টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে মানব সেবায় ঐক্যবন্ধন

সংগঠন ঐক্যবন্ধনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাহমুদ হাসান সোহাগ বলেছেন, প্রতিদিন টিফিনের জন্য যে টাকা পাই, তার সবটাই খরচ হয় না। কিছু টাকা উদ্বৃত্ত থেকে যায়।

যা বিভিন্ন কারণে-অকারণে পরে তা খরচ হয়ে যায়। প্রথমে এই টাকাই মানব সেবায় কাজে লাগানোর চিন্তা আসে মাথায়। সেই থেকেই যাত্রা শুরু সংগঠনের।

সোহাগ আরো বলেন, তখন আমি দশম শ্রেণীর ছাত্র। ক্লাসের বন্ধুদের সাথে বিষয়টি শেয়ার করি। দু’একজন নাক ছিটকালেও তখনই সাড়া দিয়েছিলো অনেকে।

বিশেষ করে অনেক উৎসাহ যুগিয়েছিলো আবু হোসাইন, রনি রহমান, কামাল হোসেন, রায়হান উদ্দিনরা। তাদের উৎসাহে ১০ জন সদস্য নিয়ে শুরু হয় ঐক্য বন্ধনের যাত্রা।

শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত এ সংগঠনটি আনুষ্ঠানিকভাবে আড়াই বছর বিভিন্ন সেবা মূলক কাজ করে যাচ্ছে যশোরের চারটি উপজেলায়। এসময়ে তারা বাল্য বিবাহ, ইভটিজিং, মাদক, সুদ,

দুর্ণীতি বিরোধীসহ নানা প্রচারণা মূলক কাজে অংশ নিয়েছে। এছাড়া শিক্ষা ও ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণ, ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প, বৃক্ষরোপণ, খাদ্য সহায়তা, মাস্ক, স্যানিটাইজার বিতরণের কাজও করেছে।

আয়োজন করেছে বিভিন্ন ক্রীড়া ও কুইজ প্রতিযোগিতারও। উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র মাহমুদ হাসান সোহাগ জানান, আমাদের সদস্যরা প্রতিদিন দু’টাকা করে জমাতো। মাস শেষে সর্বনিস্ন ৩০ থেকে ১শ’ টাকা পর্যন্ত জমা দিতো তারা।

ওই টাকা জমিয়ে যশোরের মনিরামপুরে আমরা প্রথম মাদক বিরোধী সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাই। সেবার স্থানীয় এক পুলিশ কর্মকর্তার উপস্থিতিতে আমাদের সদস্যরা অপ্রাপ্ত বয়স্কদের কাছে সিগারেট বিক্রি না করার জন্য বাজারের সব দোকানীকে অনুরোধ জানিয়েছিলাম।

একই সাথে কিশোর ও তরুণদের কাছে এর ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরেছিলাম। প্রথম প্রোগ্রাম করার পর অনেকেই অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন। তাদের সহযোগিতা আর সহায়তাতে আমরা গত আড়াই বছরে শতাধিক সেবামূলক কাজে অংশ নিয়েছি। যশোর সদর, মনিরামপুর, ঝিকরগাছা ও চৌগাছার সহ¯্রাধিক মানুষকে আমরা এসব সেবার আওতায় নিয়ে আসি।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রিফাতুজ্জামান আরিফ বলেন, আমাদের লক্ষ্য মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা। কেননা, আমাদের অনেক সহপাঠী ও ইমিডিয়েট বড় ভাইদের বখে যেতে দেখেছি।

যারা মাদকসহ বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়েছিলেন। মূলত সেখান থেকেই আমরা ঘুরে দাঁড়ানোর অনুপ্রেরণা নেই। শুরুতে আমাদের সদস্যদের এ ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করি।

এবং তারা শপথ নেয়ার পরই সদস্য হিসেবে অর্ন্তভূক্ত করা হয়। বর্তমানে যশোরের চারটি উপজেলায় আমাদের ৭০ জন সক্রিয় সদস্য রয়েছেন। যারা প্রত্যোকেই টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে বিভিন্ন সেবামূলক কাজে খরচ করেন।

সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাহমুদ হাসান সোহাগ বলেন, ছোট পরিসরে অর্থ জমানো ও মানবসেবা শুধুমাত্র এটিই আমাদের কাম্য নয়। আমরা চাই দেশের প্রতিটি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা যদি টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে সোবমূলক কাজে এগিয়ে আসুক। সেটি সম্ভব হলে একজন শিক্ষার্থী একজন সত্যিকারের কর্ণধার হয়ে উঠবে। দেশ প্রেমিক হিসেবে যা আমরাও লালন করি।