ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে উদ্যোগ নিয়েছে তুরস্ক

ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে তুরস্ক। এরদোগানের বাসভবনের ছবি তোলায় গুপ্তচর বৃত্তির অভিযোগে আটক হয়েছিলেন ইসরাইলি দুই নাগরিক।

আলোচিত দুই নাগরিক মরদি ও নাতালিয়ে ওকনিন দম্পতিকে বেশ কয়েক দিন আটক রাখার পর ছেড়ে দেয় তুরস্ক। এ জন্য তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোগানের প্রতি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট।

এদিকে তুরস্ক কেন তাদের ছেড়ে দিল, এ পদক্ষেপের পেছনে কী কারণ থাকতে পারে এবং এরদোগান এ ঘটনা থেকে কী সুবিধা আদায় করার চেষ্টা করবেন এসব নিয়ে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছে ইসরাইলের সংবাদমাধ্যম হারেৎজ।

জনাথন লিসের লেখা ওই নিবন্ধে বলা হয়, ইসরাইলের বেন গুরিয়ান বিমানবন্দরে তুরস্ক থেকে প্রাইভেট জেট মরদি ও নাতালিয়ে ওকনিন দম্পতিকে নিয়ে আসার আগে যেসব কূটনীতিক তাদের মুক্তির বিষয়ে কাজ করেছেন, তারা জোর দিয়ে বলেছেন এ দম্পতিকে ছাড়িয়ে আনার জন্য ইসরাইলের কিছু দিতে হয়নি।

এক কূটনীতিক বলেন, রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোগানের সঙ্গে বিনিময় নিয়ে কোনো কথা হয়নি। এখন ইসরাইল দেখার জন্য অপেক্ষা করছে এরদোগান ওই দম্পতিকে ছেড়ে দেওয়ার বিনিময়ে ইহুদিবাদী দেশটির কাছে কী দাবি করেন তা।

এ দম্পতিকে ছেড়ে দেয়ার ঘটনা দেশ দুটির মধ্যে ‘জটিল’ সম্পর্কে কিছুটা পরিবর্তন আসতে পারে। এমনকি দেখা গেল, দেশ দুটির মধ্যে সম্পর্ক শক্তিশালী হচ্ছে। এ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত কূটনীতিকরা যদিও স্পষ্ট করে বলতে পারেননি কেন তুরস্ক তাদের ছেড়ে দিল।

ওই দম্পতিকে আটকের পর পরই ইসরাইল বলেছে তারা গুপ্তচর নয়। একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে যেসব তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে, তাতেও প্রমাণিত হয়নি যে ওই দম্পতি গুপ্তচর। তবে দুই ইসরাইলিকে ছেড়ে দেয়ার পেছনের কারণ হিসেবে ইহুদিবাদী দেশটির ধারণা,

ওই নির্দোষ পর্যটক দম্পতিকে আটকের ঘটনা সংবাদমাধ্যমে যেভাবে প্রকাশিত হয়েছে তা তুরস্কের পর্যটন খাতের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে, হতে পারে দেশটির আর্থিক ক্ষতিও। এদিকে বেশ কিছু দিন ধরে এরদোগান ইঙ্গিত দিয়ে আসছেন তার দেশ ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে আগ্রহী।

গত জুলাইয়ে ইসাক হারজগ ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট হওয়ায় আকস্মিকভাবে তাকে টেলিফোন করে শুভেচ্ছা জানান এরদোগান। এ সময় এরদোগান হারজগের প্রতি অনুরোধ জানান, দেশ দুটির মধ্যে জ্বালানি, পর্যটন এবং প্রযুক্তি খাতে সহযোগিতা বাড়াতে।

এ টেলিফোন আলাপের পর ইসরাইলের প্রেসিডেন্টের বাসভবন থেকে দেয়া বিবৃতিটি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও ইঙ্গিতবহ। শত মতপার্থক্য ভুলে দুই নেতা সম্পর্ক ও সংলাপ বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।

সম্ভবত এরদোগান ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী করে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোর কাছাকাছি যেতে চাইছেন। এটি আঞ্চলিক পর্যায়ে তুর্কি প্রেসিডেন্টের প্রভাব বৃদ্ধির সুযোগ হিসেবেও ব্যবহার করা হতে পারে। এ ঘটনা নিঃসন্দেহে ফিলিস্তিনিদের ওপর এরদোগানের প্রভাব আরও বাড়াবে।

ইসরাইল এরদোগানের পদক্ষেপ অত্যন্ত সন্দেহ নিয়ে পর্যবেক্ষণ করেছে। এর কারণ হলো বর্তমানে তুর্কি প্রেসিডেন্টের শাসনামলে দুই দেশের মধ্যে বাজে সম্পর্ক। দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার অন্যতম কারণ হলো ২০১০ সালে গাজায় পাঠানো তুরস্কের ত্রাণবাহী জাহাজে ইসরাইলের হামলা।

এ ছাড়া তুরস্কের রাষ্ট্রদূতকে ইসরাইলের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ড্যানি আইলনের তিরস্কারের কারণে দুই দেশের সম্পর্কে ফাটল ধরে। এদিকে তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ালে বিপদ হতে পারে ইসরাইলের। এটি নিয়ে কূটনীতিকরা ইতোমধ্যে নিজেদের শঙ্কার কথা জানিয়েছে।

কারণ এতে ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধু’ গ্রিস ও সাইপ্রাসের সঙ্গে ইসরাইলের সম্পর্কের ক্ষতি করতে পারে। একই সঙ্গে আব্রাহাম চুক্তি অনুযায়ী ইসরাইলের সক্ষমতা অর্জনে বাধা হয়ে দাঁড়াবে এ সম্পর্ক। এখন ইসরাইল বিশ্বাস করছে, ওই দম্পতির মুক্তি দেশ দুটির মধ্যে সম্পর্ক বাড়াতে পারে।

এ পদক্ষেপের জন্য ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়ার লাপিদ ও প্রেসিডেন্ট হারজগ ওই দম্পতিকে মুক্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগতভাবে এরদোগানের সম্পৃক্ততার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এ ছাড়া হারজগ ও নাফতালি বেনেট তুর্কি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফোনালাপ করেছেন।

ফোনালাপে এরদোগান ইসরাইলের সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্কের গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য দেশ দুটির মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত জরুরি।