‘যত বড় রুই-কাতল হোক, অর্থপাচারে ছাড় নেই’

high-court

বিদেশে অর্থপাচারকারী ও দুর্নীতিবাজরা যত বড় রুই-কাতলই হোক না কেন, তাদেরকে ছাড় দেয়া হবে না বলে সতর্ক করেছেন উচ্চ আদালত। অন্যদিকে আলোচিত পিকি হালদারের বিরুদ্ধে দুই মাসেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট।

বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

বুধবার মামলার শুনানিকালে দুদকের আইনজীবীর উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘অর্থ পাচারকারীরা যত বড়ই রুই-কাতলা হোক না কেন তাদেরকে ছাড় দেয়া হবে না। জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান যে লক্ষ্যে দেশকে স্বাধীন করেছেন তার সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করা আমাদের সবার দায়িত্ব-কর্তব্য। সে লক্ষ্যে আপনারা কাজ করুন। সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়।’

আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক।

শুনানিতে আদালত বলেন, যারা দুর্নীতিবাজ, যারা অর্থ পাচার করে তাদের ছাড় দিলে চলবে না।

এসময় খুরশীদ আলম খান বলেন, অবশ্যই। তখন আদালত বলেন, তারা যত বড় রুই-কাতল হোক না কেন তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। আমাদের সবার উচিত হলো দেশের প্রোপার্টি রক্ষা করা। এটা তো আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। ২১ অনুচ্ছেদ অনুসারে। কাজেই শুধু কোর্ট করবে অন্যরা করবে না তাতো না, সবাইকে করতে হবে।

আদালত দুর্নীতিবাজদের বিষয়ে আরও বলেন, তারা যাতে আইনের জালে ধরা পড়ে সে দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে। আমাদের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে হবে। জাতির জনক স্বপ্ন দেখেছিলেন এ দেশকে সোনার বাংলা গড়ার। কাজেই ওনার যে স্বপ্ন সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।

এক পর্যায়ে আদালত বলেন, খুব আনফরচুনেট আড়াই মাস হয়ে গেলো একটা অর্ডার হলো না। ওয়ারেন্ট অব অ্যারেস্টের।

তখন খুরশীদ আলম খান বলেন, আমি যোগাযোগ করেছি, জানিয়েছি। আদালত বলেন, আপনি বলবেন, এটা নিয়ে উচ্চ আদালত কনসার্ন। জবাবে খুরশীদ আলম খান বলেন, জি এটা কনভে করবো (এটা জানিয়ে দেবো)।

পরে আদালত তার আদেশে পিকে হালদারের বিরুদ্ধে করা এজাহারের ফটোকপি এবং গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আবেদনের কপি দাখিলের নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে আগামী ৯ ডিসেম্বরের মধ্যে দুদককে এসব তথ্য-উপাত্ত আদালতে দাখিল করতে নির্দেশ দিয়ে সেদিন মামলার পরবর্তী শুনানির দিন নির্ধারণ করেন।

এর আগে গত ৭ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের একই বেঞ্চে এ সংক্রান্ত একটি আবেদন করেছিল আইএলএফএসএল। সে আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত জানিয়েছিলেন- পিকে হালদার কবে, কখন, কীভাবে দেশে ফিরতে চান তা আইএলএফএসএল লিখিতভাবে জানালে সে বিষয়ে পরবর্তী আদেশ দেওয়া হবে। পিকে হালদারের দেশে ফেরার বিষয়ে গত ২০ অক্টোবর হাইকোর্টকে জানায়। পিকে হালদারের প্রতিষ্ঠান আইএলএফএসএল’র পক্ষ থেকে হাইকোর্টকে জানানো হয়, ২৫ অক্টোবর দুবাই থেকে অ্যামিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ঢাকা আসার জন্য টিকিট কেটেছেন। বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টায় ফ্লাইটটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করার কথা রয়েছে।

সার্বিকদিক বিবেচনার পর প্রশান্ত কুমার (পিকে হালদার) হালদারকে দেশে ফেরার অনুমতি দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে পিকে হালদার দেশে ফেরার সঙ্গে সঙ্গে তাকে গ্রেপ্তার করতে পুলিশের আইজি এবং ইমিগ্রেশন পুলিশকে নির্দেশ দেন আদালত। পাশাপাশি কারাগারে থাকাবস্থায় পিকে হালদার যেন অর্থ পরিশোধের সুযোগ পান সে বিষয়ে সুযোগ দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। পরে আর তিনি অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে দেশে ফেরেননি।