যান চলাচলের জন্য প্রায় পুরোপুরি প্রস্তুত পদ্মা সেতু। বলতে গেলে কাজও একেবারে শেষ পর্যায়ে। মূল সেতুর অগ্রগতি এখন ৯৯ শতাংশ। পদ্মা সেতুর উভয় প্রান্তেই ম্যুরাল তৈরির কাজ চলছে পুরোদমে। ২৫ জুন সেতু উদ্বোধন ঘিরে দুই পারে এখন নাম ফলক ও ম্যুরাল তৈরির কাজ চলছে।
সোমবার সকাল থেকে ম্যুরাল তৈরির কাজ শুরু হয় মাওয়া প্রান্তে। জাজিরার মতো প্রথম শুরু করা হয় বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল। জাজিরা প্রান্তে রবিবার থেকে ম্যুরাল স্থাপনের কাজ শুরু হয়। এদিকে সেতুতে বাতি জ্বালাতে ল্যাম্প পোস্টের বাতির কানেকশন দেয়া হচ্ছে। তবে ১লা জুন বাতির ট্রায়ার দেয়ার কথা থাকলেও প্রস্তুতির কারণে হচ্ছেনা।
তবে সেতুর বৈদ্যুতিক সকল কাজ শত ভাগ শেষে সেতুর বাতি ১৫ জুনের মধ্যে ট্রায়াল দেয়া হতে পারে বলে পদ্মা সেতুর (মূল) প্রকৌশলী দেওয়ান মো: আব্দুল কাদের জানান। পদ্মা সেতুর নাম ফলক হচ্ছে বড় আকৃতির। অনেকটা দূর থেকেই দেখা যাবে এই ফলক। “পদ্মা সেতু” নামকরণের গেজেট হওয়ার পরই মার্বেল পাথরের নাম ফলক তৈরি শুরু হয়ে গেছে। মাওয়া প্রান্তে নাম ফলকটি ২২ দশমিক ৮৮ ফুট প্রশস্ত এবং ১২ফুট উচ্চতা জাজিরা প্রান্তে একই ডিজাইনে নাম ফলক হচ্ছে-১৮ ফুট প্রশস্ত এবং সাড়ে ৮ফিট উচ্চতা।
পদ্মা সেতুর প্রকল্পের আওতায় ৪০০ কেভি বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইনের প্লাটফর্ম নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। এই প্লাটফর্মেও উপর জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সঞ্চালন হবে। সেতুর কার্পেটিংয়ের পর রোড মার্কিং চলছে এখন পুরোদমে। সেতুর রোড মার্কিং ও সাইন ওয়ার্কের অগ্রগতি ৪০ শতাংশ। নীচ তলার ম্যান্টেনেন্স রেল ওয়াকওয়ের অগ্রগতি ৯২ শতাংশ।
দু’পারে দু’টি বৈদ্যুতিক সব স্টেশন শতভাগ সম্পন্ন হয়ে গেছে। এই দু’টি সাব স্টেশন দিয়েই পদ্মা সেতুতে আলো জ্বলবে। তবে স্থায়ী ইলেকট্রিক সাব স্টেশনের অগ্রগতি ৫০ শতাংশ সেতুর লাইন ওয়াটার ড্রেনেজ পাইপ স্থাপন অগ্রগতি ৯৫ শতাংশ। মূল সেতুর রেল ওভার প্যারাপেটের(রেলিং) অগ্রগতি ১০ শতাংশ। রেলিং স্থাপনের কাজটি দ্রুত গতিতে চলছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই রেলিং স্থাপন সম্পন্ন হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা। স্ট্রিট লাইট ওয়ার্কের অগ্রগতি ৯০ শতাংশ।
প্রকল্প পরিচালক মো: শফিকুল ইসলাম জানান, পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের সাথেই পদ্মার বুকে নির্মাণ হচ্ছে জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন। পদ্মার ৪০০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইনটি চালু হলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে সরাসরি জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। এতে বিদ্যুতের চিত্রও পাল্টে যাবে। পদ্মা সেতুর আদলে জার্মান হ্যামারের স্থাপন করা ৩৬টি পাইলের উপরেই সাত প্লাটফর্ম নির্মাণ করা হয়। প্লাট ফর্মের উপরে বসছে জাতীয় বৈদ্যুতিক টাওয়ার।
প্লাটফর্ম থেকে টাওয়ার গুলোর উচ্চতা ১২৬ মিটার আর নদীর তলদেশে পাইল করা হয়েছে ১১০ মিটার গভীর পর্যন্ত। একটি থেকে আরেকটি টাওয়ারের দূরত্ব ৮৩০ মিটার। পদ্মায় এই জাতীয় গ্রিডের লাইন স্থাপন করা সম্ভব হয়েছে পদ্মা সেতুর কারণে। এতে দক্ষিণাঞ্চলের সাথে জাতীয় গ্রিড সংযুক্ত হচ্ছে। রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ও পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে এই লাইনে।
প্রকল্পটিতে কর্মরত প্রকৌশলী খন্দকার মেহেদী রায়হান বলেন, প্রকল্পটি যথা সময়ে সম্পন্ন হওয়ায় তারা খুশি। পদ্মা সেতুর কাজ ৯৯ শতাংশ দেখানো হলেও কাজ শেষ এখন শুধু খুঁটিনাটি কিছু কাজ চলছে। পদ্মা সেতুর দু’কিলোমিটার ভাটিতে হচ্ছে এই বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন। ট্রান্সমিশন লাইন টিএলের কাজও সম্পন্ন হওয়ায় দ্রুত টাওয়ারও বসে যাচ্ছে। পদ্মা সেতুর মূল প্রকল্পের আওতায় নদীতে ৭টি ৪০০ কেভির টিএল প্লাট ফর্ম তৈরির পর এর আগে ৫টি হস্তান্তর করা হয়। এখন বাকী ২টিও হস্তান্তর করার উপযোগী হওয়ায় খুশি বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্টরা।
পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক মো: শফিকুল ইসলাম আরও জানান রোড মার্কিং,ল্যাম্পপোস্ট সঞ্চালন লাইন, রেলিংয়ের বাকী অংশ এবং উভয় প্রান্তের ম্যুরালের কাজসহ শেষ পর্যায়ের সকল কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। আগামী ২৫ শে জুন স্বপ্নের পদ্মা সেতু প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের কয়েকদিন আগে ২০ জুনের মধ্যে সেতুর শতভাগ কাজ সম্পন্ন হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন ভাল টিম ওয়ার্ক থাকার কারণে পদ্মা সেতুর কাজ সুন্দর ভাবে শেষ করা সম্ভব হয়েছে বলে তিনি জানান।