দেশের প্রথম তৃতীয় লিঙ্গের চেয়ারম্যান হলেন নজরুল ইসলাম ঋতু

নৌকাকে পেছনে ফেলে এবার ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিপুল ভোটের ব্যাবধানে বিজয়ী হয়েছেন তৃতীয় লিঙ্গের (হিজরা সম্প্রদায়ের) নজরুল ইসলাম ঋতু।

রোববার ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ৬নং ত্রিলোচনপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তিনি চেয়ারম্যান পদে আনারস প্রতিক নিয়ে বিজয় লাভ করে চমক দেখিয়েছেন।

বিজয়ী ঋতু আনারস প্রতিকে পেয়েছেন ৯ হাজার ৫’শ ৩৮ ভোট। তার নিকটতম প্রার্থী ওই ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান নৌকা প্রতিকের নজরুল ইসলাম ছানা পেয়েছেন ৪ হাজার ৪’শ ৪ ভোট।

উল্লেখ্য, নজরুল ইসলাম ঋতু ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দেশের মধ্যে তিনিই প্রথম তৃতীয় লিঙ্গের বিজয়ী চেয়ারম্যান প্রার্থী।কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের দাদপুর গ্রামের মৃত আব্দুল কাদেরের সন্তান ঋতু জন্মের পর তৃতীয় লিঙ্গ প্রকাশ পাওয়ার পর ৫ বছর বয়সে ঢাকাতে চলে যান।

সামান্য লেখাপড়া করলেও সামাজিক নানা প্রতিবন্ধকতার করনে প্রাথমিকের গন্ডি পেরোনো হয়নি। ছোটবেলা থেকেই ঢাকার ডেমরা থানাতে তার দলের গুরুমার কাছেই বেড়ে উঠা। এখন তার বয়স ৪৩ বছর। গুরুমার পরের দ্বায়িত্বটা সে দেখভাল করেন।

ঢাকাতে থাকলেও পরিবারের টানে প্রায়ই বাড়িতে আসেন। তার কষ্টার্জিত জমানো অর্থ দিয়ে বিগত প্রায় ১৫ বছর ধরে জন্মস্থান দাদপুর গ্রামসহ ইউনিয়নবাসীর উন্নয়নে আর্থিক সহযোগীতা করতেন। এ পর্যন্ত তার এলাকায় দুই’টি মসজিদ সহ বিভিন্ন মন্দিরের উন্নয়নে দান করেছেন অর্থ।

এলাকার কেউ অসুস্থ বা কন্যাদায়গ্রস্থ হয়ে তার কাছে গিয়ে কখনো বিমুখ হতে হয়নি।নির্বাচন প্রসঙ্গে নজরুল ইসলাম ঋতু বলেন, আমার পরিবারের সবাই আওয়ামীগ করে। বাবা মারা যাওয়ার সময় বলেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান দেশের জন্য অনেক কিছু করেছেন।

যতদিন বাঁচবে তার আদর্শেই কাজ করবে। এবারে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন না পেলেও এলাকার মানুষ আমাকে ভালোবেসে ভোটে দাড় করিয়েছিল। তাদের ভালোবাসার ভোটেই আজ আমি বিজয়ী হয়েছি। তাই তাদের ঋণ আমি কোনদিনও ভুলতে পারবোনা।

ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দেশের প্রথম তৃতীয় লিঙ্গের এই প্রার্থী নজরুল ইসলাম ঋতু আরো বলেন,তার আরো তিন ভাই ও তিন বোন রয়েছে। তিন ভাই ঢাকাতে থাকে ও বোনেদের বিয়ে হয়ে গেছে।

আর দশজন স্বাভাবিক নারী পুরুষের মত না হলেও তার কোন দুঃখ নেই। আল্লাহ তাকে সুস্থ্যভাবে পৃথিবীতে বাঁচিয়ে রেখেছেন এতেই সে সন্তুষ্ট।

সে জানায়, সবথেকে বেশি কষ্ট পায় যখন শুনি আমার এলাকার কেউ অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছে না অথবা মেয়ে বিয়ে দিতে পারছে না। এখন বিজয়ী হতে পেরে এলাকার মানুষের পাশে দাড়াতে পারবে এটাই তার শান্তি।