চৌগাছায় ইউপি সদস্যের নেতৃত্বে মাছ লুট, বাওড় দখল চেষ্টার অভিযোগ

chowgacha jessore map

যশোরের চৌগাছা উপজেলার সুখপুকুরিয়া ইউপির ৮ নম্বর ওয়ার্ডের (বল্লভপুর) ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম বিশ্বাসের নেতৃত্বে বল্লভপুর বাওড়ের দখলের চেষ্টা ও মাছ লুটের অভিযোগ উঠেছে।

মঙ্গলবার বিকেল চারটায় বল্লভপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির পক্ষে কার্তিক বিশ্বাস, তারক বিশ্বাস ও সরজিৎ কুমার রায় চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

এর আগে ওই ইউপি সদস্যের নেতৃত্বে বাওড়টি দখল করা হতে পারে বলে গত ২ ডিসেম্বর চৌগাছা থানায় মৎস্য জীবি সমবায় সমিতির পক্ষে একটি সাধারণ ডায়েরী করা হয়েছিল।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, উপজেলার সুখপুকুরিয়া ইউপির ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম বিশ্বাস ও তার সহযোগী শতাধিক লোকজন মঙ্গলবার (২১ ডিসেম্বর ২০২১) দুপুর একটার দিকে অবৈধভাবে বল্লভপুর মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির সদস্যদের ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে বাওড়ের চার থেকে পাঁচ লাখ টাকার মাছ লুট করে ধরে নিয়ে গেছে।

মাছ লুটের পর বাওড়ে কয়েক ড্রাম (ব্যারেল) পানি ঢেলে গ্রামে ছড়িয়ে দেয় তাঁরা বাওড়ে মাছের পোনা অবমুক্ত করেছেন। যা সম্পূর্ণ বে- আইনী। একজন জনপ্রতিনিধির নেতৃত্বে প্রকাশ্যে হুমকি ধামকি ও বাওড়ের লুটপাটের ঘটনায় আমরা আতংকিত ও স্তম্ভিত।

তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিয়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘু পরিবার এবং সমিতির সদস্যদর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরী হয়ে পড়েছে। অভিযোগে আরও বলা হয়, যশোর জেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির ১৬ মার্চ ২০২১ তারিখের সিদ্ধান্ত মোতাবেক বাংলা ১৪২৮ থেকে ১৪৩০ সন পর্যন্ত (তিন বছর) মেয়াদে বল্লভপুর বাওড় বল্লভপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির অনুকূলে ইজারা প্রদান করা হয়।

এরপর ১৬ জুন ২০২১ তারিখে জেলা প্রশাসকের পক্ষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ও মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির পক্ষে সভাপতি কার্তিক বিশ্বাস চুক্তিনামায় স্বাক্ষর করেন।

সমিতি নতুন করে বাওড় ইজারা পাওয়ায় স্থানীয় সুখপুকুরিয়া ইউপির ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সাইফুল ইসলাম জোরপূর্বক বাওড়ের ৪৮ শতাংশ শেয়ার লিখে দেয়ার জন্য সমিতির সদস্যদের চাপ দিতে থাকেন (আগের মেয়াদে সাইফুল ইসলাম জোর পূর্বক ৪৮ শতাংশ শেয়ার লিখে নিয়েছিলেন)।

তবে সমিতির সদস্যরা শেয়ার লিখে দিতে রাজি হয়নি। লিখিত অভিযোগে আরও বলা হয়, নতুন করে শেয়ার দিতে রাজি না হওয়ায় চলতি বছরের জুন মাসে বাওড় থেকে (পুরাতন মেয়াদের ইজারার মাছ চাষ) মাছ ধরতে মৎস্যজীবি সমিতির সদস্যদের বাঁধা দেন।

তিনি সেসময় বলেন শেয়ার লিখে না দিলে পুরাতন দেনা-পাওনা নিষ্পত্তি করবেন না। তাঁর এ অনৈতিক দাবির বিষয়ে ২০২১ সালের ১৬ জুন চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর মৎস্যজীবি সদস্যরা আবেদন করি।

আবেদনের ভিত্তিতে তাঁকে (ইউপি সদস্য) হিসাব নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেন তৎকালীন ইউএনও প্রকৌশলী এনামুল হক। ইউএনওর নির্দেশে সেসময় সম্মিলিতভাবে মৎস্য আহরণ করে পুরাতন ইজারা মেয়াদের হিসাব নিষ্পত্তি হয়। সেই নিস্পত্তির পর থেকে সাইফুল মেম্বরের সাথে সমিতি ও বাওড় সংক্রান্ত কোন লেনদেন নেই।

নতুন করে তিন বছরের ইজারা প্রাপ্তির পর বল্লভপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির ব্যবস্থাপনায় আমরা বাওড়ে মাছ চাষ শুরু করেছি। মেম্বরকে বাওড়ের শেয়ার লিখে না দেয়ায় তিনি ক্ষুব্ধ হন।

সেই সাথে গত ১১ নভেম্বর ২০২১ তারিখে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সাইফুল ইসলামের পক্ষে ভোটের প্রচারণা ও তাকে ভোট না দেয়া গ্রামের সনাতন (হিন্দু) ধর্মাবলম্বীদের (অধিকাংশই সমিতির সদস্য) উপর আরও ক্ষিপ্ত হয়ে নির্বাচনের পরের দিন সমিতির কয়েকজন সদস্যকে মারপিট করাসহ হত্যার হুমকি দেয় মেম্বর ও তার লোকজন।

এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ করা হলেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বাওড়ের মৎস্য সম্পদ ও সমিতির সদস্যদের ক্ষতি করতে পারে আশংকায় গত ২ ডিসেম্বর চৌগাছা থানায় সমিতির পক্ষ থেকে একটি সাধারণ ডায়েরির আবেদন করা হয়।

এরপরও মঙ্গলবার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে সাইফুল মেম্বরের নেতৃত্বে বাওড়ে অবৈধভাবে প্রবেশ ও লুটপাট চালানো হয়েছে। এতে সমিতির সদস্যরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থের পাশাপাশি জীবনের নিরাপত্তাহীনতায়
পড়েছেন।

চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে বাওড় দখল ও মাছ লুটের অভিযোগের বিষয়ে সাইফুল মেম্বারের (০১৭২৪৭৮২২৪৬) বক্তব্য নেয়ার জন্য একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।