ফল বাতিল ও পুনরায় উপনির্বাচন চেয়ে বিএনপির বিক্ষোভের ডাক

mirza fokrul
ফাইল ছবি

ঢাকা-৫ ও নওগাঁ-৬ আসনের উপনির্বাচনের ঘোষিত ফলাফল বাতিল ও পুনরায় নির্বাচনের দাবিতে দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। কর্মসূচির মধ্যে আছে ১৯ অক্টোবর সারাদেশে মহানগর ও জেলায় এবং ২০ অক্টোবর থানা-উপজেলায় বিক্ষোভ সমাবেশ করবেন দলটির নেতাকর্মীরা।

রবিবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এ কর্মসূচির ঘোষণা করেন মির্জা ফখরুল। শনিবার রাতে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব নির্বাচন কমিশন (ইসি) সরকারের ‘বংশবদ ক্রীড়ানক’ হিসেবে কাজ করছে বলে অভিযোগ করেন।

পাবনা-৪, ঢাকা-৫ ও নওগাঁ-৬ আসনের উপ-নির্বাচনের ভোট নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যে প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘তিনটি উপ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও সরকার দলীয় সন্ত্রাসী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের মতোই ত্রাস সৃষ্টি করে এবং ভোট ডাকাতি করে জাল ভোট মেরে বিরোধী দলের এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে জোর করে বের করে দিয়ে ভোট ছিনতাই করেছে। নির্বাচন কমিশন নির্বিকার দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে।’

ফখরুল বলেন, ‘রিটার্নিং অফিসার ধানের শীষের প্রার্থীদের অভিযোগ গ্রহণ করেনি। অবলীয়লায় মিথ্যা কথা বলেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার, কোনো অভিযোগ নাকি তারা (বিএনপি প্রার্থীরা) দেন নাই। ঢাকা থেকেই ১৬২টা অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। বিনা ভোটের স্বঘোষিত সরকার একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার নীল নকশা বাস্তবায়নের জন্য ভোট ডাকাতির কৌশলে জনগণকে আবারও প্রতারিত করলো। অযোগ্য এবং সরকারের বশংবদ ক্রীড়ানক নির্বাচন কমিশন এই ভূমিকা পালন করছে।’

তিন উপ নির্বাচনে ভোট কারচুপির ঘটনা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের মারধর করে বের করে ওরা জাল ভোট দিয়ে ভোট ডাকাতি করেছে, ত্রাস সৃষ্টি করেছে। নির্বাচন কমিশন এভিএম দিয়ে ভুয়া ফলাফল তৈরি করে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করেছে। আমরা নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছি এবং সেই নির্বাচন বাতিল করে পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি।’

কোনো মধ্যবর্তী নির্বাচন হবে না- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা তো একথা (মধ্যবর্তী) এখনও বলিনি। আমরা গত নির্বাচন যেটা হয়েছে সেটাই তো মানছি না, আমরা ওইটাকে অবৈধ বলছি, আমরা ওইটাকে বাতিল করার কথা বলছি। আমাদের প্রত্যেকটা স্টেটমেন্ট একথা বলেছি যে, এই নির্বাচন আমরা মানি না, এই নির্বাচন বাতিল করে ফ্রেশ নির্বাচন নির্বাচন দেওয়া হোক।’

তিনি বলেন, ‘মধ্যবর্তী নির্বাচনের কথা আমরা তো বলিনি ভাই। ব্যক্তিগতভাবে কেউ কিছু বললে, যারা সিভিল সোসাইটিতে আছেন তাদের মধ্যে কেউ বলতে পারেন। আমরা বিশ্বাস করি, আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। যে কারণে আমরা নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের কথা বলে এসেছি, এটাতে আমরা বিশ্বাস করি।’

নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতিতে উদ্বেগ জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সরকারি দলের মদদপুষ্ট এক শ্রেণির ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ও সরকারি ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতা ও দুর্নীতির কারণে দ্রব্যমূল্য বেড়েই চলেছে।’

আইন সংশোধন করে মৃত্যুদন্ডের বিধান সংযোজন ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন সমস্যার একমাত্র সমাধান নয় বলে মন্তব্য করেন ফখরুল।

‘ধর্ষকদের সরকারি দলের প্রশ্রয় অথবা ধর্ষক সরকারি দলের সদস্য বলে কোনো বিচার হয় না। গতকাল ধর্ষণবিরোধী লংমার্চে আন্দোলনকারীদের ওপর ফেনীতে পুলিশের সহায়তায় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের হামলা প্রমাণ করেছে, পুলিশ গতকাল সারাদেশে যে ধর্ষণবিরোধী সমাবেশ করেছে তা শুধু লোক দেখানো। প্রকৃত অর্থে সরকারের সদিচ্ছার অভাব ও ব্যর্থতায় ধর্ষণের মতো অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে।’

মির্জা ফখরুল বলেল, ‘আইএমএফের যে রিপোর্ট আমরা দেখছি, ভারতের জিডিপি ১০% কমে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সেখানে বাংলাদেশের জিডিপি বেশি করে দেখানো, বাংলাদেশে অর্থনীতি এতো চমৎকার দেখানো, সাকসেসফুল দেখানো হচ্ছে। এর পেছনে আরও অনেক উদ্দেশ্য আছে। প্রথম থেকে বাংলাদেশকে বলা হয়েছে রোল মডেল। আপনারা দেখবেন যে, একটা বিশেষ মহল জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে এই রোল মডেলের কথা বলছে, এটা প্রচার করছে। যেখানে বাংলাদেশের মানুষের চাকরি নেই, যে হারে বেকারত্ব বেড়েছে, শিক্ষিত ছেলেদের চাকরি নেই। সেক্ষেত্রে রোল মডেল কিভাবে বলবেন? কোনো শুভঙ্করের ফাঁকি দিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে বোকা বানানো হচ্ছে?’