আড়াই হাজার কোটি টাকায় মেসিকে কিনতে চেয়েছিল রিয়াল

messi

লিওনেল মেসি বার্সেলোনা ছাড়তে চেয়েছিলেন গত আগস্টে। মেসি আর বার্সা যেখানে একসূত্রে গাঁথা, সেখানে বিচ্ছেদের সুর বেজে ওঠায় চোখ কচলে উঠেছিল ইউরোপের বড় বড় ক্লাবগুলোর। মেসিকে কেনার চেষ্টা করতে দেখা গেছে ম্যানচেস্টার সিটি ও পিএসজিকে। শেষ পর্যন্ত কারও ভাগ্যেই শিঁকে ছেড়েনি। চুক্তির মারপ্যাঁচ ভেঙে বার্সা ছাড়া সম্ভব হয়নি মেসির।

তবে মেসিকে বার্সা থেকে উড়িয়ে আনার সেটাই যে প্রথম চেষ্টা ছিল না ইউরোপের ক্লাবগুলোর, তা তো প্রায় সর্বজনবিদিতই। সময়ের তো বটেই, সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলারকে কে না দলে পেতে চাইবে! বার্সেলোনার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদও মেসিকে পেতে চেষ্টা করেছে অনেকবার, এমন গুঞ্জন শোনা যায় নিয়মিতই। এবার সেটির সত্যতার প্রমাণও মিলল। ২০১৩ সালেও মেসিকে দলে টানার চেষ্টা করেছে রিয়াল মাদ্রিদ।

দলবদল-সংক্রান্ত সংবাদের ক্ষেত্রে স্কাই স্পোর্টসের ইতালিয়ান সাংবাদিক জিয়ানলুকা ডি মার্জিও–র তথ্যের বিশ্বস্ততা নিয়ে সংশয় সামান্যই। ইতালিয়ান এ সংবাদকর্মী তাঁর বই ‘গ্র্যান্ড হোটেল কালচোমের্কাতো’য় প্রকাশ করেছেন এমন তথ্য। ২০১৩ সালে বার্সায় মেসির ২৫ কোটি ইউরো বাইআউট ক্লজ (বার্সেলোনার ইচ্ছার বাইরে মেসিকে কিনতে যে অর্থ দিতে হতো আগ্রহী ক্লাবকে) পরিশোধ করে তাঁকে কেনার প্রস্তাব দিয়েছিল রিয়াল। বাংলাদেশি মুদ্রায় অঙ্কটা প্রায় ২ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা।

তবে শুধু যে রিয়ালই মেসিকে চেয়েছে, তা নয়। আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডকে পেতে প্রস্তুতি নিয়েছিল চেলসি। জোসে মরিনিও তখন চেলসির কোচ। প্রতি মৌসুমে মেসির ৫ কোটি পাউন্ড নেট পারিশ্রমিক দিতেও রাজি ছিল এই ইংলিশ ক্লাব। ডি মার্জিও–র ভাষায় চেলসির এই প্রচেষ্টা ছিল ‘দলবদলের বাজারে সবচেয়ে বড় অজানা গল্প।’

২০১৩ সালে মেসির পরিবারের বিপক্ষে কর ফাঁকির তদন্ত শুরু করেছিল স্প্যানিশ সরকার। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে তখন বার্সা ছাড়ার ইচ্ছার কথা পরে নিজেই জানিয়েছেন মেসি। চেলসি ২০১৪ সালে এ সুযোগই নিতে চেয়েছিল।

দলবদলের বাজারে নানা ঘটনা নিয়ে সাজানো ডি মার্জিও–র এ বইয়ে প্রকাশ হয়েছে, তখন মেসির সঙ্গে ভিডিওবার্তায় কথা বলে তাঁকে নাকি বার্সা ছাড়ার ব্যাপারে রাজিও করে ফেলেছিলেন মরিনিও। কিন্তু মেসির বাবা হোর্হে এবং বার্সার সাবেক মিডফিল্ডার ডেকোর হস্তক্ষেপে সে যাত্রায় আর্জেন্টাইন তারকার আর স্পেন ছেড়ে যাওয়া হয়ে ওঠেনি। চেলসির সঙ্গে মেসি ব্যক্তিগত শর্তাবলীর বিষয়ে একমত হলেও যেতে আর পারেননি।

রিয়াল মাদ্রিদ ঠিক একই শর্তে মেসিকে কেনার চেষ্টা করেছে তার আগের বছর—২০১৩। রোনালদিনহো ২০০৮ সালে বার্সা ছাড়ার পর থেকেই ক্লাবটার ‘আইকন’ মেসি। এ অবস্থায় রিয়াল সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ তাঁকে কেনার চেষ্টা করেছিলেন। বার্সার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাবের এ চেষ্টায় তখন জল ঢেলে দিয়েছিলেন মেসি। যেতে রাজি হননি।

এ নিয়ে ডি মার্জিও তাঁর বইয়ে জানান, ‘২০১৩ সালে প্রস্তাবটি দিয়েছিলেন রিয়াল মাদ্রিদ সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ। আর্জেন্টাইনের জন্য তিনি ২৫ কোটি ইউরো (রিলিজ ক্লজ) দিতে চেয়েছিলেন। এই টাকাটা রাখা ছিল সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর পুনঃসংস্কারের জন্য। কিন্তু মেসি নাকি প্রস্তাবটা শুনতেই রাজি ছিলেন না। সোজাসাপ্টা বলেছিলেন, ‘‘রিয়াল মাদ্রিদে যাচ্ছি না। তোমরা সময় অপচয় করছ।’’

বছর দুয়েক আগে ফুটবলের গোপন তথ্য ফাঁস করে আলোচনায় আসা ফুটবল লিকস জানিয়েছিল, মেসির জন্য বছরে ২৩ মিলিয়ন বা ২ কোটি ৩০ লাখ ইউরো বেতনে আট বছরের চুক্তির প্রস্তাব করেছিলেন রিয়াল সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ। চুক্তিতে মেসির মুখপাত্র ও বাবা হোর্হে মেসির জন্য মোট দলবদল মূল্যের ৫% কমিশন রাখা ছিল। কিন্তু প্রস্তাবটা ফিরিয়ে দেন মেসি।

বার্সায় ২০২১ সালের জুনে বর্তমান চুক্তির মেয়াদ ফুরোবে মেসির। তখন তিনি ক্লাবটি ছাড়বেন না চুক্তির মেয়াদ বাড়াবেন তা এখনো নিশ্চিত নয়। সংবাদমাধ্যম এর আগে জানিয়েছে, বার্সা সভাপতির পদে নতুন কেউ এলে মেসি ক্লাবটিতে থেকে যাওয়ার কথা ভাবতেও পারেন। বর্তমান সভাপতি জোসেপ মারিয়া বার্তোমেউয়ের সঙ্গে বনিবনা নেই মেসির।