মুখপাত্র ঝাং শিউলি বলেন, গালওয়ান চিরদিনই চীনের ছিল। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও তখন ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিবৃতি দেয়।

তবে নরেন্দ্র মোদির লাদাখ সফরের পর এখনও কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি চীন বা ৫৯টি চীনা অ্যাপ ভারত বন্ধ করে দেওয়ার পরও কোনো বিবৃতি দেয়নি। শুধু দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ভারত যেন এই ধরনের কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আন্তর্জাতিক আইন কানুন মেনে চলে যাতে বিদেশি ও চীনা বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষিত থাকে।

চীন একটি দৃঢ় ও শক্তিশালী প্রতিপক্ষ ঠিকই কিন্তু মোদির লাদাখ সফর চীনের মিথ্যা কথাগুলো সামনে এনে দিয়েছে। গত পনেরো দিনে ভারতের নেয়া বিভিন্ন কার্যকলাপ চীনকে বুঝিয়ে দিয়েছে যে ভারতও ব্যবস্থা নিতে জানে।

এর আগে ভারত কখনও হংকংয়ের সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেনি। কিন্তু সম্প্রতি পাশ হওয়া একটি আইনের বিরূদ্ধে সোচ্চার হয়েছে, যেখানে হংকংয়ের মানুষের নাগরিক অধিকার খর্ব করা হয়েছে। জাতিসংঘে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি রাজীব চন্দ্র বলেছেন, ভারত হংকংয়ের পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে।

ভারত লাদাখে সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করে চীনকে চিন্তায় ফেলেছে ও চীনের সুবিধাজনক অবস্থাকে প্রতিহত করতে চাইছে। চীনের কোম্পানিগুলোর প্রবেশ ভারতে বন্ধ হয়ে গেছে, ভারতীয় রেল চীনের যন্ত্রপাতি নেয়া বন্ধ করে দিয়েছে।

তাদের সার্ভিস আপগ্রেড টেন্ডার থেকে চীনা কোম্পানিকে বাদ দিয়ে দিয়েছে। ভারতের সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় চীনা কোম্পানির বিনিয়োগ বন্ধ করেছে।

ভারতের বিভিন্ন রাজ্যও ভারত সরকারের পথ অনুসরণ করেছে। সাংহাই টানেল ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানিকে দিল্লি-মিরাট আরআর টিএস করিডোর থেকে বাদ দেয়ার দাবি উঠেছে। এই কোম্পানিটি এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে সব থেকে কম দর দিয়েছে।

মহারাষ্ট্র চীনের কোম্পানিগুলোর ৫ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাতিল করছে। এর মধ্যে পুনেতে গ্রেট ওয়াল মোটরর্সের কারখানাও আছে।

সামরিক শক্তি বৃদ্ধি ছাড়াও ভারত কূটনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধিতে অনেক এগিয়ে গেছে। ২৭ জুন ভারতীয় নৌবাহিনী ও জাপানের নৌবাহিনী একসঙ্গে ভারত মহাসাগরে মহড়া দিয়েছে। ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী সম্প্রতি রাশিয়া সফরে গিয়ে অত্যাধুনিক মিসাইল ও যুদ্ধ বিমান ক্রয়, পুরোনো বিমানের স্কোয়াড্রন আধুনিকীকরণ ইত্যাদি চুক্তি করে এসেছেন।

প্রধানমন্ত্রী মোদী রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি পুতিনের সঙ্গে এ ব্যাপারে ২ জুলাই কথা বলেছেন ও পুতিন তাকে দুই দেশের স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপের ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছেন। এছাড়া ১ জুলাই আমেরিকার সেক্রেটারি অফ স্টেট ভারতের ৫৯টি চীনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করাকে সমর্থন করেছেন।