৭ বছর ধরে বিজেপির সঙ্গে গোপন আঁতাত ছিল সেই শুভেন্দুর!

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাবেক ঘনিষ্ঠ সহচর ও পশ্চিমবঙ্গের পরিবহন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে নতুন তথ্য উঠে আসছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ২০১৪ সাল থেকেই তিনি গোপনে বিজেপির সঙ্গে আঁতাত করেছিলেন।

রোববার এক সমাবেশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই এ তথ্য জানান।

শুভেন্দুর প্রতি ইঙ্গিত করে মমতা বলেন, ‘একসময় খুব ভালোবাসতাম। কী না করিনি। ২০১৪ সাল থেকে নাকি বিজেপির সঙ্গে যোগ ছিল। মানে নিজের ঘরেই সিঁধ কেটেছে। এর থেকে বড় গাদ্দার আর কেউ হয় না।’

প্রসঙ্গত, বিজেপিতে যোগ দেয়ার পর থেকে নানা বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে চলেছেন শুভেন্দু। তৃণমূলকে আবার ক্ষমতায় আনলে পশ্চিমবঙ্গ কাশ্মির হয়ে যাবে বলে সম্প্রতি মন্তব্য করে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচিত হন বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী। বিভিন্ন নির্বাচনী সভায় তিনি বলছেন, ‘মমতাকে আবার ক্ষমতায় আনলে পশ্চিমবঙ্গ বাংলাদেশ হয়ে যাবে’।

শুভেন্দু কেন বাংলাদেশবিদ্বেষী বক্তব্য দিচ্ছেন?

পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে বিজেপির ট্রাম্প কার্ড ‘অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’ ইস্যু।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নিউজএইটিনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বাংলাদেশবিদ্বেষী বক্তব্য দিয়ে একশ্রেণির ভোটারদের কাছে টানতে চান শুভেন্দু। বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা। সম্প্রতি বেহালার মুচিপাড়ায় দেওয়া বক্তব্য শুভেন্দু অধিকারী বলেছিলেন, ‘যদি তৃণমূল ফের ক্ষমতায় আসে, তাহলে পশ্চিমবঙ্গ কাশ্মির হয়ে যাবে৷’

বুধবার কাঁথিতে শুভেন্দু বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে ফের যদি তৃণমূলকে ক্ষমতায় আনেন, তাহলে পশ্চিমবঙ্গ নয়, এটা বাংলাদেশ হয়ে যাবে।’

শুভেন্দুর নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিক সমাবেশে বলেছেন, ‘কিছু গাদ্দার আমার দলে ছিল। তারা টাকা বাঁচাতে বিজেপিতে গেছে। আপদ বিদায় হয়েছে, বেঁচে গিয়েছি।’

তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, নন্দীগ্রামে জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়ার আশঙ্কায় এইসব অভিযোগ করছেন। তাতে কোনও লাভ হবে না।

নিউজ এইটিন তাদের প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করেছে, বিজেপিতে যাওয়ার পর থেকে মেরুকরণের রাজনীতিই শুভেন্দুর অন্যতম হাতিয়ার। কখনও তিনি বাংলাকে কাশ্মির হয়ে যাওয়ার কথা বলছেন, কখনও বা বাংলাদেশ।

‘বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়’- স্লোগান নিয়েও তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করেছেন তিনি।

মমতার উদ্দেশে দেয়া এক ভাষণে শুভেন্দু বলেছেন, ‘আপনাকে বাংলার ঘরের মেয়ে কেউ মনে করে না। বাংলার মেয়েরা আপনাকে আপন ভাবে না। আপনি শুধুমাত্র রোহিঙ্গাদের ফুফু আর অনুপ্রবেশকারীদের খালা।’

‘জয় বাংলা’ সহ তৃণমূলের অধিকাংশ স্লোগানই বাংলাদেশের বলে উল্লেখ করে শুভেন্দু বলেন, ‘শ্যামাপ্রসাদের ভূমিকে বাংলাদেশ হতে দেবেন না। তোলাবাজ সরকার আর নয়, আর নয় অন্যায়।’

পরাজয়ের আতংকে শুভেন্দু?

কলকাতা টোয়েন্টিফোরের প্রতিবেদনে বলা হয়, মনোনয়ন পাওয়ার আগেই শুভেন্দু অধিকারী মমতাকে নন্দীগ্রামে প্রার্থী হওয়ার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে এখন নিজেই পরাজয়ের ভয়ে শংকিত। শুভেন্দুর চ্যালেঞ্জ ছিল, তিনি অথবা যেই বিজেপির হয়ে দাঁড়াক মমতাকে অর্ধলাখ ভোটের ব্যবধানে হারানো হবে। মমতা সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে নন্দীগ্রাম থেকেই দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। যার কারণে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে নন্দীগ্রাম হয়ে উঠছে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।

কলকাতা টোয়েন্টিফোর তাদের প্রতিবেদনে জানায়, সম্প্রতি শুভেন্দু অধিকারীর বেশ কিছু মন্তব্য প্রমাণ করে দিচ্ছে তিনি যে চ্যালেঞ্জ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ঘোষণা করেছিলেন সেটা তিনি রাখতে পারবেন কি না তা নিয়ে তিনিই এখন শঙ্কিত। কেননা তা না হলে কেন শুভেন্দু অধিকারী বলছেন, ‘মাননীয়া আমার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ধ্বংস করার জন্য প্রার্থী হয়েছেন।’

শুভেন্দু অধিকারীর পিতা প্রবীণ রাজনীতিবিদ শিশির অধিকারীও একইভাবে বলছেন, ‘আমার পুত্রের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নষ্ট করার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রার্থী হয়েছেন।’

এ প্রসঙ্গে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ের কাছে প্রশ্ন করলে তিনি কলকাতা টোয়েন্টিফোরকে বলেন, ‘পরাজয় নিশ্চিত জেনে শুভেন্দু এখন এসব বলছেন। শুভেন্দু মমতাকে গালমন্দ করবেন আর মমতা তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করবেন? কেন তিনি (শুভেন্দু) তো নিজেকে নন্দীগ্রামের ভূমিপুত্র বলে দাবি করেন। মমতা নাকি বহিরাগত। তাহলে এখন এসব আবোলতাবোল বলছেন কেন?’