মহামারি করোনা পরিস্থিতিতে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখনো পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে। আর এই সুযোগে অবিতরণকৃত অন্তত ১৫ মণ নতুন বই বিক্রি করে দেয় যশোর সদর উপজেলার শাঁখারীগাতী এম এল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
নিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় শাখারীগাতী বাজারে বিক্রয়কৃত বস্তাবন্ধি নতুন বই বোঝায় দুই’টি ইজিবাইক আটকে দেয় শতধিক গ্রামবাসী। পরে সরকারী বিক্রয় নিষিদ্ধ এস বই বিক্রিতে বাঁধ সাধেন তারা।
গ্রামবাসী ও জনগনের চাপলেগে এক পর্যায়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে বই গুলো ফিরিয়ে নিয়ে স্কুলে রাখেন। এ ঘটনার সংবাদে সরেজমিনে গিয়ে সত্যতা পাওয়া যায়, স্থানীয়া জানান- মঙ্গলবার সকালে আনুমানিক ১২ থেকে ১৫ মণ নতুন (অব্যবহৃত) বিভিন্ন শ্রেনীর বই শিক্ষকরা কেজি দরে বিক্রি করে দিয়েছে গোপালপুল গ্রামের আব্দুর জলিলের ছেলে ভাংঙ্গাড়ী ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাকের কাছে।
তিনি জানান এসব বই তার কাছে বিক্রি করেছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হারুন-অর-রশিদ।তার ক্রয়কৃত সেই সব বই নিয়ে যাওয়ার পথে বিদ্যালয়ের সামনের সড়ক থেকে বই ভর্তি ২টি ইজিবাইক আটকে দেয় স্থানীয়রা।
এসময় ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক কেজি দরে বইগুলো কিনেছে বলে স্বীকার করেন। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক হারুন অর-রশিদ-বলেন, বইগুলো বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে রাখা ছিলো।
করোনায় দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বইগুলো ঈদুর, উইপোকা ও তেলাপোকায় নষ্ট করে ফেলছিলো। অনেকটা বাধ্য হয়েই স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুল মান্নানসহ সকল সদস্যদের পরামর্শে আমরা বইগুলো বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।
অবিতরণকৃত বই থাকলে তা সরকারি নিয়মনীতি মেনেই বিক্রি করার কোনো নীতিমালা আছে কিনা এ বিষয়ে আমার জানা নেই। শাঁখারীগাতী এম,এল মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুল মান্নান বলেন, বই বিক্রি প্রসঙ্গে আমাকে প্রধান শিক্ষক কিছুই জানাইনি।
আমি আজই জানতে পারলাম যে স্কুলে পড়ে থাকা অবিতরণকৃত বইগুলো বিক্রি করা হয়েছে। তবে সরকার আমাদেরকে চাহিদা অনুযায়ী বই দেয়নি। সেজন্য আমরা প্রতিবছর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পুরোনো বইগুলো সংগ্রহ করে বইয়ের ঘাটতি পুরণ করি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও পরিচালনা পরিষদের সভাপতির বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তুলে ধরে স্থানীয় অভিভাবক মো আবুল খায়ের জানান, স্কুলে প্রতিবছর পুরোনো বই জমা দিয়ে নতুন বই নেওয়ার সময় শিক্ষার্থীদেরকে পরিবহন খরচ বাবদ ৫ থেকে ১০ টাকা দিতে হয়। এ্যাসাইনমেন্টের বাহানায় প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৭০ টাকা করে তোলেন তারা।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক প্রাইভেট পড়ানোর নামে কৌশলে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে বাধ্যতামূলক ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা হাতিয়ে নেন। কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অভিভাবকদের সিদ্ধান্তের তোয়াক্কা করেন না তারা।
তবে প্রধান শিক্ষক ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি এ বিষয়গুলো মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে দাবী করেছেন। এ বিষয়ে যশোর সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এস.এম. মুনিম লিংকন জানান, কোন ভাবেই বিদ্যালয় কতৃপক্ষ বই বিক্রি করতে পারবে না।
তারা অবিতরণকৃত বইগুলো উপজেলা শিক্ষা অফিসে জমা দিতে পারবে। একটি কমিটি গঠনের মাধ্যমে উপজেলা শিক্ষা অফিসের দায়িত্বরতদের নেতৃত্বে এসব বইগুলোর বিক্রয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার রেওয়াজ আছে। ঐ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির সভাপতির ইচ্ছা খুশিমত এই অবিতরনকৃত বইগুলো বিক্রয়ের বিষয়ে অবশ্যই সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস যথাযথ আইনি পদক্ষেপ গ্রহন করবে।
উল্লেখ্য, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বা বিদ্যালয় কতৃপক্ষ বই বিক্রি বিষয়ে কোন রেজুলেশন দেখাতে পারেনি। এ ঘটনার পর থেকে এলাকাবাসীর মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ত্রুটি,বিচ্যুতি সংশোধন করে প্রতিষ্ঠানটিকে একটি আদর্শ শিক্ষাঙ্গনে পরিনত করার আশা রেখে সুষ্ঠু তদন্ত শেষে এমন নেক্কারজনক ঘটনায় বিচারের দাবী জানিয়ে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন তারা।