নিজের কিডনি দিয়ে স্বামীর জীবন বাঁচিয়ে স্ত্রী সেতুর দৃষ্টান্ত

‘মা-বাবা পছন্দ করে বিয়ে দিয়েছে। বিয়ের পর আমিও তাকে ভালোবেসে ফেলেছি। আমাদের একটি সন্তান আছে, বিয়ের পর আমার স্বামীকে বলেছিলাম মরলে একসাথে মরবো, বাঁচলেও একসাথেই বাঁচব। আমার স্বামী যদি মারা যায় তাহলে আমি কাকে নিয়ে বাঁচবো। তাই আমি আমার স্বামীকে কিডনি দিয়েছি। দুই জন একটি করে কিডনি নিয়ে যতদিন আল্লাহ্ বাঁচিয়ে রাখেন ততদিন বেঁচে থাকবো’ কথাগুলো হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে বলছিলেন ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার হরিশপুর গ্রামের রাশিদুল ইসলামের স্ত্রী সেতু খাতুন

স্বামী রাশিদুলের ২টি কিডনি নষ্ট হওয়ার কারণে তিনি তার একটি কিডনি দিয়েছেন। ভালোবাসার এমন অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন প্রত্যন্ত গ্রামের সহজ সরল এক গ্রাম্যবধু সেতু খাতুন।জানা যায়, সাড়ে ৩ বছর আগে পারিবারিকভাবে ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার হরিশপুর গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে রাশিদুলের সাথে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হাতিভাঙ্গা গ্রামের হবিবর রহমানের মেয়ে সেতু খাতুনের বিয়ে হয়। আনসার সদস্য রাশিদুল ইসলাম বিয়ের পর স্ত্রীর সাথে গড়ে ওঠে ভালোবাসার গভীর সম্পর্ক। ভালোই চলছিল তাদের জীবন। কিন্তু হঠাৎ ৩ মাস পূর্বে রাশিদুল ইসলাম অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে পরীক্ষা শেষে তার দুটি কিডনি বিকল হয়েছে বলে চিকিৎসকরা জানান। মধ্যবিত্ত পরিবার হওয়ায় কিডনি নতুন করে নেওয়ার সামর্থ্য নেই তার পরিবারের।

মৃত্যুপথযাত্রী স্বামীকে বাঁচাতে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন তার স্ত্রী সেতু খাতুন। নিজের একটি কিডনি স্বামীকে দেন। রাশিদুল ইসলামের চাচাতো ভাই সবুজ হোসেন বলেন, গত ১২ নভেম্বর রাজধানীর শ্যামলী ৩ নং সড়কের সিকেডি কিডনি হাসপাতালে তাদের অপারেশন করা হয়। ১২ নভেম্বর বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টার দিকে অপারেশন শুরু হয়। রাত ৯ টায় সফলভাবে সম্পন্ন হয় অপারেশন। বর্তমানে স্বামী ও স্ত্রী দুই জনই সুস্থ আছেন। রাশিদুল ইসলাম আইসিইউতে আর স্ত্রী সেতু জেনারেল বেডে আছেন। ভালোবাসার এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করে নজির সৃষ্টি করায় প্রসংশায় ভাসছেন সেতু খাতুন। সেতুর মা নুরনাহার বেগম বলেন, আমার মেয়ে আমার জামাইয়ের জন্য যা করেছে তাতে আমরা খুশি। তিনি সকলের কাছে দোয়া কামনা করেছেন।