ঝিনাইদহে শিল্পীর নিপুণ হাতে চলছে শেষ মুহুর্তে প্রতিমা তৈরীর কাজ

আকাশ জুড়ে সাদা মেঘের আনাগোনা শরতের ফুল শিউলি আর শরতে ফোটা কাঁশফুল। সঙ্গে সাদা মেঘের ভেলায় চড়ে ছুটে আসে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধা উৎসব শারদীয় দূর্গাপূজা। আর ক’দিন বাদেই ভেলায় চড়ে ছুটে আসছেন দেবী দুর্গা। তাইতো প্রতিমা তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করছেন ঝিনাইদহের প্রতিমাশিল্পীরা।

লকডাউন শিথিল হওয়ার কারণে এবার বেড়েছে কাজের চাপ। তাই রাত-দিন পরিশ্রম করে নিপুণ হাতে তৈরী করছেন দেবী দুর্গাকে। নির্ধারিত সময়ের আগেই প্রতিমা বুঝে দিতে কাজ করছেন তারা। শহরের পবহাটী বাবুপাড়া, চাকলাপাড়া, হামদহ, ব্যাপারীপাড়া, ষাটবাড়ীয়া, গীতাঞ্জলী সড়ক, কৃষ্ণপাড়া।

সদর উপজেলার বিষয়খালী বাজারস্থ মন্দির, খড়িখালী দাসপাড়া, মহারাজপুর, হাজরাপাড়া, পরমান্দাপুর, রামনগর, তেতুলতলাসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শিল্পীর নিপুণ হাতে চলছে প্রতিমার শেষ মুহুর্তের রং তুলির কাজ।

নিখুঁতভাবে মনের মাধুরী মিশিয়ে কারিগররা রং তুলির আচড়ে ফুটিয়ে তুলছেন দূর্গা দেবীকে। পাশাপাশি চলছে ল²ী, স্বরস্বতী, গণেশ ও কার্তিকের প্রতিমার রং এর আচড়। সনাতন ধর্ম্বাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব ঘনিয়ে আসায় ঝিনাইদহে যেন দম ফেলার ফুরসরত নেই প্রতিমা তৈরীর কারিগরদের।

তাইতো ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করতে হচ্ছে তাদের। তবুও খুশি তারা। নরেশ পাল নামের এক কারিগর বলেন, গত বছর করোনার কারণে আমাদের কাজ কম ছিল। আয়ও গত বছর কম হয়েছে। করোনার কারণে প্রতিমার কম তৈরী করেছিলাম। কিন্তু এ বছর প্রতিমা বেশী বানাচ্ছি। এতে আমরা খুশি।

পংকজ পাল নামের এক শিল্পী বলেন, আমাগের খুব ব্যস্ততা যাচ্ছে। সকাল ৬ টা থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করতি হচ্চে। তুবও ভালো কিছু টাকা তো হবিনি। নারায়ন পাল নামের এক শিল্পী বলেন, এবার আমরা তো প্রথম দিকে অনিশ্চতায় ছিলাম। কাজ কয়টা হবে তা ঠিক হয়নি।

লকডাউন খুলে দিয়ার জন্য হঠাৎ করে কাজ বেড়ে গেছে। তাই রাত-দিন বান্ধে কাজ করতি হচ্চে। কিন্তু এবার প্রতিমা তৈরীর সব মালামালের দাম প্রায় দ্বিগুন হয়ে গেছে। খরচ এবার একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে।

ঝিনাইদহ শহরের পবহাটীর বাবু পাড়ার মন্দিরের কোষাধ্যক্ষ্য পার্থ বসু জানান, গত বছর মহামারির করোনার কারনে সরকারি বিধিনিষেধ থাকায় জাকজোমক ভাবে দূর্গা উৎসব পালন করতে পারিনি।

তাই এ বছর স্বাস্থ্যবিধি মেনে দুর্গোৎসব পালনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে এবং প্রতিমা তৈরির মোট ব্যয় এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা। আরো জানান, অষ্টমী পূজার দিন পূজা মন্ডবে অঞ্জলী দিতে আসা সকল দর্শোনার্থীদের বসিয়ে প্রসাদ দেয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আরতী দত্ত জানান, এ বছর জেলার ৬ উপজেলায় ৪৩২ টি মন্ডপে অনুষ্ঠিত হবে দুর্গাপুজা। আগামী ১১ অক্টোবর ষষ্টীপুজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে দুর্গোৎসব পালনে সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা পূজারী ও মন্দির কমিটির সভাপতি-সেক্রেটারীকে বলে দিয়ে মন্ডপে যেন স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়। জীবানুনাশক স্প্রে, শতভাগ মাস্ক পরিধানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। করোনার সংক্রমন যেন যা বাড়ে যে ব্যাপারে আমরা সচেতন আছি।

এ ব্যাপারে ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার মুনতাসিরুল ইসলাম বলেন, শারদীয় দুর্গোৎসব নিবিঘœ ও উৎসব মুখর করতে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সকল প্রকার প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিটা মন্ডপে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কঠোর নজরদারিতে থাকবে।