হাফিজ-শওকতের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বিএনপি

কারণ দর্শানোর নোটিশের (শোকজ) জবাব দিয়েছেন বিএনপির দুই ভাইস চেয়ারম্যান। মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ তার বিরুদ্ধে আনা ১১টি অভিযোগের প্রতিটির জবাব দিয়েছেন। হাইকমান্ডকে চিঠি দেয়ার পাশাপাশি তিনি সংবাদ সম্মেলন করেও বিস্তারিত জানিয়েছেন। এর দুদিন আগেই শোকজের সংক্ষিপ্ত জবাব দিয়েছেন বিএনপির আরেক ভাইস চেয়ারম্যান সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ।

দুই ভাইস চেয়ারম্যান কারণ দর্শানো চিঠির জবাব দিলেও এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বিএনপি। হঠাৎ রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ ছড়ানো এ ইস্যু নিয়ে দেশব্যাপী রাজনৈতিক মহলে এখনও আলোচনা হচ্ছে। বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়। দুই জ্যেষ্ঠ নেতার বিষয়ে দল কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটি নিয়ে ভেতরে-বাইরে কৌতূহল রয়েছে।

তবে দলীয় সূত্রে জানা গেছে, হাফিজউদ্দিন ও শওকত মাহমুদের বিষয়ে কঠোর কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না বিএনপি। তাদের বিষয়ে হাইকমান্ড ইতিবাচক। এরই মধ্যে হাফিজ ও শওকতের চিঠি পৌঁছে গেছে হাইকমান্ডের কাছে। শনিবার অনুষ্ঠিত দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।

শনিবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। সেখানে বিষয়টি আলোচনায় উঠেনি।

বিএনপির একজন জ্যেষ্ঠ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দুই ভাইস চেয়ারম্যানকে শোকজ করায় দলের নেতাকর্মীদের ভেতরে ‘বিরূপ প্রতিক্রিয়ার’ সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে মেজর হাফিজের মতো একজন স্বীকৃত মুক্তিযোদ্ধাকে শোকজ অনেক জ্যেষ্ঠ নেতাকে ক্ষুব্ধ করেছে। কিন্তু দলীয় শৃঙ্খলার বিষয়টি মাথায় রেখে কেউ এ নিয়ে মুখ খুলছেন না। এটি দলের ঐক্যে ফাটল সৃষ্টি করেছে।

বিষয়টি বিএনপির হাইকমান্ডও উপলব্ধি করেছে। তাই হাফিজউদ্দিন আহমেদ ও শওকত মাহমুদের বিরুদ্ধে আপাতত কঠোর কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না বিএনপি। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দিক থেকে এ ধরনের বার্তা দেয়া হয়েছে বলে দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।

সোমবার গুলশান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এ ঘটনাকে বড় করে দেখছি না।

তিনি বলেন, বিএনপি ঐক্যবদ্ধ আছে। বড় দলে দু–একটি ঘটনা ঘটবে। এটিকে এত বড় করে যারা দেখছেন, তারা ঠিকভাবে দেখছেন না। বিষয়টি নিয়ে এখনও আলোচনা হয়নি।

দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ এনে গত ১৪ ডিসেম্বর বিএনপির দুই ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজউদ্দিন আহমেদ ও শওকত মাহমুদকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় বিএনপি।

১৫ ডিসেম্বর শওকত মাহমুদ এবং শনিবার হাফিজউদ্দিন আহমেদ নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দফতরে তাদের জবাব দেন।

হাফিজ তার ৫ পৃষ্ঠার জবাবটি স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উপস্থাপনের অনুরোধ জানিয়েছেন বিএনপি নেতৃত্বের কাছে। তার বিরুদ্ধে যে ১১টি অভিযোগ আনা হয়েছে, সেগুলো ‘সঠিক নয়’ দাবি করে সেগুলো খণ্ডন করেছেন তিনি।

অন্যদিকে শওকত মাহমুদ তিন লাইনে জবাব দিয়েছেন। বলেছেন, জাতীয়তাবাদী দলের আদর্শের বাইরে, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে শৃঙ্খলাবিরোধী কোনো কাজে তিনি জ্ঞাতসারে সম্পৃক্ত ছিলেন না। এর পরও তার অজান্তে কোনো কাজে জড়িত থাকলে তার জন্য তিনি দুঃখিত।
তাদের জবাব ইমেইল করে লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে পাঠানো হয়। তিনি এ নিয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে কোনো আলোচনা তোলেননি।

প্রসঙ্গত বিএনপি, জামায়াত, ঐক্যফ্রন্ট ও বামসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও কিছু পেশাজীবী নেতা ‘সরকার পতন’র দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে বলে বেশ কিছু দিন ধরে প্রচার করা হয়। এ জন্য ১৪ ডিসেম্বর দিনটিকে বেছে নেয়া হয়। এ কর্মসূচিতে অংশ না নিতে শেষ মুহূর্তে তারেক রহমানের পক্ষ থেকে দলীয় নেতাকর্মীদের কঠোর বার্তা দেয়া হয়। অভিযোগ উঠেছে, দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে হাফিজউদ্দিন ও শওকত মাহমুদ ওই প্রক্রিয়ায় যুক্ত হন। এ কারণে তাদের শোকজ করা হয়। হাফিজউদ্দিনকে ৫ দিন ও শওকত মাহমুদকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে শোকজের জবাব দিতে বলা হয়েছে। দুই নেতাই তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শোক চিঠি ইস্যু করার পর বৃহস্পতিবার গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং ২০-দলীয় জোটের অন্যতম শরিক কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেন। এর পর তারা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ এক নেতা জানান, দলের দায়িত্বশীল নেতাদের পরামর্শে হাফিজউদ্দিন ও শওকত মাহমুদের বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও ইতিবাচক। অর্থাৎ তাদের বিষয়ে তিনি কঠোর হবেন না।

শওকত মাহমুদ জাতীয় প্রেসক্লাব ও বিএফইউজের সাবেক সভাপতি। সবশেষ কাউন্সিলে তিনি দলের ভাইস চেয়ারম্যান হন। আর হাফিজউদ্দিন আহমেদ ৬ বারের সংসদ সদস্য। তিনি বিএনপির সময়ে একাধিকবার মন্ত্রী হন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি দলের ভাইস চেয়ারম্যান পদে আছেন।