সংসদে বিল পাস: ‘প্রয়োজন অনুসারে’ চলবে ভার্চুয়াল আদালত

মহামারী করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) প্রকোপের মধ্যে প্রয়োজনের তাগিদে শুরু করা ভার্চুয়াল আদালত ‘প্রয়োজন অনুসারে’ চালানোর বিধান রেখে জাতীয় সংসদে ‘আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার বিল-২০২০’ বিল পাস হয়েছে।

বুধবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিলটি সংসদে পাসের প্রস্তাব করেন। পরে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়।

এর আগে বিলের ওপর দেয়া জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনীগুলো প্রস্তাবগুলোর নিষ্পত্তি করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

বিলটি পাসের প্রক্রিয়ার সময় জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাবে জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ অভিযোগ করেন ‘ভার্চুয়াল কোর্টের’ কারণে আইনজীবীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অনেকের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ না থাকায় সমস্যা হচ্ছে। এর জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, বিদেশি একটি প্রতিষ্ঠান এ বিষয়ে আইনজীবীদের প্রশিক্ষণ দেবে।

বিলের সংজ্ঞায় ভার্চুয়াল উপস্থিতি বলতে অডিও-ভিডিও বা অনুরূপ অন্য কোনো ইলেকট্রনিক পদ্ধতির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তির আদালতের বিচার বিভাগীয় কার্যধারায় উপস্থিত থাকা বা অংশগ্রহণ বোঝানো হয়েছে।

বিলে অডিও-ভিডিও বা অনুরূপ অন্য কোনো ইলেকট্রনিক পদ্ধতির মাধ্যমে পক্ষগণ, বা তাদের আইনজীবী বা সংশ্লিষ্ট অন্য ব্যক্তি বা সাক্ষীগণের ভার্চুয়াল উপস্থিতি নিশ্চিতক্রমে যে কোনো মামলার বিচার, বিচারিক অনুসন্ধান বা দরখাস্ত অথবা আপিল শুনানি বা সাক্ষ্যগ্রহণ, বা আদেশ বা রায় প্রদান করতে পারবে বলে বিধান করা হয়।

বিলের বিধানের বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাস রোধকল্পে দেশের সব আদালত ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহে সাধারণ ছুটি ঘোষণাসহ জনসমাগম হয় এ ধরনের সব কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এতে জনগণের অনিশ্চিত বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে এ বিধান করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বিশেষ পরিস্থিতি ছাড়া বিদ্যমান বিধান অনুযায়ীই বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।

বিলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বা ক্ষেত্রমত, হাইকোর্ট বিভাগ প্রয়োজন অনুসারে সময় সময় প্রাকটিস নির্দেশনা (বিশেষ বা সাধারণ) জারি করতে পারবে বলে বিধান করা হয়।
বিলে আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি অধ্যাদেশ ২০১০ রহিত করার বিধান করা হয়।

জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ, মুজিবুল হক, পীর ফজলুর রহমান, রওশন আরা মান্নান ও শামীম হায়দার পাটোয়ারী এবং বিএনপির হারুনুর রশীদ বিলের ওপর জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাব আনলে তা কন্ঠ ভোটে নাকচ হয়ে যায়।

প্রসঙ্গত, করোনা মহামারীর মধ্যে ভিডিও কনফারেন্সসহ অন্যান্য ডিজিটাল মাধ্যমে ভার্চুয়ালি আদালতের কার্যক্রম চালানোর সুযোগ রেখে গত ৭ মে মন্ত্রিসভা ‘আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার বিল-২০২০’ অধ্যাদেশ অনুমোদন দেয়ার পর তার ভিত্তিতে ভার্চুয়াল আদালতের কাজ শুরু হয়। নিয়ম অনুযায়ী অধ্যাদেশ জারির পর তা সংসদে তোলা হয় গত ১০ জুন। অধ্যাদেশটি আইনে পরিণত করতে হলে চলমান অধিবেশনের প্রথম বৈঠকের তারিখ থেকে পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়কে জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করে অনুমোদন করাতে হবে। না হলে ৩০ দিন অতিবাহিত হলে অধ্যাদেশটির কার্যকারিতা লোপ পাবে।

তার পরিপ্রেক্ষিতে অধ্যদেশটি আইন হিসেবে জারি করতে গত ২৩ জুন সংসদে বিল তোলা হয়। ওই দিন জাতীয় সংসদে বিলটি উত্থাপনের পর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।

পরে শুধু জরুরি প্রয়োজন হলেই ভার্চুয়াল মাধ্যমে আদালতের কার্যক্রম চালানোর পক্ষে মত দেয় আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়বিষয়ক সংসদীয় কমিটি। সংসদে বিলটি আসার পর তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং আইন বিশেষজ্ঞদের মত নিয়ে এই সুপারিশ চূড়ান্ত করে সংসদীয় কমিটি।